রক্তে হাই সুগার বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য ১০ টি মূলনীতি মেনে চলুন।

………………….

ডায়াবেটিস বা হাই সুগার মানে হল, আপনার রক্তে হাই বা বেশি সুগার। আর রক্তের এই অতিরিক্ত সুগার কমিয়ে আনাটাই হল ডায়াবেটিসের মুল চিকিৎসা। কেননা এই অতিরিক্ত বাড়তি সুগার, পুরো শরীরটাকেই নিয়ে যায় একটা ক্ষতিকর পরিনতির দিকে। শরিরের এমন কোন অংগ নেই, এই অতিরিক্ত সুগারের হাত থেকে মুক্তি পায়। তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় শরীরটা। হাই সুগারের এই অস্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত আছে এমন কয়েকটা বিপদাশঙ্কা হল, যেমন;
. অতিরিক্ত ওজন
. হাই ব্লাড প্রেসার
. হাই কোলেস্টেরল
. হৃদরোগ
. কিডনি রোগ

প্রত্যক্ষভাবে রক্তের সুগারের মাত্রা কম করার লক্ষ্যে ১০ টি মূল নীতি রয়েছে, যেমন,

১। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করাঃ

ডায়াবেটিস থাকা অবস্থায়, যেহেতু রক্তে অতিরিক্ত সুগার চলেই এসেছে, তাই প্রথমেই উচিত হবে সেই বাড়তি সুগারকে কাজে লাগিয়ে ফেলা। যাতে শরিরের কোন ক্ষতি করতে না পারে। যেকোনো শারীরিক পরিশ্রমই কেবল সেই সুগারকে কাজে লাগাতে পারে। তাই চেষ্টা করুন, প্রতি বার খাবার খাওয়ার ৩০/৪৫ মিনিট পর, ১৫/২০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করা বা যেকোনো শারীরিক পরিশ্রম করা। আপনি যদি খাবার খেয়ে বসে থাকেন, তাহলেই কেবল বাড়তি সুগার আপনার ক্ষতি করতে পারবে।
যদি প্রতি বেলা খাওয়ার পর না হাঁটতে পারেন, তাহলে প্রতিদিন অন্তত ১ বার নিয়মিত ৪৫-৬০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।

২। পরিশোধিত কার্বো বা শর্করা খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিনঃ

পরিশোধিত শর্করা হল সেসব খাদ্য, যা প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে গেছে এবং তাদের থেকে কিছু উপকারী উপাদান যেমন ফাইবার এবং খনিজগুলি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্ত শর্করা খুব দ্রুত বাড়ে। এরা খুব সহজেই আমাদের খাদ্যনালীতে হজম হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং ব্লাড সুগার রাতারাতি বাড়িয়ে দেয়।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
. সাদা রুটি, পাস্তা এবং সাদা ভাত, প্রসেসড সিরিয়াল, কেক, মিষ্টি এবং বেকড পণ্য, মিষ্টি এবং উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ।

৩। জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বো খাওয়া বাড়াতে হবেঃ

যেসব শর্করাজাতীয় খাবার কিছুটা বা পুরোপুরি প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে, তাদের ভালো শর্করা বা জটিল শর্করা বলে। প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে বলে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হয় না, তাই এ খাদ্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক আঁশ, ভিটামিন, খনিজ এবং অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি বিদ্যমান থাকে। জটিল শর্করা সহজে হজম হয় না। তাই এগুলো রক্তের সুগার রাতারাতি বাড়াতে পারে না। এগুলো চিনি এবং চর্বি শোষণকে ধীর করে দেয়, খাদ্যনালীর গতিবিধি উন্নত করে এবং আপনাকে অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। ভালো শর্করা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা হয় তবে চর্বি ভাঙে এবং মেদহীন পেশি তৈরি হয়।

জটিল কার্বোহাইড্রেটের বা ভালো শর্করার উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:
ক। হোল গ্রেইন বা পূর্ণ শস্য, যেমন, ঢেঁকি-ছাঁটা চাল, লাল চাল, ব্রাউন ব্রেড, লাল আটা, ওট মিল ইত্যাদি।
খ। বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর ও শিম জাতীয় খাবার।
গ। বিভিন্ন রকমের সবুজ ও হলুদ শাকসবজি।

৪। খাদ্যতালিকায় ফাইবার বা খাদ্য আঁশ যোগ করাঃ

সকল প্রকার শাক সবজী, ফলমূল, বিভিন্ন রকমের ডাল ও বিচি, বাদাম এগুলোতে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ পাওয়া যায়। এই খাদ্য আঁশ বা ফাইবার রক্তের সুগার রাতারাতি বাড়াতে দেয় না।

৫। স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের ব্যাবহার কমানোঃ

ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখা খুব জরুরী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিক রোগীদের হাই কোলেস্টেরল থাকে। কারন হাই কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে, সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও।
প্রাণীজ উৎস থেকে যে ফ্যাট আসে, তা কমিয়ে দিতে হবে, যেমন, লাল মাংস, কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ, চর্বিযুক্ত দুধ ইত্যাদি। এরা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
অপরদিকে, সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন, বিভিন্ন রকমের ডাল ও বিচি, বাদাম, শাক সবজী ও ফলমূল ইত্যাদি খাওয়া বাড়াতে হবে। এরা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দেয়।

৬। ট্রান্স ফ্যাট বাদ দেয়াঃ

হোটেল বা দোকানের একই তেলে, বারে বারে ভাজা যেকোনো খাবার যেমন, জিলাপি, সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, পিয়াজি, বেগুনি, আলুচপ, নানা পদের বিস্কুট, চানাচুর ও চিপসের মতো বেকারি পণ্যে, পিৎজা, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাওয়া পরিমানে কমিয়ে দিতে হবে। কারন, এই ধরনের তেল রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলকে সরাসরি বাড়িয়ে দেয়। একই সাথে বাসার রান্নায়, একই তেল বারে বারে ব্যাবহার করা যাবে না এবং উচ্চ তাপে খাবার বেশিক্ষণ তেল ভাজা যাবে না।

৭। কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার কম খাওয়াঃ

গরু/ খাশি/ ভেড়ার মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ এবং ক্রিম যুক্ত দুধ ও ক্রিম যুক্ত দুধের তৈরি খাবারের মধ্যে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অধিক হয়ে থাকে। তাই এইসব খাবার পরিমানে কম খেতে হবে।

৮। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা।

৯। পর্যাপ্ত পানি পান করা।

১০। যদি কারো কোন মানসিক সমস্যা বা ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা, যেকোনো মানসিক বা ঘুমের সমস্যায় ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব নয়।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment