চলুন তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলই, নিয়মিত জোরে জোরে হাঁটি, হার্ট এটাক থেকে বাঁচি.. .।।

আমরা সবাই এটা জানি যে, হার্ট আমাদের পুরা শরীরে রক্ত সাপ্লাই দেয়। আর এই রক্তের মাধ্যমে পুরা শরীর অক্সিজেন, নানান পুষ্টি পেয়ে থাকে, যার ফলে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। আমাদের শরীরে হার্টের কোন বিশ্রাম নেই, মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত হার্ট এই রক্ত পাম্প বা সাপ্লাই দিয়ে যায়।
মজার ব্যাপার হল, যে হার্ট পুরো শরীরে রক্ত পাম্প করে ছড়িয়ে দেয়, সেই হার্টেরও, তার নিজের বাঁচার জন্যও রক্তের দরকার হয়। তাই হার্টের নিজের রক্তের জন্য আলদা রক্তনালীও থাকে। কোন কারণে যদি সেই রক্তনালী ব্লক হয়ে যায় বা রক্ত চলাচলে বাঁধা পরে, তখন হার্ট ঠিকমত কাজ করতে পারে না। তার নিজস্ব পুষ্টি, অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। একপর্যায়ে, এই ব্লকের কারণে হার্টের কিছু অংশের কোষের মৃত্যু হয়, আর এটাই হার্ট এটাক।

তাই দেখা যাচ্ছে হার্ট এটাকের অন্যতম কারণ হল রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়া। আর এই ব্লকটা হয় প্রধানত কোলেস্টেরল বা চর্বির কারণে। তবে এটা ছাড়াও আরও অনেক করণেও ব্লক হতে পারে। কিভাবে এই কোলেস্টেরল হার্ট এটাক করে, চলুন দেখে নেই…।

সময়ের সাথে সাথে হার্টের রক্তনালিতে বিভিন্ন পদার্থ, কোলেস্টেরল বা চর্বির কণা জমতে থাকে, যেগুলিকে প্লাক বলা হয়। আর জমার ঘটনা শুরু হয় অনেক অনেক বছর ধরেই। এগুলি জমার কারণে রক্তনালী সরু হতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাক তখনই হয় যখন এই প্লাক ফেটে যায় এবং কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ রক্তের সাথে মিশে যায়। রক্তনালীর যে স্থানে প্লাক ফেটে যায়, ঐ স্থানে আবার নতুন করে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই রক্তের জমাট যখন, আকারে বড় হয়, তখন তা পুরোপুরিভাবে হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আর এভাবেই হার্ট এটাকের ঘটনা ঘটে থাকে।

আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে এই হার্ট এটাক কে অনেকটাই দুরে সরিয়ে রাখা সম্ভব। যেমন,

১। প্রাণীজ উৎস থেকে আসা খাবার যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। কারণ, কোলেস্টেরলের প্রাধান্য উৎসই হল গরু/খাশি/ ভেড়ার মাংস।

২। উদ্ভিজ উৎস থেকে আসা খাবার যথা সম্ভব বাড়িয়ে দিন। কারণ, এগুলোতে কোলেস্টেরল কম থাকে কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে থাকেও না।

৩। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০/৪৫ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। এতে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলো কমতে থাকবে।

৪। ধূমপান ছেড়ে দিন। কারণ, ধূমপানের কারণে, রক্তনালীর অস্বাভাবিক ও দ্রুত সংকোচন-প্রসারণের জন্যও হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৫। হাঁই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস বা অন্য কোন জটিল সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলুন। কেননা, এসব রোগীদের হার্ট এটাকের সম্ভাবনা খুবই বেশি।

৬। মানসিক অশান্তি বা মানসিক সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শও নিন। কারণ, যেকোনো মানসিক অশান্তি বা সমস্যায় হার্ট এটাক হতে পারে।

৭। রাতের ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। কারণ, রাতের ঘুমেই পুরো শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও শক্তি সঞ্চয় হয়।

৮। অতিরিক্ত ওজন থাকলে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।

যার পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস আছে, সে ভাগ্যবান। কারণ, সে জেনে ফেলেছে তারও এক সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে পারবে। আর যদি আপনার পরিবারে এরকম কোন ইতিহাস না থাকে, তাহলেও আপনার উচিত হবে, বাকি জীবনের জন্য নিজেকে সুস্থ রাখা, জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment