একজন মানুষকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দিতে ডিপ্রেশন একাই একশ। বিশ্বব্যাপী এরকম সব অসুখের তালিকার মধ্যে ডিপ্রেশনের স্থান চতুর্থ। শুধু মানসিক রোগের তালিকার মধ্যে ডিপ্রেশনের অবস্থান প্রথম।
যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের মন খারাপ করে দেয়। এটি খুবই স্বাভাবিক। একটু মন খারাপ হলেই আমরা তাকে ডিপ্রেশন নাম দিয়ে বসি। কিন্তু ডিপ্রেশন মানে কি শুধুই মন খারাপ? মন খারাপের সাথে আর কী কী বিষয় থাকলে কিংবা মন খারাপটাই ঠিক কতটুকু মাত্রায় থাকলে আমরা তাকে ডিপ্রেশন বলব? আসুন জানার চেষ্টা করি।
১. দিনের বেশিরভাগ সময় মন খারাপ থাকা এবং এই মন খারাপ ঘরে-বাইরে সব জায়গায়, সব পরিস্থিতিতেই বিদ্যমান।
২. কোনো কাজেই আগ্রহ বা আনন্দ না পাওয়া।
৩. খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া কিংবা স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজনের তারতম্য হওয়া।
৪. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা অথবা অতিরিক্ত ঘুমানো।
৫. অতিরিক্ত উত্তেজনা অথবা একেবারে ঝিম ধরে থাকা।
৬. শারীরিকভাবে দুর্বল লাগা।
৭. নিজেকে ভীষণ রকমের অযোগ্য মনে হওয়া অথবা অযাচিত অপরাধবোধে ভোগা।
৮. কাজে-কর্মে মনোযোগ দিতে না পারা অথবা সিদ্ধান্তহীনতা।
৯. জীবনকে অর্থহীন মনে হওয়া, মরে যেতে ইচ্ছা করা, অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পরিকল্পনা থাকা কিংবা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াও আত্মহত্যার ইচ্ছা অথবা ইতোমধ্যে কোনো সুইসাইড অ্যাটেম্পটের হিস্ট্রি থাকা।
যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে এবং এগুলো তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়, তবেই বুঝবো , যে সে ডিপ্রেশনের দিকে এগিয়ে গেছে।
বিষন্নতায় আক্রান্ত মানুষটি নিজ সম্বন্ধে, নিজের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং নিজের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে। নেতিবাচক ঘটনাকে অতি মাত্রায় গুরুত্ব দেয় এবং ইতিবাচক ঘটনাকে বিবেচনা করে না। সে তখন তার ভালো গুণ বা তার অর্জনকে অস্বীকার করে , ক্ষুদ্র অপ্রাপ্তিকে বড় করে দেখে। অনেক সময় তারা, তাদের কাছের মানুষের বা পরিবার পরিজনের ভালোবাসা, সদিচ্ছা এবং উদ্বেগকে অবমূল্যায়ন বা করুণা মনে করে।
ডিপ্রেশন একটি এপিসোডিক রোগ। তাই এপিসোড আকারে রোগটি বারবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। বলা হয়ে থাকে, একবার এ অসুখ হলে পরবর্তীতে অসুখ ফিরে আসার সম্ভাবনা শতকরা আশি ভাগ। তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে, বংশে এ রোগের ইতিহাস থেকে না থাকলে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন ও ডাক্তারের ফলোআপে থাকলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিষণ্ণতা কেউ নিজে থেকে ডেকে আনে না অথবা দর্বলতা বা অলসতার লক্ষণ নয়। আপনার বিষণ্ণতা থাকলে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশে মানসিক রোগীকে পাগল বলা হয় । মানুষ মনে করে, মানসিক রোগীকে জিনে ধরেছে, নয়তো পরী ধরেছে অথবা কোন খারাপ আত্মা, ভুতপ্রেত ঘাড়ে ভর করেছে । অনেকেই ডিপ্রেশনকে ভান বা ন্যাকামি ও বলে থাকেন। এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক ভাবনা চিন্তা ধারা রোগীকে করে তোলে আরো বেশি অসহায় । তাই অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
… তিনা শুভ্র ।
