……………………….
আমরা ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ হলেও, শহর অঞ্চলে অনেকে, বিশেষত শিশু-কিশোরেরা ঝুঁকছে মাংসের দিকে। তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন তেলযুক্ত মাছ খাবার পরামর্শ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, নিয়মিত তেলযুক্ত মাছ খেলে হৃদ্রোগের আশঙ্কা এক-তৃতীয়াংশ কমে আসে।
মাছের দেহ কোষ থেকে যে ফ্যাট বা তেল বের করা হয় তাকেই ফিশ অয়েল বা মাছের তেল বলে।
আমরা জানি, সম্পৃক্ত চর্বি হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই সম্পৃক্ত চর্বি খেতে মানা। কিন্তু অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবারে তুলনামুলকভাবে ক্ষতির আশংকা কম, এবং এটি রক্তের উপকারী চর্বির পরিমাণ বাড়ায়। মাছের তেলে যে চর্বি আছে, তা হলো অসম্পৃক্ত চর্বি। সাধারণভাবে বলা হয়, এটি ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। এই ওমেগা ৩ ফ্যাটের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ডিএইচএ। এটি রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, রক্ত সরবরাহ নির্বিঘ্ন করে এবং রক্তের ক্ষতিকর চর্বিকে রক্তনালিতে জমতে বাধা দেয়।
আসুন, জেনে নিই প্রাকৃতিকভাবে কোন ধরনের খাবারে ওমেগা ৩ চর্বি বেশি।
-উদ্ভিজ্জ তেলে, যেমন, তিসির তেল, ফ্ল্যাক্সসিড তেল, ক্যানোলা তেল ইত্যাদি।
-সামুদ্রিক মাছ, দেশীয় মাছের মধ্যে ইলিশ, রুপচাঁদা ইত্যাদি
-সামুদ্রিক মাছের ডিম।
-বিভিন্ন ধরনের বাদাম, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে ওয়ালনাট বা আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি বাদামে।
-কিছু বীজজাতীয় খাবার, যেমন, চিয়া বীজ, তিসির বীজ, সয়াবিন বীজ
কেন খাবো ওমেগা ৩ঃ
১. মাছ থেকে যে তেল বা চর্বি পাওয়া যায়, তাতে ক্ষতিকর চর্বি থাকে না এবং ওমেগা-৩ থাকে প্রচুর পরিমানে। অন্যদিকে মাংসে রয়েছে ক্ষতিকারক চর্বি।
২। শরীরের এবং হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভালা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় মাছের তেল। ১৫-৩০% পর্যন্ত ট্রাইগ্লিসারাইডস-এর মাত্রা কমাতে ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এই ওমেগা – ৩.
৩। রক্তনালিতে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমে প্লাক তৈরি হয়। প্লাকের কারণে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা তৈরি হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক দেখা দেওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়।।
নিয়মিত ডায়েটের মাধ্যমে মাছের তেল গ্রহণ করলে এই প্লাকের সমস্যা কম হয়। এছাড়া প্লাক তৈরি হলেও, পরিস্থিতি জটিল দিকে নেওয়া থেকে রক্ষা করে মাছের তেল। এমনকী রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহ থমকে যাওয়ার আশঙ্কাও কমায় এই মাছের তেল।
৪. গবেষকেরা বলছেন, মাছের তেলে রয়েছে প্রস্টাগ্লানডিন নামের রাসায়নিক উপাদান, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
৫. বুদ্ধির বিকাশ, স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে মাছের তেল চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ক্যানসার, দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ যেমন: বাত, আর্থ্রাইটিস রোধে সাহায্য করে, ত্বক ভালো রাখে।
৭। ওজন হ্রাস ও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায় ওমেগা-৩। ওমেগা-৩ তে পিইউএফএ নামক একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে ক্ষুধার অনুভূতি ভোঁতা করে দেয়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড লেপটিন নামক হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে আমাদের ক্ষুধা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ওমেগা-থ্রি মস্তিষ্কে ‘সেরোটনিন’ নামক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা নির্দিষ্ট কোনো খাবারের প্রতি লোভ কমায় এবং অল্প খাবার খেয়েই পেট ভরা অনুভূতি দেয়।
যারা মাছ একেবারেই খান না বা খেতে পছন্দ করেন না, তারা চাইলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ক্যাপসুল খেতে পারেন। এই ক্যাপসুল যেকোনো ফার্মেসিতেই পাওয়া যায়। তবে যদি কোন ক্রনিক অসুখ থেকে থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……… তিনা শুভ্র।
