ভয়াবহ দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে সি পি আর। তাই সি পি আর সম্পর্কে নিজে জানুন ও অন্যকে জানান।

দৈনন্দিন জীবনে, সাধারন চলাফেরার মধ্যে, হয়তো কাউকে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখলেন। তখন আপনি অবশ্যই ডাক্তার ডাকার চেষ্টা করবেন কিংবা অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিবেন এবং তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু এই সময় থেকে, ডাক্তারের হস্তক্ষেপ শুরুর সময়ের মধ্যে ঘটে যেতে পারে মৃত্যুর মতো চরম ঘটনাও।

অথচ ডাক্তার ডাকা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদির পাশাপাশি রোগীকে সিপিআর-এর মাধ্যমে লাইফ সাপোর্ট দিলে, তিনি ফিরে আসতে পারেন মৃত্যুর মুখ থেকে।

কোনো কারণে যখন হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়, তখন সাময়িকভাবে, কৃত্রিম উপায়ে হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যকলাপ চালু রাখাকে সিপিআর বলে।

শুধুমাত্র হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেই নয়, পানিতে ডুবে যাওয়া কিংবা ইলেক্ট্রিক শকের মতো বিভিন্ন কারণে শ্বাস বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলেও জরুরিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দেয়া হয়। এটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত।

হার্ট অ্যাটাক হলে হার্ট রেট ও রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে অচেতন হয়ে যায়। ৩০-৬০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত সিপিআর ব্যক্তির রক্ত চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে সাহায্য করে।

সবার উচিত সিপিআর সম্পর্কে ধারণা রাখা। আগে থেকে জানা থাকলে যে কেউ-ই সিপিআর প্রয়োগ করতে পারবেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে কারও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন।

কিভাবে করতে হবেঃ

১। প্রথমে এক হাতের উপর, আরেক হাত রাখুন।

২। উপরের হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে নিচের হাত এমন ভাবে ধরুন যেন অধিক জোরে চাপ দেয়া যায়।

২। হাতদুটিকে কে রোগীর বুকের উপর দুই নিপলের মাঝামাঝি রেখে, একাধারে নিচের দিকে খাড়াভাবে চাপ দিয়ে, বুকের পাঁজর ১-১.৫ ইঞ্চি নিচে নামাতে হবে যাতে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ পড়ে। মিনিটে অন্তত ৩০ বার চাপ দিতে হবে এবং অন্ততপক্ষে ২ বার কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে না পৌঁছানো পর্যন্ত বা জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত এইভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

৩। এভাবে ৩০টি চাপের পর রোগীর মুখ উপরের দিকে ঠেলে তুলুন যাতে শ্বাসনালী সরাসরি ফুসফুসের সাথে সংযোগ পায় । তারপর তার নাক টিপে, তার মুখে আপনার মুখ রেখে হাওয়া প্রবাহিত করুন এবং এভাবে ২ বার মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দিতে হবে।

এভাবে প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করতে থাকুন যতক্ষণ না কোন মেডিকেল সাহায্য আসছে।

বিস্তারিত জানতে চাইলে, ইউটিউব ভিডিও তে দেখতে পারেন।

নিজে সি পি আর দেয়ার নিয়ম শিখুন, আপনার সন্তানকেও শিখান। উন্নত বিশ্বে প্রায় প্রতিটি স্কুলের বাচ্চাদের এই সিপিআর সম্পর্কে অবহিত করা হয়ে থাকে।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment