গলা জ্বলা, বুক জ্বলা ও পেট জ্বলা নিয়ে কিছু সতর্কতা , যা না জানলেই নয়!!!!

…………………..

গলা, বুক ও পেট জ্বালা পোড়া করে নাই কখনও, এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। সাধারণত গলা, বুক ও পেট জ্বালা পোড়া করলে, আমরা নিজেরাই, ফার্মেসি থেকে এন্টাসিড, রেনিটিডিন, অমেপ্রাজল, লোসেকটিল ইত্যাদি কিনে খাই কিংবা, লবণ আদা, জিরা পানি, বেকিং সোডা ইত্যাদি খেয়ে থাকি। তাতে হয়তো সাময়িক আরামও পাই। পরবর্তীতে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার মনে করি না। গলা, বুক, পেট জ্বলাকে আমরা খুবই সাধারণ অবস্থা মনে করে থাকি। আর যখন এই গলা, বুক, পেট জ্বলা অসহনীয় পর্যায়ে যায়, তখন আমরা যাই ডাক্তারের কাছে। আর ততক্ষণে বেশ খানিকটা ক্ষতিও হয়ে যায় শরীরের।

আপনি হয়তো শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে, পৃথিবীতে ৫০% এরও বেশি লোকের গলা, বুক, পেট জ্বালা পোড়ার কারণ হল H. Pylori নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। আর এই ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের প্রধান উপায় হল, এন্টিবায়োটিক খাওয়া। কিন্তু আমরা এন্টিবায়োটিক না খেয়ে, অন্য ওষুধ খেতে থকি। এতে ব্যাকটেরিয়াগুলো তো মরেই না, বরং তারা খাদ্যনালীর দেয়ালের ক্ষতি করতে থাকে। যা পরবর্তীতে আলসার বা ঘাঁ তৈরি করে। খাদ্যনালীর আলসার প্রাণঘাতী হতে পারে। এই রোগের ফলে খাদ্যথলি বা খাদ্যনালিতে রক্তপাত হতে পারে। এই রক্ত, বমি বা মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই রোগে বাড়াবাড়ি হলে খাদ্যথলি ফুটো হয়ে যেতে পারে। এর পরে আপনি যদি কোনও চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখেন, তা হলে এই আলসার থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। অার বেশি বাড়াবাড়ি হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

তাই যখনই গলা, বুক ও পেট জ্বলবে, তখনই অবহেলা না করে ডাক্তারের কাছে যান, উনি আপনার রক্ত ও মল পরীক্ষা করে জেনে নিতে পারবেন যে আপনার H. Pylori আছে কিনা। যদি থেকে থাকে, তাহলে এন্টিবায়োটিক খেয়ে আপনার ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। আর এই এন্টিবায়োটিক গুলো অনেক পাওয়ার ফুল, তাই ডাক্তারের অধীনে থেকে গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। শুধু তাই নয়, এন্টিবায়োটিক গুলো শেষ করার কিছুদিন পর, আবারও পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয় যে, ব্যাকটেরিয়া গুলো আদৌ আছে কি নাই। আর তাই সম্পূর্ণ চিকিৎসাই করাতে হবে, একজন ডাক্তারের অধীনে।

তবে, ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও গলা, বুক ও পেট জ্বলতে পারে। খাদ্যথলিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হলে, সেখানে অ্যাসিড থেকে ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে জ্বলতে পারে গলা, বুক ও পেট। তাই নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই আলসার রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে। সেগুলি খুব সাধারণ। বুক বা পেট জ্বালা, পেটের উপরের দিকে ব্যথা বা যন্ত্রণা, খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা, মুখ দিয়ে নুন জল ওঠা, বমি বমি লাগা বা বমি হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও আরও একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে, অর্থাৎ যদি পাকস্থলীতে আলসার হয়, তা হলে খাওয়ার পরেই পেট জ্বালা করবে। এই সময়ে রোগী খেতে ভয় পাবেন, খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে। অন্য দিকে, ডিওডিনাম আলসার অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্তে আলসার হলে, পেট খালি থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ না খেলে, পেটে জ্বালা করবে। অনেক সময় রাতে অনেকক্ষণ পেট খালি থাকলে, রোগী পেটের জ্বালায় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন, কিছু খাবারের খোঁজ করেন।

আমাদের ধারনা যে, ঝাল, মশলাদার খাবার খেলেই বোধহয় আলসার হয়। এধারনা সঠিক নয়। ঝাল বা মশলাদার খাবার এই আলসারের কারণ নয়। বরং ঝাল, মশলাদার খাবার অালসার বাড়িয়ে তোলে। আপনি যদি পরিপাকতন্ত্রে আলসার রোধ করতে চান, তাহলে, আগে আপনাকে ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।

পেট খালি রাখা যাবে না। একবারে অনেকটা না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খান।

যেকোনো মানসিক চাপ বা মানসিক অশান্তিতে এই গলা, বুক, পেট জ্বলা অনেকগুণ বেড়ে যায়। তাই যেকোনো মানসিক সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আর একটা ভীষণ ভীষণ জরুরি কথা, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পেইন কিলার বা ব্যথা উপশম করার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কারন রেগুলার পেইন কিলার সেবন করলে, তা আপনার খাদ্যনালীর বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে, অার দেখা দিতে পারে গলা, বুক ও পেট জ্বলা কিংবা অালসার।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……… তিনা শুভ্র।

Leave a comment