ধরুন আপনার ওজন খুব বেশি, ভুঁড়িটাও অনেক বড়। সবাই আপনার ওজন ও ভুঁড়ি নিয়ে নানান মজা করে। আর আপনিও একেবারেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন, যেন আর কিছুই করার নেই।
কিংবা আপনি হয়তো বহু বছর ধরেই কোন ব্যায়াম বা খেলাধুলা করছেন না। কিন্তু বুঝতে পারছেন আপনার রেগুলার হাঁটা বা ব্যায়াম করা দরকার। আর এও বুঝতে পারছেন, না হাঁটলে বা ব্যায়াম না করলে সামনে ভয়াবহ সব বিপদ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
এধরনের পরিস্থিতিতে আপনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না, ঠিক কিভাবে শুরু করবেন। কারন, ওজন কমানোর কথা আসলেই, আপনাকে হাজার হাজার লোক উপদেশ দিতে শুরু করে, আর ইউটিউবে তো রয়েছে শত শত ব্যায়ামের ভিডিও। সবকিছু মিলিয়ে আপনি পরে যান এক গোলক ধাঁধায়।
এক্ষেত্রে আপনার প্রথমেই উচিত হবে, ধীরে ধীরে শরীরকে চালু করা। শরীর যদি একবার চালু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনিও হয়ে উঠবেন অনেক আত্মবিশ্বাসী। এখানে শরীর চালু করাটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার। দেখা যায়, দীর্ঘদিন হাঁটাচলা না করার কারনে, অল্প হাঁটলেই বুক ধড়পড় করে কিংবা ক্লান্ত লাগে। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আশা না ছেড়ে অল্প অল্প করে শুরু করা দরকার। দেরি হয়ে গেছে বলে বসে থাকাটা পুরাই বোকামি। মনে রাখবেন, আপনার শরীর একটি মেশিনের মতো, যেদিন থেকে এর যত্ন নেয়া শুরু করবেন, সেদিন থেকেই এটা ভালো সার্ভিস দেয়া শুরু করবে।
আর শরীর চালু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল, নিয়মিত অল্প অল্প করে হাঁটা শুরু করা। হয়তো আপনি একবারেই ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটতে পারছেন না, তাতে কি? ৫ মিনিট করে দিনে কয়েকবার হাঁটুন আর এভাবে চালিয়ে যান। তাড়াহুড়া করার কিছু নেই, আপনাকে কাজ করতে হবে আপনার শরীর বুঝে। ৮-১০ দিন পর আরও ২/৩ মিনিট বাড়িয়ে দিন এবং চালাতে থাকুন। মাস খানেক পর দেখবেন, আপনার শরীর অনেকখানি চালু হয়ে গেছে। অল্পতেই আর হাঁসফাঁস লাগছে না। আর এভাবে চালিয়ে যান, যতদিন বেঁচে থাকবেন।
শরীর চালুর পাশাপাশি, শরীরকে মজবুত করার জন্য আরো একটি কাজ করতে পারেন, তা হল উঠবস করা। উঠবস করার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ব্যায়ামের ভাষায় একে বলে স্কোয়াট। উঠবস করার নানা নিয়ম রয়েছে। তবে আপনার ক্ষেত্রে বাঁধাধরা তেমন কোন নিয়ম নেই। আপনি যেভাবে পারেন, সেভাবে করলেই হবে। আর তাও যদি না পারেন, তাহলে কোন টেবিল বা জানালার গ্রিল ধরে উঠবস করুন। প্রতিবার কমপক্ষে ১০/১৫ বার করার চেষ্টা করুন। প্রথমে ১/২ বার করে করার চেষ্টা করুন, আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকুন।
উঠবস হল একটি শক্তিবর্ধক ব্যায়াম। উঠবস ব্যায়ামে পায়ের মাসেলগুলোকে ব্যবহার করার পাশাপাশি কোমর, পেট, ব্যাক, ঘাড়, হাত ইত্যাদিরও ব্যায়াম হয়, তাই উঠবসকে বলা হয় পুরা বডির ব্যায়াম। এই ব্যায়াম অভ্যাসের ফলে ঘন ঘন পেশীতে টান, গাঁটে ব্যথা, একটু দৌড়ঝাঁপেই পেশীর ব্যথার মতো অসুবিধা দূর হয়। প্রতিদিন এই ব্যায়ামে শরীর সারা দিন সতেজ তো থাকেই, সঙ্গে শরীরের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দেহের ভারসাম্য, গতিশীলতা সব কিছুকেই স্বাভাবিক করতে সক্ষম এই ব্যায়াম।
নিয়মিত হাঁটাহাঁটিতে যে পরিমাণ ক্যালোরি বার্ন হয়, তার চেয়েও বেশি ফ্যাট ঝরাতে পারে এই ব্যায়াম। এই ব্যায়াম, পেশীর নমনীয়তা বাড়ায় আর সহজে ভারসাম্য হারাতে দেয় না। শুধু তা-ই নয়, শরীরের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ, লিপিড মেটাবলিজম, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখা ইত্যাদিও এই ব্যায়ামের মাধ্যমে সম্ভব। ক্ষতিকর ফ্যাট গলিয়ে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি ইত্যাদি থেকে শরীরকে অনেকটাই দূরে রাখার ক্ষমতা রাখে এই উঠবস ব্যায়াম।
তাই আর দেরি নয়, যারা এখনো শরীর নিয়ে পিছিয়ে আছেন, তারাও শুরু করে দিন, নিয়মিত হাঁটা ও উঠবস ব্যায়াম।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
