ডায়াবেটিক রোগীদের যা জানা থাকা জরুরি…
…………………
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই অবশ্যই, রোযা শুরু হবার ১ মাস আগে থেকেই ডাক্তারে পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তাদের রোজা পালন করা উচিত হবে কিনা বা কিভাবে রোযা করতে পারবেন, তা নিয়ে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন।
শুধুমাত্র চিকিৎসকই ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তন বা সমন্বয় করে দিতে পারেন। সেটা অনুসরণ করে রোগীরা সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পরামর্শ গুলো হলঃ
১। একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি সুস্থভাবে সব কটি রোজা রাখতে চান, তবে অবশ্যই নিয়মিত গ্লুকোজ (সুগার/চিনি) পরীক্ষার দিকে গুরুত্ব দেবেন। ডায়াবেটিস রোগী সহজেই বাসায় গ্লুকোমিটার দিয়ে এ পরীক্ষা করতে পারেন।
সাধারণত সেহরির সময়, সকালে, মধ্যাহ্নের পর, ইফতারের আগে, ইফতারের দুই ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা গুলো করা জরুরি। এছাড়া যেকোনো সময় কমা বা বাড়ার লক্ষণ অনুভব করলে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
২। রোজা রেখে কখনই আগের মাত্রার ওষুধ বা ইনসুলিন নেবেন না। নিজে নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে জটিল পরিণতি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের সাহায্য নিন।
৩। সেহরির নির্ধারিত সময়ের শেষভাগে ও মাগরিবের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার গ্রহণ করুন।
৪। রমজান মাসে দৈনিক ক্যালরির মাত্রা ঠিক রেখে শুধু খাদ্য উপাদান ও সময় পরিবর্তিত হবে। এব্যাপারে আপনার ডাক্তার আপনাকে দেখে বলে দিবেন, কিভাবে কি খাবেন, কখন খাবেন আর কতটুকু খাবেন।
৫। ইফতারে অতিভোজন বা সেহরিতে স্বল্পভোজন থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস রোগীরা ইফতারের খাবারকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করতে পারেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৬। সেহরিতে কোনো অবস্থাতেই না খেয়ে বা সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখবেন না।
৭। রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্ত হাঁটা বা যেকোনো ভারী কায়িক পরিশ্রম না করাই ভালো। ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও সময় নিয়ে তারাবীহ নামাজ আদায় করা রমজানে শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
আর যেসকল ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন, রোজার রাখার সময় তাদের নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু অন্যান্য সময় ব্যায়ামের পরে তারা খাবার বা পানি খেয়ে থাকেন, কিন্তু রোজার সময় সেটি সম্ভব হয় না, ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সন্ধ্যার ইফতারের দুই ঘণ্টা পর অথবা সেহরির আগে হাটাহাটি বা ব্যায়াম করতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের বিকাল বেলায় রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। তাই বিকালে হাঁটা বিপদজনক হতে পারে। আর হাঁটাহাঁটির ব্যাপারেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
রোজা পালনে ঝুঁকিপূর্ণ কারাঃ
১। অতি বৃদ্ধ বা ভগ্ন স্বাস্থ্যের রোগী।
২। গত তিন মাসের মধ্যে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা অধিক বেড়ে গিয়ে কিটো অ্যাসিডোসিস বা হাইপার অসমোলার স্টেট হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
৩। ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে।
৪। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলেও টের পান না যারা।
৫। দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে।
৬। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে।
৭। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা বা ডায়ালাইসিসের রোগী হলে।
৮। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের রোগী হলে।
৯। দিনে একাধিকবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন যারা।
১০। মারাত্মক সংক্রমণ, জটিল রোগ, যক্ষ্মা, ক্যানসার ইত্যাদি থাকলে।
ডায়াবেটিক রোগীদের রোযা রাখা অবস্থার সবচেয়ে বিপদজনক আশঙ্কা হল, রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া। এতে রোগীর শরীরে এক বিশেষ ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ক্ষুধার অনুভূতি, বুক ধড়ফড়ানি, মাথাব্যথা, মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটা, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি উপসর্গের পাশাপাশি খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে এবং রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। দীর্ঘ সময় চিনির মাত্রা কমে গিয়ে স্থায়ী স্নায়ুবৈকল্য হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোযায় ডায়াবেটিক রোগীদের একমাত্র এবং বাধ্যতামূলক পরামর্শ হল, ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
……চলবে ।।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।।

ভালো লেখা। আরও লিখুন। ধন্যবাদ
LikeLike