এ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের করণীয় …..

ইসলাম ধর্মে বলা হয়ে থাকে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ ভগবত গীতায়, পরিচ্ছন্নতাকে একটি অন্যতম গুন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মে ধার্মিকতার পরেই পরিচ্ছন্নতাকে ধরা হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে সব ধর্মেই বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আপনি শুনলে হয়তো অবাকই হবেন যে, হাঁপানি বা এ্যাজমা রোগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, অনেক ক্ষেত্রেই এর কষ্ট থেকে আরাম পাওয়া সম্ভব। এ্যাজমা রোগীদের বলা হয়ে থাকে, তারা যেন, বেশি ধুলোবালি তে না যান, ঘরের আসবাবপত্র ও মেঝে যেন ধুলোবালি মুক্ত রাখেন, যেকোনো স্যাঁতস্যাঁতে ও বদ্ধ জায়গায় না থাকেন, বিছানার সব কিছু অন্তত সপ্তাহে একবার অধিক তাপে বিশুদ্ধ করেন। কেননা, এ্যাজমা রোগের একটি বড় কারণই হল, মানুষের শ্বাসনালি, ধূলিবালির সংস্পর্শে সরু হয়ে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। তারমধ্যে সিগারেটকে অন্যতম ধরা হয়ে থাকে। যদিও আরও নানান কারণে এ্যাজমা হতে পারে।

এ্যাজমা বা হাঁপানি এক ধরনের শ্বাসকষ্টের রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের প্রায়ই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মুলতঃ শ্বাস ফেলবার সময়ই শ্বাসের কষ্ট বেশি দেখা দেয়।

এ্যাজমা রোগের লক্ষণ চেনার উপায়ঃ

  • শ্বাসকষ্ট, সাথে শুকনো কাশি, বিশেষ করে শ্বাস ছাড়ার সময় কষ্ট ।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো সাঁ সাঁ শব্দ ।
  • হঠাৎ দমবন্ধ ভাব অনুভব করা ।
  • ধুলোবালি বিশেষভাবে ঘরের ধুলো, ঠাণ্ডা কিংবা গরমের কারণে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ।
  • ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট ।
    যেহেতু এই রোগ পুরোপুরি সারে না, নিয়ন্ত্রনে রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চলা উচিৎ।
    যেমন,
    ১. এলার্জি কারক বস্তু এড়িয়ে চলুন । যেমনঃ ধুলো, বালি, ঘরের ঝুল, ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন । ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যাবহার করুন।

২. ঘর বাড়িকে ধুলো বালি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন । এজন্য দৈনিক অন্তত একবার ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র, ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে।

৩। খেয়াল রাখতে হবে, ঘর যেন একেবারে বদ্ধ অবস্থায় না থাকে, ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাসের ব্যাবস্থা থাকে। কারণ স্যাতস্যতে আবহাওয়াতে এ্যাজমা অনেকগুণ বেড়ে যায় ।

৪। ঘরে কার্পেট রাখবেন না । আর কার্পেট রাখলেও নিয়মিত ভ্যাকিউম করুন।

৫। বালিশ, তোষক, ম্যাট্রেসে কাভার ব্যবহার করুন।

৬। শীতকালে যথা সম্ভব গরম পানিতে গোসল করুন ।

৭। ধূমপান করবেন না ।

৮। যেসব খাবারে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা পরিহার করে চলুন ।

৯। ঠাণ্ডা খাবার, আইসক্রিম ইত্যাদি কম খাবেন।

১০। মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

১১। পেশাগত কারণে অ্যাজমা হলে চেষ্টা করতে হবে পেশা পরিবর্তন করার।

১২। পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলার কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়লে চেষ্টা করতে হবে পরিশ্রমের কাজ কম করতে ।

১৩। কুকুর, বিড়াল ঘরে না রাখা। আর কুকুর, বিড়াল ঘরে থাকলে, তাদের নিয়মিত গোসল করানো প্রয়োজন ।

১৪। এ্যালার্জিক নয় তবুও শ্বাসকষ্টের মাত্রা বাড়াতে পারে সে সকল জিনিসের সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়। যেমনঃ গুড়ো মসলার ঝাঝ, ধান, চাল, ডাল ঝাড়া বা বাছা, ঝুল ঝাড়া, ধোয়া, ধুলা, মসলার গন্ধ চুনকামে ব্যবহৃত রংয়ের গন্ধ, মশার ওষুধসহ ডিডিটি প্রভৃতি।

১৫। বাগানের বা গাছের ফুলের রেণু থেকে যথাসম্ভব দুরে থাকতে হবে। কেননা, এই রেণু এ্যাজমার প্রকট বাড়িয়ে দেয়।

দুঃসংবাদ হলেও সত্য যে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, যটা সেবন করলে এ্যাজমা রোগ সম্পূর্ণরূপে ভাল হেয় যাবে, তবে সুসংবাদ এই যে বর্তমানে বাজারে অনেক উন্নতমানের ওষুধ আছে যা চিকিৎকের নির্দেশনায় ব্যবহার করলে এ্যাজমাও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment