মেয়েটাকে মাইক্রোতে তুলে নিতে ওদের কোনো সমস্যাই হলো না, শিকার যেন নিজে থেকেই এসে শিকারির জালে ধরা দিলো।
উত্তপ্ত দুপুর। আকাশে এক ফোটা মেঘ নেই। নগ্ন সূর্য দৃষ্টিগুলোকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে অন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। মেয়েটা রাস্তার পাশে একা দাঁড়িয়ে ছিল – ছিপছিপে গড়ন, কিন্তু বড়ো বড়ো চোখ, কালো চুল দুই পাশে বেণী করা। ষোলো-সতেরো বছরের একটা মেয়ে, একদম উপযুক্ত বয়স। কলেজের সাদা ইউনিফর্ম পরে ছিল সে, শহীদের মনে হলো সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
ড্রাইভার শহীদ ছোট-খাটো লোক, ছোট চোখ, মিলিটারি ছাট চুল – কমলা রঙের একটা চেক শার্ট পড়েছে আজ সে। গাড়িটা স্লো করে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের সিটে তাকাতেই শহীদ বুঝতে পারলো বসও মেয়েটাকে লক্ষ্য করেছে।
‘ওষুধ’ খেয়ে খেয়ে আরমান মুরাদের গাল দুটা বসে গেছে। বসের কালো কোটরাগত চোখ দুটোর ঘোলাটে দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ওর ইশারা বুঝতে শহীদের কষ্ট হলো না, মেয়েটার ঠিক সামনে নিয়ে গাড়িটাকে ব্রেক করালো সে। সাথে সাথে মুরাদ পেছনের দরজা খুলে দিলো আর পারভেজ সামনের দরজা খুলে মেয়েটার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো।
আর তখনই মেয়েটা কথা বলে উঠলো। নারকেল তেল দিয়ে চুল জবজবে করে রাখা পারভেজের দিকে তাকিয়ে বললো – ‘স্লামালেকুম আংকেল, আব্বা আপনেরে পাঠাইছে, না?’
বৈশাখ মাসের রৌদ্র মেয়েটার ফর্সা মুখটাকে সেঁকে নিয়ে তামাটে বানিয়ে ছেড়েছে, তারপরও কাছ থেকে দেখে তাকে আগের চেয়েও বেশি সুন্দর মনে হলো শহীদের কাছে। এই ট্রিপে ওর ভাগ দশ হাজারের কম হবে না – শহীদ ধারণা করলো।
মেয়েটার কথা শুনে মুরাদ আর পারভেজ দুজনই এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলো। ক্ষনিকের চোখ চাওয়া-চাওয়ির পর মুরাদই প্রথম কথা বলল – ‘হ, তোমার বাবা পাঠাইছে। তুমি আরাম কইরা পেছনে আইসা বসো।’
মেয়েটা কোনো কথা না বলে ভেতরের দিকে জানলার পাশের সিটটাতে গিয়ে বসলো। মুরাদ ওর পাশে এসে বসে দরজা টেনে দিলো, আর পারভেজ আবার সামনে এসে বসলো। রিয়ার ভিউ আয়নায় মুরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে অনুমতি পাওয়া মাত্র শহীদ গাড়ি চালানো শুরু করলো।
‘কোন দিকে যামু, বস?’ – সে জানতে চাইলো।
‘বড়ো রাস্তায়।’
আট বছর হয় মুরাদের গাড়ি চালায় শহীদ। সে খুব ভালো করেই জানে ‘বড়ো রাস্তা’ মানে কি। সে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে জেলা সড়কের দিকে যেতে শুরু করলো।
গত আট বছরে কম তো দেখেনি শহীদ। কত মেয়ে এলো গেলো। এই গাড়ির মালিক মুরাদ, ওর দলের কাজ শুধু মাল ‘ট্রান্সপোর্ট’ করা। ব্যবসা বেশ নিরাপদ। এজেন্ট কিভাবে মাল বর্ডারে নিয়ে যাবে সেটা নিয়ে ওদের মাথা ব্যথা করতে হয় না। লাভ কিছুটা কম, কিন্তু নিরাপদ ব্যবসাতে লাভ তো কম হবেই।
ব্যবসা হলো ভাগ্য, যার কপালে আছে তার হয়। শহীদের যেমন কপালে লেখা ছিল সে মুরাদের ব্যবসার ড্রাইভার হবে, তাই তার সেটা না হয়ে উপায় ছিল না।
গরম যত বাড়ছে, শহীদের ডান পাশের গালে অস্বস্তিটা ততো বাড়ছে। আজ সকালে পারভেজের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো, তখন সে যে ঘুষি মেরেছে তাতে আংটির পাথর লেগে গালটা কেটে গেছে। পারভেজের জন্য অবশ্য এইসব নতুন কিছু না, কিন্তু আজকে সকালে সে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিলো। আর শহীদ হলো সামান্য একজন ড্রাইভার, সে আর কিইবা করতে পারতো। আর ভাগ্যে যা লেখা আছে তা তো ঘটবেই।
এই ভাগ্যের ফেরেই তো আট বছর আগে হঠাৎ করে শহীদ জড়িয়ে পড়েছিলো আরমান মুরাদের গ্রূপের সাথে। এক বিকেলে ছেলেটার বুকে ব্যথা উঠলো, সে কি ভীষণ ব্যথা! শহীদের মনে হলো ছেলেটা মরেই যাবে। সে জিহাদকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিলো, জরুরি বিভাগে ভর্তি করালো। ছেলের চিকিৎসার জন্য তখন তার অনেক টাকা দরকার হলো।
ঠিক সেসময়ই পারভেজ এসে ড্রাইভারের চাকরির কথাটা বললো, আর ভালো বেতন দেখে সে রাজি হয়ে গেলো। তখন কি আর জানতো, কিসের মধ্যে জড়াতে যাচ্ছে ! সেই যে ভাগ্যের ফের, ফলে তার এখানে করার কিছুই ছিল না। এখন তার যে আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার রাস্তা নেই, সেটাও তো ভাগ্যেরই কারণে।
‘তোমার কাছে মোবাইল আছে?’ – পেছনে মুরাদ জিজ্ঞেস করলো মেয়েটাকে।
‘না আংকেল। মোবাইল থাকলে তো আগেই আব্বারে ফোন দিতাম। আপ্নে বইলা দেন আমি গাড়িতে উঠসি।’
‘হ, কইতাসি।’
গাড়ি তখন বড়ো রাস্তার মোড়ে চলে এসেছে।
এতকিছু করেও শহীদ তখন তার পাখির মতো ছোট্ট ছেলেটাকে বাঁচাতে পারে নি। পারভেজ মিয়া মুরাদের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এনে দিলো – এডভান্স বেতন। শহীদ ছেলেকে ক্লিনিকে নিলো, অপারেশনও হলো, কিন্তু তিনদিন পর জিহাদ ঠিকই মারা গেলো।
জিহাদের একটা ছবি এখনো আছে শহীদের মানিব্যাগের ভেতর। ওর আট বছর বয়সের একটা ছবি, ওর মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে তোলা – হাই স্কুলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য বনগ্রাম স্টুডিওতে গিয়ে ছবিটা নিয়েছিলো। গরম আর সময় মিলে ছবিটার রং জ্বলে গেছে, কিন্তু ও ছবিটা ফেলে দিতে পারে নি।
একবার কি হলো, ওর মানিব্যাগটা হারিয়ে গেলো। শহীদ সারাদিন ধরে জায়গায় জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরলো, কিন্তু কোথাও ওটা খুঁজে পেলো না। রাত্রে ঘরে ঢুকে যখন তার মনে হলো বুকের পাঁজরগুলো কেউ ভেঙে ভেঙে দিচ্ছে, তখনি পারভেজ ফোন করে জানালো মানিব্যাগ পাওয়া গেছে – গাড়ির সিটের ‘চিপায়’ পড়ে ছিল ওটা।
আন্তঃজেলা মহাসড়কে উঠেই শহীদ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো। পারভেজ একবার গলা খাকারি দিয়ে তারপর বলে উঠলো – ‘বস, ওর ‘বাবারে’ ফোন দেন না?’
শহীদ জানে, পারভেজ মিয়া কার কথা বলছে। সে তো ওদিকেই যাচ্ছে। আরমান মুরাদ অবশ্য তার বডিগার্ডের কথার উত্তর দিলো না। আয়নায় শহীদ দেখলো, মুরাদ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অবশ্য সেটা খেয়াল করছে না, ব্যাগ থেকে কি একটা বই বের করে একমনে পড়ে চলেছে। একবার বললো – ‘আব্বারে ফোন দেন, আংকেল।’
‘হ দিমু।’ – মুরাদ ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলো।
শহীদ জানে এই মেয়ের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু তার কি করার আছে? সে এই গাড়ি না চালালে অন্য কেউ চালাতো। ঘটনা তো একই ঘটতো। তার নিজের জীবনে যা ঘটেছে, সেটাও তার ভাগ্যে লেখা ছিল, এজন্য কেউ সেটা বদলাতে পারে নি। শহীদ বুঝে ফেলেছে, এই পৃথিবীতে যা ঘটার তা ঘটবেই, মানুষ হিসেবে তার কাজ শুধুই দেখতে থাকা আর তাকে যেটা করতে বলা হয়েছে সেটা করে যাওয়া।
জিহাদ মারা যাওয়ার পর শহীদের একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো, সে মাঝে মধ্যেই জিহাদকে স্বপ্নে দেখতে শুরু করেছিলো। সে সেই স্বপ্নগুলো রাতের পর রাত দেখে গেছে, আর ওগুলোতে জিহাদের বয়স যথারীতি বেড়ে গেছে – যেন কোনোভাবে অন্য কোথাও অন্য কোনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে ছেলেটা, শহীদ শুধু সরাসরি তাকে দেখতে পাচ্ছে না। জিহাদ যখন মারা যায় তখন তার বয়স প্রায় নয়, কিন্তু এখন স্বপ্নে সে যাকে দেখে সে জিহাদের বয়স ষোলো।
যেদিন শহীদ ছেলেকে স্বপ্নে দেখে পরের দিনটা তার খুব ভালো যায়। গত আট বছরে একবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি, শুধু আজকের দিনটা ছাড়া। গতরাতেও সে জিহাদকে স্বপ্নে দেখেছে – দেখেছে, জিহাদ বিরাট একটা প্রাডো গাড়ি চালিয়ে তাকে লেকের পাশে বড়ো একটা পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী আজকের দিনটা তার চমৎকার কাটার কথা, অথচ সকাল থেকে একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই চলেছে।
‘ড্রাইভার আংকেল, আপনের গালে কাটলো কেমনে?’ – মেয়েটার কথায় শহীদের চিন্তায় ছেদ পড়লো – ‘একটা ব্যান্ডেজ দেন, নাইলে জ্বলবো।’
নিজের অজান্তেই শহীদের মুখে এক চিলতে হাসি খেলে গেলো, বহুদিন পর। বাচ্চা একটা মেয়ে – সে ভাবলো।
ছোটবেলা একবার দেয়ালের ওপরের তারকাটা লেগে ওর পা কেটে রক্তারক্তি হয়ে গিয়েছিল। বাপ তার পায়ে রক্ত দেখে কোথায় দৌড়ে এসে ধরবে, না তাকে পেটাতে শুরু করল। মা কিন্তু ঠিকই তাকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিল যতক্ষণ না বাপের রাগ মাটিতে পড়ে। মেয়েরা আসলে মায়ের জাত, তাদের রক্তের মধ্যে মমতা – শহীদদের মতো বদমায়েশ লোকেদের জন্যও মমতা। শহীদ অবশ্য নিজেকে সে মায়ার যোগ্য মনে করতে পারলো না।
‘ওই, স্পিড বাড়া।’ – মুরাদ বললো। শহীদ আয়নায় দেখলো বস মেয়েটার হাত ধরেছে, আর মেয়েটা হাত সরিয়ে নিয়ে অবাক বিস্ময়ে মুরাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘বস, এইখানে?’ – শহীদ বলে উঠলো।
‘তোর কি? যেটা করতে কইসি ঐটা কর হারামজাদা।’ – মুরাদ খেকিয়ে উঠলো।
মুরাদ আবার ওকে ধরেছে, মেয়েটা তখন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে – ‘গাড়ি থামান। আপ্নেরা কারা?’
বোকা মেয়েটা এতক্ষনে বুঝেছে – শহীদ হতাশভাবে মাথা নাড়লো। ওর বুকের ভেতর তখন বিরাট একটা হাতুড়ি ক্রমাগত ওর হৃৎপিন্ডটাকে পিটিয়ে চলেছে।
গালের কাটাটাও আবার চুলকাতে শুরু করেছে। কিন্তু ও জানে, ওটা ধরা যাবে না – একটু নখ লাগালেই চামড়া আবার ছিলে যাবে। মেয়েটা ঠিকই বলেছে, মলম জাতীয় কিছু লাগাতে পারলে আরাম হতো।
গাড়ির পেছনে ততক্ষনে হুটোপুটি শুরু হয়ে গেছে। মুরাদ সিটের ওপর উঠে বসে মেয়েটাকে দু হাতে শক্ত করে ধরেছে। মেয়েটা চিৎকার করছে, কিন্তু শহীদ জানে এ চিৎকার কোনোভাবেই বাইরের পৃথিবীর কাছে পৌঁছাবে না।
ওর কি এখানে কিছু করার আছে? সবার ভাগ্য তো লেখা হয়ে গেছে, কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। জন্মের পঞ্চাশ বছর আগে তার রিজিক লেখা হয়ে গেছে, আর এইগুলি তো রিজিকেরই অংশ।
কোনো নোটিশ ছাড়া তার ছেলে যে মারা যাবে সেটা কি তার ভাগ্যে লেখা ছিল না! তার মা যে ইট ভাঙতে ভাঙতে হঠাৎ করে একদিন পঙ্গু হয়ে যাবে, এটাও তো তার কপালেই লেখা ছিল। এই মেয়েটা যে এক সপ্তাহের মধ্যে সীমান্তে পাচার হয়ে যাবে গরু-ছাগলের মতো, সেটাও নিশ্চয়ই এ মেয়ের ভাগ্যে লেখা আছে। এখানে সে কিই বা করতে পারে? সে ঝামেলা করলে মুরাদ আর পারভেজ তাকে ইটের ভাটায় নিয়ে ফেলে দিতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করবে না। এই অন্ধকারের জগতে অবিশ্বস্ততার শাস্তি একটাই।
কাঁটাটার শির শির ভাবটা একসময় এত তীব্র হয়ে উঠলো যে শহীদ আর সহ্য করতে পারলোনা, সে রীতিমত খামচানো শুরু করলো গালের ওই জায়গাটা। ওটা থেকে রক্ত বের হয়ে না আসা পর্যন্ত সে মনের সুখ মিটিয়ে চুলকালো।
মুরাদ এখন মেয়েটার জামা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ছেঁড়ার জন্য টানাটানি করছে। বেচারি এখন শব্দ করে কান্না শুরু করেছে। সম্ভবত সে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
শহীদের মাথায় ওই মুহূর্তে কি হয়ে গেল কে জানে, সে হঠাৎ ব্রেক কষলো। ঘটনাটা এত আকস্মিক ছিল যে মুরাদ ছিটকে মাইক্রোর ফ্লোরে গড়িয়ে পড়লো। পারভেজ নিজেকে সামলে নিয়ে অবাক হয়ে একবার শহীদের দিকে আরেকবার মুরাদের দিকে তাকাতে লাগলো। মুরাদ কোনোমতে উঠে বসে অশ্লীল একটা গালি দিলো অদৃশ্য কাউকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু শহীদের মাথায় সত্যিই কিছু একটা চেপেছিল, সে বললো – ‘বস, গাড়ির বাইরে গিয়া এগুলি করলে ভালো হয়।’
মুরাদ এমনভাবে সামনে তাকালো যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
পারভেজ চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো কেউ ওদের আশে-পাশে আছে কিনা, আর তখনই সে খেয়াল করলো মেয়েটা দরজা খোলার চেষ্টা করছে। সে সাথে সাথে ছোট কালো পিস্তলটা বের করে ওর দিকে তাক করে চিৎকার করে উঠলো – ‘খবরদার।’ তারপর সে শহীদের দিকে তাকিয়ে বললো – ‘গাড়ি চালু কর, নাইলে তোর লাইলিরে ফুটা কইরা দিমু।’
শহীদ বাধ্য ছেলের মতো আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো, কিন্তু গতি যেন বাড়তে চাচ্ছিলো না, ফার্স্ট গিয়ারে গাড়িটা ঘো ঘো শব্দে আর্তনাদ করে উঠছিলো। পারভেজ তখন পিস্তলটা নিয়ে ঠেকালো শহীদের কপাল বরাবর, গাড়ির গতিও তখন বাড়লো। পেছনে মুরাদ তখন মেয়েটার ওপর উঠে বসেছে।
শহীদ এসময় হঠাৎ হাসতে শুরু করলো। সে এসকেলেটারে পা চেপেই রেখেছিলো, আর গাড়ির গতিও হু হু করে বাড়ছিলো। পারভেজ একবার সামনে ব্রিজটার দিকে তাকিয়ে তারপর শহীদের দিকে তার বিস্ফারিত দৃষ্টি ফেরালো। ততক্ষনে সে তার পিস্তল নামিয়ে নিয়েছে।
হঠাৎ করেই শহীদ আজ বুঝতে পেরেছে – ভাগ্যের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও সে এখন যেটা করতে যাচ্ছে সেটাই আসলে ওদের এই চারজনের কপালে আজকে লেখা আছে। পারভেজের চোখে আতঙ্ক দেখে তার হাসি আরো বিস্তৃত হলো।
নাজিরকান্দি ব্রিজের রেলিং ভেঙে ত্রিশ ফুট নিচে নদীর স্রোতের মধ্যে গাড়ি নিয়ে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে শহীদের মনে হলো জিহাদটা যেন ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেলিংটাতে হেলান দিয়ে, আর তার দিকেই তাকিয়ে হাসছে। আশ্চর্য! ষোলো বছরের জিহাদকে দেখতে ঠিক সেরকম লাগছে, যেরকম কাল রাতে তাকে স্বপ্নে দেখেছিলো শহীদ।
