ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক নিয়ম, যা না জানলে, ভুষি খাওয়ার সুফল থেকে পুরেপুরিই বঞ্চিত হবেন…।।

………………..

ইসবগুল একধরনের ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ, যার কিছু পানিতে দ্রবীভূত হয়, কিছু হয় না। খাদ্যনালীর ভেতরে থাকাকালীন অবস্থায়, ইসবগুলের ভুষি প্রচুর পরিমাণ পানি শুঁষে নেয় এবং খাদ্যনালীর দেয়াল পিচ্ছিল করে দেয়। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে যেসব বর্জ্য পদার্থ থাকে, তা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যাও দূর করে। ইসবগুল এক ধরনের প্রিবায়োটিক, যা আমাদের খাদ্যনালীতে থাকা ভালো ব্যাক্টেরিয়াকে সাহায্য করে। এই ব্যাক্টেরিয়া আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ এবং মলকে নরম করে। মল ত্যাগের সময় অনেকের ব্যাথা হয় তাও কমিয়ে দেয় ইসবগুল।

এ ভুষি খেলে আমাদের খাদ্যনালীতে একধরনের স্তর তৈরি হয়। যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য দারুণ একটি খাবার এটি। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, যা থাকলে রক্তনালীতে ব্লকের সৃষ্টি হতে পারে। ইসবগুলের ভুষি একটি হাইপোকোলেস্টেরলেমিক ফুড, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এ ছাড়া এটি রক্তে ট্রাই-গিস্নসারাইডের পরিমাণ কমায়। ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি কমে। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ভাবে খাবারের ঠিক পরে ইসবগুল খান।

ইসবগুল খাবারের পর, পাকস্থলীর গায়ে এটি একটি আবারণ সৃষ্টি করে। ফলে এসিড থেকে শরীরে ক্ষতি কম হয়। আর পাকস্থলীর ওই আবরনের জন্য, গ্লুকোজের ভাঙন ও শোষণের গতি ধীর হয়। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে। খাবার পর নিয়মিতভাবে পানির সাথে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে পান করুন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে।

ইসবগুলের ভুষি আমাদের দেশে সব জায়গাতেই বেশ সহজলভ্য। তবে কেনার আগে কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত,

. প্যাকেটজাত ইসবগুল কিনুন।
. কখনোই খোলা ইসবগুল কেনা উচিত নয়।
. বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্বাদের, ইসবগুলের ভুষি কেনা থেকে বিরত থাকুন। সাধারন ভুষি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

কতটুকু খাবেন?

প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ করে, দিনে ২/৩ বার খাওয়া যায় এবং অবশ্যই তা পানিতে গুলিয়ে, সাথে সাথেই খেতে হবে। ভিজিয়ে রেখে, পরে খাওয়া যাবে না। কেননা এই ভুষি পেটের ভিতরে যেয়ে ফুলবে। এছাড়া ভুষি খাওয়ার পর পর পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ভুষি খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, ভুষি তার কাজ ঠিকমতো করত পারবে না, হিতে বিপরীত হবে।

তাই ভুষি অল্প পানিতে গুলিয়ে, সাথে সাথে খেয়ে, আর পানি পান করতে হবে।

কখন খাবেনঃ

ওজন কমানোর জন্যঃ

প্রতিদিন ২/৩ বার, খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে খাওয়া উচিত। এটি খেলে বেশ লম্বা সময় পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় এবং ফ্যাটি খাবার খাওয়ার ইচ্ছাকে কমায়। ভুষিতে ফাইবার উপস্থিত থাকায়, হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয়। তাই ক্ষুধা লাগে অনেক কম। তাই এটি খেলে ওজন কমানো অনেক সহজ হয়ে যায়।

হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যঃ

প্রতিদিন, ২/৩ বেলা, খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই খেতে হবে।

রিচ ফুড বা গুরুপাক খাবার খাওয়ার পরঃ

যেকোনো ভারী তৈলাক্ত খাবার, খাওয়ার সাথে সাথে, ভুষি খেয়ে নিতে পারেন। কারন, ভুষি খাদ্যনালী থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল ও চর্বি শুষে নেয় এবং পরবর্তীতে মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।
ফলে শরীরে নতুন করে ফ্যাট জমতে পারে না।

আমাদের দেশে অনেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ভুষি খেয়ে থাকেন। মনে করেন যে, এতে সকালে, মল নরম হবে। তবে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ভুষি না খাওয়াই ভালো, কেননা, ভুষি খেলে প্রচুর পানি পান করতে হয়, নয়তো ভুষি কাজ ঠিকমতো করবে না। রাতে যেহেতু আমরা ঘুমিয়ে থাকি, পানি একেবারেই খাই না, তাই উচিত হবে, ঘুমানোর আগে ভুষি না খেয়ে, জাগা থাকা অবস্থায় ভুষি খাওয়া। যাতে প্রচুর পানি পান করার সুযোগ থাকে।

ভুষি খাওয়ার ক্ষেত্রে ৩ টি অত্যন্ত অত্যন্ত জরুরী বিষয়, যা না মানলে ভুষির কোনই উপকার পাওয়া যাবে না, সেগুলো হলোঃ

১। ভিজিরে রেখে ভুষি খাওয়া যাবে না। ভুষি যেন পেটের ভিতর যেয়ে ফুলে, এজন্য অল্প পানিতে গুলিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। কারন এই ভুষি পেটে গিয়ে প্রায় ১০ গুন ফুলে যায়। আর এই ফুলে যাবার জন্যই, ভুষি খাওয়ার পর প্রচুর পানি পান করতে হবে।

২। বাজারের খোলা ভুষি কিংবা বিভিন্ন ফ্লেভার মিশানো ভুষি না কিনে, প্যাকেট করা সাধারন ভুষি খাওয়া ভালো।

৩। তবে কারো কোন বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো ভুষি খাওয়া উচিত।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment