…………………
রোযায় ওজন কেন বাড়ে?
১। রোযায় সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে কাজ কর্ম তেমন হয় না বা করতে ইচ্ছা করে না। তাই দিনের বেলা শরীরের তেমন কোনো ক্যালরি খরচ হয় না। এর ফলে মেদ জমতে পারে বা ওজন বাড়তে পারে। রোযায় আমাদের মেটাবলিসম বা হজমের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় বা কমে যায়। আর মেটাবলিসম বা হজমের প্রক্রিয়া কমে গেলে ওজন খুব সহজেই বেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে চলাফেরা বা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়ামই পারে হজমের প্রক্রিয়াকে বাড়াতে।
২। সারা দিন না খেয়ে আছি, তাই ইফতার-সেহরিতে অতিরিক্ত খেয়ে সেটা পুষিয়ে নিতে হবে, এমন ধারণা থেকেই ওজন বাড়ে। সারাদিন রোজা রেখে, প্রতিদিন ভাজা পোড়া ও গুরুপাক খাবার খাবার ফলেও অনেকের ওজন বেড়ে যায়। রোযায় ভাজা পোড়া ও গুরুপাক খাবার ফলে এবং কাজ কর্ম কম করার ফলে সবচাইতে তাড়াতাড়ি বারতে থাকে পেটের মেদ।
৩। রোজা এলেই ইফতার পার্টি, সেহেরি নাইটে দলবল নিয়ে একসঙ্গে খাওয়ার উৎসব বসে। এই দাওয়াত আর পার্টি রক্ষা করতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া কোন ফাঁকে যে বেশি হয়ে যায়, তা টেরও পাওয়া যায় না। তাই সেই ফাঁকে ওজনটাও বেড়ে যায়।
৪। ওজন বাড়ার পিছনে ঘুমেরও একটা অবদান রয়েছে। কারণ এই মাসটাতে আমাদের ঘুমে বেশ হেরফের হয়। হিসাব করলে দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে হয় কম বা বেশি ঘুম হয়ে যাচ্ছে। সেহেরিতে উঠতে হবে বিধায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হয়। আবার সারাদিন বিশ্রামের পরিমাণটাও বাড়ে ক্লান্তির জন্য। এতে করে শরীর আরাম পায় ঠিকই কিন্তু ঘুম বেশি হয় বলে ওজনও বারতে থাকে। আবার কম ঘুমালেও শরীর কখনো কখনো মুটিয়ে যায় অনেকের।
রোজায় কীভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেনঃ
১। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ইফতারে দুই গ্লাস পানি পান করুন। প্রথমটা ইফতার খোলার সময় তারপর মাগরিব নামাজের পর। ফলের জুস, লাচ্ছি ইত্যাদি খান ইফতারের পর। রোজার সময়ে শরীরকে আর্দ্র রাখবে, আপনার পেট, পুরো শরীর ভালো রাখবে সেই সাথে ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
২। ইফতার করার পর, চেষ্টা করুন প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস করে পানি পান করতে।
৩। সেহরি খাওয়ার আগে খালিপেটে ১ বা ২ গ্লাস পানি পান করুন।
৪। সেহরি ও ইফতারে খুব বেশি ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। সাথে প্রচুর সবজি ও ফল খান। পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, ইত্যাদি খান।
৫। ইফতার ও সেহরিতে চেষ্টা করুন মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে। এতে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬। কখনোই অতিরিক্ত খাবেন না। এটি রোযায় ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। যা-ই খান, পরিমিত খেতে হবে। ইফতারে একবারে বেশি না খেয়ে, অল্প অল্প করে খান।
৭। রোজা রেখে শুয়ে-বসে থাকবেন না। সারাদিন কর্মক্ষম থাকার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন চেষ্টা করুন, ঘরের সব কাজ নিজে নিজে করতে, এতে রোযা অবস্থায়ও অনেকটা উচ্ছল ও প্রাণবন্ত লাগবে।
৮। রোজা রাখার পাশাপাশি রেগুলার হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন। রোযায় ইফতারের পর, রেগুলার হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করার ফলে শরীরে ফ্যাট জমতে পারে না আর অতিরিক্ত ফ্যাটও বার্ন হতে থাকে। আর হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম ছেড়ে দিলে বা না করলে ওজন বেড়ে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, মাংসপেশির শক্তি কমে যাবে, পেশীর আকার ও আকৃতি নষ্ট হতে থাকবে, ফলে আপনাকে মোটা বা ফোলা ফোলা দেখাবে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যে, রেগুলার হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করার ফলে শারীরিক শক্তি বহুগুণে বাড়ে তাই রোজা রাখতেও কষ্ট হয় না।
তাই ইফতার খাবার দের/দুই ঘন্টা পরে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন। যতটুকু পারতেন, যাই পারেন, ততোটুকুই হাঁটুন। তবে শরীর যদি বেশি দুর্বল লাগে বা হাঁটতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন, তাহলে হাঁটা বা ব্যায়াম পুরোপুরি বাদ দিবেন।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।।
