জয়েন্ট ব্যাথা/ বাতের ব্যাথা/ আরথ্রাইটিস/ হাত–পা ব্যাথা নিয়ে মানুষের নানান ভোগান্তি…

…………

শরীরে কোন প্রকার ব্যাথা বেশ কয়েকদিন ধরে হলেই, আমরা তাকে বাতের ব্যাথা বলি। আর শুরু করি নানান ব্যাথার বড়ি খাওয়া, মলম মাখা, বাতের চুড়ি বা ব্রেসলেইট পরা, তাবিজ, কবিরাজি নানা কিছু। এতে সাময়িক আরাম মিললেও, ব্যাথা আরও কঠিন রূপে ফিরে আসে। পরবর্তীতে দেখা দেয় নানা জটিলতা। অনেকেই আছেন, ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছেমতো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে থাকে। এর ফলে কিডনি, লিভারে নানা রকম জটিলতা, খাদ্যনালিতে ঘা হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। তাই যেকোনো রকমের ব্যথানাশক ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে হবে।

সকল জয়েন্ট ব্যাথাই কিন্তু বাত নয়। ব্যাথার ধরন ও রকম বেঁধে, এরা নানা ধরনের হতে পারে। শুধুমাত্র একজন ডাক্তারই পারেন, সেই ব্যাথার কারণ ও ধরন বের করতে এবং চিকিৎসা দিতে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে শাখাটি বাত ও ব্যথা নিয়ে কাজ করে, তাকে বলে রিউমাটোলজি। প্রায় ১২০টি বড় ধরনের রোগসহ ছয় শতাধিক রোগের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই রিউমাটোলজি বিভাগ। আর জয়েন্টের রোগ গুলো আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত। এই আর্থ্রাইটিসও আবার বিভিন্ন রকমের হয়, যার প্রতিটার চিকিৎসা সম্পূর্ন আলাদা আলাদা।

বর্তমানে মানুষের অক্ষমতার প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো বাত ও আর্থ্রাইটিস। বর্তমানে শুধু আমেরিকাতেই সাত মিলিয়নের বেশি মানুষ আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। আমাদের দেশে প্রায় পঁচিশ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বাত ও আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে।
তবে দুঃখের বিষয় এখনো অনেকে এই বিষয়ে অজ্ঞই থেকে গেছে।

বাত ও আর্থ্রাইটিস হল প্রোগ্রেসিভ রোগ, এটি চলতেই থাকে শরীরের ভেতর। তাই সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে অন্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন চিকিৎসা না করলে এই রোগ প্রাথমিকভাবে শরীরের গিরা গুলোকে আক্রমণ করবে এবং নষ্ট করে ফেলবে। এরপর প্রচণ্ড ব্যথা হবে। এর পর্যায়ে গিয়ে গিরা বাঁকা হয়ে যাবে। রোগীর স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হবে।
এটি শুধু গিঁট বা গিরার জন্যই ক্ষতিকর নয়। এটি শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকেই আক্রান্ত করে। এতে আমাদের আঙ্গুল বা জয়েন্ট গুলো কালো হয়ে যেতে পারে বা পচনও ধরতে পারে বা বিকলও হয়ে যেতে পারে, আমাদের শরীরের চামড়ায় ক্ষত তৈরি করতে পারে। তাই বাত ও আর্থ্রাইটিসকে অবহেলা করা উচিত নয়। আর ওষুধ সেবনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। বাতের ও আর্থ্রাইটিসের ব্যথার চিকিৎসা সময়মতো করা সম্ভব হলে একজন মানুষ পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা পেটে পারে।

প্রতিরোধের উপায়:

. শারীরিক চলাফেরা বাড়ানো।
. মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
. মানসিক চাপ কমানো, দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
. যে কোনো ছোটখাটো জখমের চিকিৎসা করানো। শরীরের জয়েন্টগুলো যদি ইতোমধ্যেই জখমে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে তা দ্রুত সারিয়ে তোলা।
. প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া।
. ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
. ধূমপান ও মদপান না করা। কারণ ধূমপান ও মদ হাড়ের স্বাস্থ্য ও কাঠামো দূর্বল করে দেয়।
. নিয়মিত লো ফ্যাট দুধ পান করা।
. মেনোপোজ পরবর্তী নারীদের জন্য হরমোন প্রতিস্থাপন, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
. সঠিক সাইজের ও নরম জুতা পরা।
. সকল প্রকার প্রাণীজ খাবার একেবারে কমিয়ে দেয়া এবং উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।
. ভারী জিনিসপত্র উঠানো নামানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment