………………..
আমরা যখন পানি খাই তখন তা বৃক্ক বা কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বের হয়ে যায়। এই মূত্রে থাকে নানা ধরনের অদরকারী পদার্থ, যেগুলো শরীরে জমা হয়ে থাকলে আমাদের শরীর হয়ে উঠবে বিষাক্ত, রক্ত হয়ে পরবে দূষিত। আর এই মূত্র বের হয়ে যাবার যে কোনও অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়।
বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে নারীদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। কোন কোন জায়গায় টয়লেট থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেগুলো একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী।
এ কারণে পথে ঘাটে টয়লেটে যাওয়ার দরকার হলে খুবই বিপদে পড়েন অনেক নারী। এজন্য নারীদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে টয়লেট চেপে রাখা এবং পথে যাতে টয়লেট না চাপে সেজন্য, পানি পান না করার প্রবণতা দেখা যায়। তখনই দেখা দেয় ইউরিন ইনফেকশন সহ নানান জটিলতা।
ইউরিন ইনফেকশনের অনেক কারণ রয়েছে, তবে মূল কারণ হচ্ছে মূত্রপথে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—
১। মল ত্যাগের পর ঠিক মতো পরিষ্কার না করলে, পায়ুপথ থেকে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে ঢুকে যায় এবং ইনফেকশন হয়।
২। মলত্যাগের পর পেছন থেকে সামনের দিকে টিস্যু ব্যবহার করলে, পায়ু পথের জীবাণুগুলো মূত্রনালিতে ঢুঁকে পড়ে এবং ইনফেকশন হয়। তাই টিস্যুর ব্যবহার করতে হবে সামনে থেকে পিছনে।
৩। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে না চললে, শারীরিক মেলামেশার সময়, মুত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে ইনফেকশন করতে পারে। বিশেষ করে, শারীরিক মেলামেশার আগে ও পরে প্রস্রাব আটকে না রাখা উচিত।
৪। মাসিকের সময়, সঠিকভাবে পরিষ্কার স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে, খুব সহজেই ইনফেকশন হতে পারে।
৫। যারা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন, তাদের ব্যাকটেরিয়া ওভার গ্রোথ হয়ে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে, ব্যাকটেরিয়া মুত্রথলিতে অনেকক্ষণ জমে থাকে বা ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
৬। যারা পানি কম পান করেন, তাদের ইনফেকশন বেশি হয়। পানি কম পান করলে প্রস্রাবও কম হয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে পুরাপুরি বের হতে পারে না এবং ইনফেকশন দেখা দেয়।
৭। একই অন্তর্বাস দীর্ঘসময় এবং বারবার ব্যবহার করলে কিংবা বেশি আঁটসাঁট কাপড়, পেন্ট ব্যবহার করলে, জমে থাকা ঘাম থেকেও ইনফেকশন হতে পারে।
৮। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
৯। যারা হাই কমোড ব্যবহার করেন, কমোডে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া যেকোনো উপায়ে মূত্রনালিতে এসে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। তাই ব্যাবহারের পূর্বে প্রতিবার তা পরিষ্কার করে নেয়া উচিত।
১০। পুকুর বা অপরিষ্কার পানিতে গোসল করলে ইনফেকশন হতে পারে।
১১। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বা যাদের ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার বা জটিল রোগ রয়েছে, অথবা যারা ক্যানসারের ওষুধ নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও এ ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি।
এই রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত। বিলম্বে চিকিৎসা নিলে বা একান্তই চিকিৎসা না নিলে, ইনফেকশন জটিলতা ধারণ করতে পারে এমনকি কিডনি বিকলও হয়ে যেতে পারে।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
………….
…তিনা শুভ্র ।
