“ওটস খেলে ওজন কমে,” …কিন্তু আমরা বাঙালি, ওটস খেয়ে অভ্যস্ত নই, আমরা ওটসের বদলে কি খেতে পারি!!!

ওজন কমানোর কথা আসলে, আমারা নানান উপদেশ, নানান বিজ্ঞাপন, নানান এড দেখি বা শুনে থাকি। বেশ কিছু সেলিব্রেটিও জানান তাদের ওজন কমানোর গোপন রহস্য। চলুন আজ দেখে নেই, এই সব মহা মুল্যবান রহস্যের পিছনে কি রয়েছে!!

টিভি আর পত্রিকার বিজ্ঞাপনে ওটস যেন একাই রাজত্ব করে যাচ্ছে। অনেক নামি দামী সেলিব্রেটিরাও ওটস খেয়ে ওজন কমিয়েছেন বলে দাবিও করেছেন। কথাটা কিন্তু অনেকাংশেই সত্য। ধরা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট ওট। পুষ্টিবিদেরা একে দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর শস্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। জানতে চান কেন?

উত্তর হল, খাদ্য আঁশ বা ফাইবার এবং পুষ্টি।

ওটস রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ঔষধ হিসাবে উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাদ্যটিই কার্যকর। ওটমিলে থাকা উচ্চ খাদ্য আঁশ বা ফাইবারের কারণে ডায়াবেটিস থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাই বলে যে কেবল ওটসই খেতে হবে তাও নয়। আমরা বাঙ্গালিরা ওটস খেয়ে অভ্যস্ত নই। আমাদের দেশে ওটসের সমতুল্য অনেক দানাশস্য রয়েছে, যা কিনা অনেক বেশি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। তাই দামি ওটস কিনে খেলেই উদ্দেশ্যসাধন হবে না। কেউ যদি ওটস উপকারী বলে দৈনন্দিনের বাদবাকি খাবারগুলো বাদ দিয়ে শুধুই ওটস খেতে থাকেন, তাহলে তাঁরও কিন্তু সঠিক পুষ্টির অভাব হতে পারে। দৈনিক একবেলা ওটস খেতেই পারেন। কিন্তু সারাক্ষণ নয়। তা ছাড়া ওটস তো ক্যালরি–ফ্রি নয়। তাই শুধুমাত্র ওটস খেলেই রোগা হওয়া যাবে, এ ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। আমরা চাইলে ওটসের বদলে অন্য খাবার খেয়েও ওজন কমাতে পারি, যা হবে ওটসের মতোই উপকারে ভরা। চলুন জেনে নেই কি সেগুলো…।

লাল আটার রুটি, যেটা ওটসের মতোই উপকারী। গমের উপরের লাল আবরন সহ ভাঙ্গানো হলে, আটা লাল রঙের হয় বলে একে লাল আটা বলে। আর যখন রিফাইন্ড করে খোসা ফেলে দিয়ে ভাঙ্গানো হয়, তখন তা সাদা রঙের হয়। এই সাদা আটাই আমরা সাধারনত বেশি খেয়ে থাকি। গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। লাল আটায় প্রচুর অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ রয়েছে। খেতে সুস্বাদু হলেও পরিশোধিত সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেক কম। অত্যধিক পরিশোধনের ফলে দেহের জন্য উপকারী কিছু ভিটামিন ও মিনারেলস নষ্ট হয়ে যায়। সাদা আটা থেকে প্রাপ্ত শর্করা রক্তে দ্রুত শোষিত হয়, যেখানে লাল আটা থেকে প্রাপ্ত শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে। তাই লাল আটা খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, লাল আটার অদ্রবনীয় খাদ্য আঁশ রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

এই আটায় লিগনান এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামক উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী। লাল আটা ওজন কমাতেও যথেষ্ট সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে, পেট পরিষ্কার রাখে এবং পেটের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

আর যদি লাল আটার রুটির সাথে একবাটি সবজী এবং ডাল খান তাহলে তো কথাই নেই। প্রচুর ফাইবার এবং পুষ্টি যাবে শরীরে। কারন শাক সবজীর ফাইবার ও উপকারী উপাদান শরীরের ‘ফ্যাট বার্নিং’ প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। ফলে মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না। প্রতিদিন ডাল খেলে ওজন তো কমবেই, সঙ্গে ছোট-বড় সব রকমের রোগই দূরে থাকতে বাধ্য হবে। কারণ, ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন, যা আপনার ওজন কমাতে খুবই প্রয়োজনীয়। তাই বুঝতেই পারছেন, ওজন কামতে গেলে নিয়মিত এক বাটি করে সেদ্ধ সবজি ও ডাল খেতেই হবে।

ওটসের মধ্যে এমন কোন জাদুকরি উপাদান নেই, যা ম্যাজিকের মতো আপনার ওজন রাতারাতি কমিয়ে ফেলবে। ওজন কমানোর জন্য পরিমিত সুষম খাবারের পাশাপাশি, রেগুলার হাঁটা বা ব্যায়াম করা বাধ্যতামুলক। তবে কেউ যদি ওটস নিয়মিত খেয়ে থাকেন, তাহলে তো খুবই ভালো, চালিয়ে যাবেন। আর যারা ওটসে অভ্যস্ত নন, তারাও আশাহত না হয়ে, ওটসের মতোই অন্য কোন খাবার বেছে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনি যে খাবারে অভ্যস্ত তা দিয়েই সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। অভ্যাসের বিরুদ্ধে কোন কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment