স্ট্রোক, হার্ট এটাক, হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, অবেসিটি, এই ৬ সমস্যা প্রতিরোধের ১৪ টি চাবিকাঠি জেনে নিন।

……………

উপরের এই রোগ গুলো বা সমস্যাগুলো একে অপরের সাথে ভীষণভাবে জড়িত। দেখা যায়, কারো ক্ষেত্রে যদি, উপরের একটি রোগও দেখা দেয়, পরবর্তীতে বাকিগুলোও এর সাথে যুক্ত হতে থাকে। তাই উপরের রোগ বা সমস্যাগুলোর প্রতিরোধের ব্যাবস্থাও প্রায় একই।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা এই সব রোগীদের যে উপদেশগুলো দিয়ে থাকেন, সেগুলো অনেকেই ঠিক মতো মেনে চলতে পারেন না বা মেনে চলা সম্ভব হয়ে উঠে না, বা বুঝতে পারেন না কিভাবে কি করবেন। তাই এই উপদেশগুলো আজ একটু সহজ করে বলতে চাই, যেন অতি সাধারণরা বুঝে, মেনে চলতে পারেন। যেমন,

১। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০/৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন বা ব্যায়াম করুন। একবারে ৩০/৪৫ মিনিট না হাঁটতে পারলে ১০ মিনিট করে করে ৩/৪ বার হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।

২। রাতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। চেষ্টা করুন দিনে না ঘুমিয়ে, রাতের ঘুমটা পরিপূর্ণ করতে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৩। মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা বা যেকোনো মানসিক সমস্যা থাকলে, অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন মানসিক সমস্যায় এই রোগগুলি বহুগুন বেড়ে যায়।

৪। প্রচুর পানি পান করুন।

৫। প্রায় প্রতিদিন পেট পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন, শরিরের আবর্জনা যত দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিবেন, ততই শরিরের জন্য মঙ্গল জনক। প্রচুর শাক সবজী, ফলমূল, ইসবগুলের ভুষি বা ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ খেতে পারেন। মনে রাখবেন, পেট ক্লিয়ার না থাকলে, আপনি কোন কিছুতেই আরাম পাবেন না।

৬। প্রাণীজ উৎস থেকে আসা প্রায় সকল প্রকার খাবার পরিমানে যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। যেমন, গরু/ খাশি/ ভেড়ার মাংস, মগজ, হাড়ের মজ্জা, ভুঁড়ি, মুরগীর চামড়া, ফুল ক্রিম দুধ ও ফুল ক্রিম দুধের তৈরি খাবার, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, পনির, চিংড়ি মাছ ও কাঁকড়া ইত্যাদি। কারন এগুলোতে কোলেস্টেরল, জমাট বাঁধা তেল বা চর্বি বেশি থাকে। যা খুবই খারাপ শরীরের জন্য।

তবে চামড়া ছাড়া মুরগীর মাংস, লো ফ্যাট দুধ বা লো ফ্যাট দুধের তৈরি খাবার, কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারবেন।

৭। সকল প্রকার মাছ খেতে পারেন, কোন বাঁধা নেই, তবে চিংড়ি, কাঁকড়া কম করে খেতে হাবে।

৮। উদ্ভিদ উৎস থেকে আসা প্রায় সকল খাবার যথাসম্ভব পরিমানে বাড়িয়ে দিন। যেমন, শাক সবজী, ফলমূল, বাদাম, বীচি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর ইত্যাদি।

৯। রান্নায় তেলের ব্যবহার যতটুকু পারেন, কমিয়ে দিন। একবার রান্না করা তেল, পরবর্তীতে আর ব্যবহার করবেন না এবং খাবার বেশিক্ষন উচ্চ তাপে রান্না করবেন না। কারন, তেল উচ্চতাপে রান্না করলে এবং ব্যবহৃত তেল বার বার ব্যাবহার করলে তা রক্তের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে তা ক্যান্সারের কারন হতে পারে। খাবার মচমচে করতে চাইলে গ্রিল বা অভেন ব্যবহার করতে পারেন।

১০। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের পরিমান আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। মিষ্টি খেতে মন চাইলে, সেক্ষেত্রে ফল খেতে পরেন।

১১। যেহেতু আমরা বাঙালি, তাই খাবার থেকে ভাত, রুটির পরিমান আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। সাথে রাখুন, সালাদ, লেবু, সবজী, বিভিন্ন রকমের ডাল, বীচি ইত্যাদি।

১২। হোটেল বা রেস্টুরেন্টের তেলে ভাজা খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। কারন এরা রান্নায় একই তেল বারে বারে ব্যবহার করে এবং উচ্চ তাপে রান্না করে, যা শরিরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। খেতে চাইলে, নিজে বাসার খাবার বানিয়ে খান।

১৩। প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিন জাত প্রায় সকল খাবার পরিহার করুন। যেমন, সাদা চাল, সাদা আটা, সাদা চিনি, সাদা পাউরুটি, যেকোনো ক্যানড ফুড ইত্যাদি। কারন এগুলো রক্তের সুগার ও কোলেস্টেরল রাতারাতি বাড়িয়ে দেয়।

১৪। খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাচীন পদ্ধতি সবচেয়ে উত্তম। যেমন, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ঘানি ভাঙ্গা তেল, লাল চাল, লাল আটা, লাল চিনি ইত্যাদি। খাবারে যত আধুনিকতার ছাপ এসেছে, ততই তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে বিবেচিত হচ্ছে।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

… তিনা শুভ্র ।

Leave a comment