রোযায় কি খাবো আর কি খাবো না …
………………..
রোযায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ, তার স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কিভাবে রোজা করবেন বা রোজার সময় কোন ধরনের খাবার খাবেন, সেটা যদি আগে থেকেই জানা থাকে, তাহলে রোযার এক মাস সুস্থ ভাবে কাটানো সম্ভব। চলুন এ ব্যাপারে জেনে নেই…।
সেহরিতে কি খেলে ভালো হয়:
১। রোজার জন্য আলাদা ডায়েটের প্রয়োজন নেই। একজন মানুষ স্বাভাবিক যে খাবারেই অভ্যস্ত এবং যা তার সামর্থ্যে কুলায়, সেটাই খাবেন। যেমন, ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, ভর্তা , ভাজি, দুধ, কলা, দই ইত্যাদি।
তবে সেহরিতে কেউ ডায়েট করবেন না, খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনাকে পুরাটা দিন না খেয়ে থাকতে হবে। শরীর যেন তার দরকারি উপাদান পায় সেদিকে খেয়াল রেখে খাবার খেতে হবে।
২। আমরা অনেকেই সেহরিতে পেট টাপুর টুপুর করে ভরে খাই, যেন সারাদিন কম খিধা লাগে। যা একেবারেই করা উচিত নয়। সাধারণ একটা দিনে আপনি ঠিক যেভাবে খাবার খান, সেহরীতেও সেভাবেই খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীর অনেকটা আরাম পাবে।
৩। যেহেতু আমরা বাঙ্গালি, সেহরির খাবারের জন্য ভাত সবচেয়ে আদর্শ। তবে কেউ চাইলে আটার রুটিও খেতে পারেন।
৪। সেহরি খাওয়ার সাথে সাথে না ঘুমিয়ে ১০/১৫ মিনিট এদিক ওদিক চলাফেরা করুন। এতে আপনার বাড়তি ঢেঁকুর বা গ্যাস বের হয়ে যাবে, খাবার হজম স্বাভাবিক হবে।
৫। সেহরির পর অনেকের চা/কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। খুব খেতে ইচ্ছা হলে হালকা লিকারে চা/ কফি খেতে পারেন, তবে না খেলেই ভালো।
৬। সেহরিতে বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় কোনো ভারি খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ইফতারে কি খাওয়া ভালো:
১। পানি, ফল, চিড়া, রুটি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম, হালকা খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে।
২। খেতে পারেন বাসায় বানানো হালিম, যেটা বেশ স্বাস্থ্যকর।
৩। মাঝে মধ্যে ইফতারির পর, হালকা কম তেলযুক্ত তেহারি খাওয়া যেতে পারে, সাথে বোরহানি থাকলে খুবই ভালো হয়।
৪। কম তেল মশলায়, বাসায় রান্না করা ছোলা ভুনা পরিমাণ মতো খেতে পারেন। মনে রাখবেন যে ছোলা খুব ভালো প্রোটিনের উৎস এবং স্বাস্থ্যকর। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত তেল মশলা বা বাইরের কেনা খাবার না হয়।
৫। খুব খেতে ইচ্ছা হলে, মাঝে মাঝে, বাসায় বানানো, অল্প তেলে, অল্প পরিমাণে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলু চপ খাওয়া যাবে। তবে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছুই বয়ে আনবে
না।
৬। সারাদিন রোজা পালনের পর একবারে অনেক খাবার খেলে সেটি ক্ষতিকর হতে পারে। একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৭। ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। বেশী তেলে ভাজা বাজারের ইফতার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৮। পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে তবে এর মধ্য বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রসই বেশি কাজে লাগে। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত।
৯। ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। সাথে রাখুন ফল, সবজী কিংবা সালাদ।
১০। ইফতারে ভাজা পোড়া খাবার খাওয়া কমাতে, খাবারের মেনু বদলাতে পারেন। এতে ভাজা পোড়া খাবার কম খাওয়া হবে। যেমন, কখনও ইফতারে শুধু রুটি, ভাত, খিচুরি, পাস্তা বা নুডুলস, চিড়া, চাইনিজ সবজী ইত্যাদি দিয়ে খুব সহজেই ভাজা পোড়া খাবারের বিকল্প করে ইফতার করতে পারেন।
শুধু খাবারই নয়, বরং এর পাশাপাশি রোযা রাখা অবস্থায়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। আর কঠিন শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর বা সেহেরীর পর ধূমপান থেকেও বিরত থাকা উচিত।
……… চলবে ।।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
