ডায়াবেটিস রোগীরা বা যাদের ওজন বেশি তারা কিংবা সুস্থ থাকতে কোন শর্করা খাবো আর কোন শর্করা কম খাবো …

বর্তমান সময়ে শর্করা নিয়ে আমরা খুবই আতংকিত থাকি। অনেকে মনে করেন, নো কার্ব বা শর্করা বর্জন করলেই বোধহয় সুস্থ থাকা যাবে কিংবা ওজন কমানো যাবে। আসলে তা নয় এবং সেটা সম্ভবও নয়। কারণ, শকর্রাবর্জিত খাবার দিনের পর দিন খেতে থাকলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর সকল শর্করাই যে খারাপ তাও নয়। আসুন জেনে নেই কোন ধরনের শর্করা খাবো আর কন ধরনেরটা কমিয়ে দিবো।

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকা অনুযায়ী, তিন ধরনের শর্করা আমরা পেয়ে থাকি, যেমন,

১। সরল শর্করা বা সিম্পল কার্বোঃ

এই ধরনের শর্করাকে সরল শর্করা বলা হয়, কারণ এটি গ্রহণ করার পর পরিপাক বা হজম হওয়ার প্রয়োজন হয় না ।এটি সরাসরি রক্তে মিশে যায়। যা খেলে আমাদের মুখে মিষ্টি অনুভব হয় তাই সরল শর্করা।
যেমন, মিষ্টি, চকলেট, কোক, কেক, জুস ,দুধ, চিনি ,গ্লুকোজ, মিষ্টি স্বাদযুক্ত যে কোন ফল।

যেহেতু সরল শর্করার পরিপাক এর কোন প্রয়োজন হয় না এবং সরাসরি রক্তে মিশে যায়, সেহেতু যখন কোন ব্যক্তি দুর্বল অনুভব করেন, তখন এই সরল শর্করা জাতীয় (মিষ্টি ,চকলেট ,জুস, দুধ, চিনি) খেয়ে নিলে তাৎক্ষনিক দুর্বলতা কেটে যায়।

যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা সরল শর্করা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, রক্তের সুগার বেড়ে নানান বিপদ ডেকে আনতে পারেন। এছাড়া একটানা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সরল শর্করা খেলে, ওজন বৃদ্ধি, হাই প্রেসার, হার্ট, কিডনি সহ নানান রোগের জন্ম দিতে পারে।

২। জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বো বা ভালো শর্করাঃ

যেসব শর্করাজাতীয় খাবার কিছুটা বা পুরোপুরি প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে, তাদের ভালো শর্করা বা জটিল শর্করা বলে। প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে বলে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হয় না, তাই এ খাদ্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক আঁশ, ভিটামিন, খনিজ এবং অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি বিদ্যমান থাকে।

যেসব খাবারে ভালো শর্করা থাকে, সেগুলো সহজে হজম হয় না। তাই এগুলো রক্তের শর্করা রাতারাতি বাড়াতে পারে না। এগুলো চিনি এবং চর্বি শোষণকে ধীর করে দেয়, খাদ্যনালীর গতিবিধি উন্নত করে এবং আপনাকে অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। ভালো শর্করা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা হয় তবে চর্বি ভাঙে এবং মেদহীন পেশি তৈরি হয়।
জটিল কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:

ক। হোল গ্রেইন বা পূর্ণ শস্যঃ

পূর্ণ শস্য হল তুলনামূলক কম প্রক্রিয়াজাত করা শস্য। শস্যকে প্রক্রিয়াজাত করলে এর ভেতরে থাকা খনিজ, ভিটামিণের পাশাপাশি ভেতরে থাকা খাদ্যের আঁশও ভেঙে যায়।
পূর্ণ শস্যের খাবার খেলে অনেকক্ষণ পেটে থাকে এবং শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি পায়। তাই ঢেঁকি-ছাঁটা চাল, লাল চাল, ব্রাউন ব্রেড, লাল আটা, ওট মিল এগুলো খাওয়ার অভ্যাস করুন।

খ। বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর ও শিম জাতীয় খাবারঃ

এই ধরনের খাবারে খুব কম পরিমাণে চর্বি থাকে। আর পেটেও থাকে অনেকক্ষণ। তবে এই খাবারই টিনজাত বা ফ্রোজেন না খেয়ে যতটা সম্ভব তাজা খেতে হবে। টিনজাত ও ফ্রোজেন খাবারে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে।

গ। শাকসবজিঃ

এরা শর্করার খুব ভালো উৎস। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন থাকে। সবজিতে থাকে খুব কম পরিমাণে ক্যালোরি ও চর্বি। অপরদিকে আছে প্রচুর খাদ্য আঁশ। নানান রংয়ের সবজি বেছে নিলে সব ধরনের খাদ্য উপাদান পাওয়া সম্ভব।

৩। পরিশোধিত শর্করা বা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা খারাপ শর্করাঃ

পরিশোধিত শর্করা হল সেসব খাদ্য, যা প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে গেছে এবং তাদের থেকে কিছু উপকারী উপাদান যেমন ফাইবার এবং খনিজগুলি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

. সাদা রুটি, পাস্তা এবং সাদা ভাত
. প্রসেসড সিরিয়াল
. কেক, মিষ্টি এবং বেকড পণ্য
. মিষ্টি এবং উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ

মুল কথাঃ

শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীরা নয়, সুস্থ থাকতে জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বো গ্রহন করুন। যেমন, শাকসবজি, লাল চাল, লাল আটা, বিভিন্ন রকমের ডাল, বীচি ইত্যাদি ।

মিষ্টি জাতীয় সকল খাবার এবং যেকোনো প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট করা শর্করা খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিন।

যেকোনো রোগ বা সমাস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment