………………
বর্তমান সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মোটা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এর অন্যতম একটি কারণ হল হরমোন।
সাধারণত, মেয়েদের মেয়েলী শারীরিক কার্যক্রমের জন্য দায়ী হরমোন হল ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানে বয়স ৪০ এর উপর যাবার পর, ধীরে ধীরে শরীরে এই ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে থাকে এবং শরীর মেনোপজের জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকে। ইস্ট্রোজেনের অভাবে দেহের চর্বিগুলো তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত হয়, ফলে অতিরিক্ত চর্বি পেটে, কোমড় ও উরুতে জমা হয়।
৪০ এর উপরের বয়সে, মোটা হওয়াকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। তাদের যুক্তি থাকে মধ্যবয়সে এসে টিনএজারদের মত ফিগার সচেতন হয়ে কোন লাভ নেই আবার অনেকে মোটা হওয়াটাকেই বয়সের জন্য মানানসই বলে মেনে নেন। কিন্তু সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, এ সময়ের ওজন বৃদ্ধি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। অধিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন ডেকে আনতে পারে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, কোলন বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগ।
এছাড়াও ইস্ট্রোজেনের অভাবে এসময় আপনার হাড় ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে বেড়ে যায় হাড় ও গিঁটে ব্যথা হওয়া এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকিও।
এক্ষেত্রে কিভাবে ওজন ঠিক রাখবেনঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়া, শরিরের স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যেই পরে। তাই হরমোন বাড়ানো নিয়ে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন পরে না। তবে যদি কারো সমস্যা বেশি হয় বা আর নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হয়, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতো হরমোন গ্রহন করা যেতে পারে।
তাই এক্ষেত্রে আমরা হরমোনের কথা চিন্তা না করে, বরং ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করবো। আর এক্ষেত্রে ওজন কমানোর কোন বিশেষ নিয়ম বা ফরমুলা নেই। স্বাস্থ্যকর উপায়েই ওজন কমাতে হবে, যেমন,
১। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০/৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন বা ব্যায়াম করুন। একবারে ৩০/৪৫ মিনিট না হাঁটতে পারলে ১০ মিনিট করে করে ৩/৪ বার হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। এমনভাবে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন, যাতে আপনার বেশি বেশি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হয় বা হাপিয়ে উঠেন। কারন, এতে আপনার দেহের অদরকারী ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলি বার্ন হবে। তাই চেষ্টা করুন সব সময় সক্রিয় থাকার।
২। রাতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। চেষ্টা করুন দিনে না ঘুমিয়ে, রাতের ঘুমটা পরিপূর্ণ করতে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩। মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা বা যেকোনো মানসিক সমস্যা থাকলে, অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন এ সময় মানসিক সমস্যায় ওজন বহুগুন বেড়ে যায়।
৪। প্রচুর পানি পান করুন।
৫। প্রায় প্রতিদিন পেট পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন, শরিরের আবর্জনা যত দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিবেন, ততই শরিরের জন্য মঙ্গল জনক। প্রচুর শাক সবজী, ফলমূল, ইসবগুলের ভুষি বা ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ খেতে পারেন।
৬। প্রাণীজ উৎস থেকে আসা প্রায় সকল প্রকার খাবার পরিমানে যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। যেমন, গরু/ খাশি/ ভেড়ার মাংস, মগজ, হাড়ের মজ্জা, ভুঁড়ি, মুরগীর চামড়া, ফুল ক্রিম দুধ ও ফুল ক্রিম দুধের তৈরি খাবার, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, পনির, চিংড়ি মাছ ও কাঁকড়া ইত্যাদি।
তবে চামড়া ছাড়া মুরগীর মাংস, লো ফ্যাট দুধ বা লো ফ্যাট দুধের তৈরি খাবার, কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারবেন।
৭। সকল প্রকার মাছ খেতে পারেন, কোন বাঁধা নেই, তবে চিংড়ি, কাঁকড়া কম করে খেতে হাবে।
৮। উদ্ভিদ উৎস থেকে আসা প্রায় সকল খাবার যথাসম্ভব পরিমানে বাড়িয়ে দিন। যেমন, শাক সবজী, ফলমূল, বাদাম, বীচি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর ইত্যাদি।
৯। রান্নায় তেলের ব্যবহার যতটুকু পারেন, কমিয়ে দিন।
১০। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের পরিমান আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। মিষ্টি খেতে মন চাইলে, সেক্ষেত্রে ফল খেতে পরেন।
১১। প্রতিদিনকার খাবার থেকে ভাত, রুটির পরিমান আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। সাথে রাখুন, সালাদ, লেবু, সবজী, বিভিন্ন রকমের ডাল, বীচি ইত্যাদি।
১২। প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিন জাত প্রায় সকল খাবার পরিহার করুন। যেমন, সাদা চাল, সাদা আটা, সাদা চিনি, সাদা পাউরুটি, যেকোনো ক্যানড ফুড ইত্যাদি।
……..চলবে।।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
… তিনা শুভ্র ।
