…………
আমাদের মধ্যে অনেককেই দেখা যায় যে, সারাদিন বেশ ভাল থাকেন, কিন্তু রাতে শুতে যাওয়ার ঠিক আগেই নাক বন্ধ হয়ে যায়। কিংবা শুয়ে পোড়ার পর এপাশ ওপাশ করতে থাকেন নাক বন্ধ হয়ে যাবার জন্য। বন্ধ নাকের কারণে কিছুতেই ঘুম আসে না। আর তখন বাধ্য হয়েই নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করেন। এভাবেই হয়তো কাটছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। প্রতিদিনই ভাবেন, এই অভ্যাস ছাড়তে হবে। কিন্তু কোনও দিনই হয়ে ওঠে না।
তবে এই অভ্যাস ছাড়া সম্ভব। তার জন্য মেনে চলতে হবে কয়েকটি নিয়ম। আজ এই নিয়মগুলো নিয়েই কিছু কথা বলবো।
নানা কারণে আমাদের নাক বন্ধের মতো অবস্থা হতে পারে। আবহাওয়া বদলের সময় যেমন সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ে, তেমনই সারা বছরই এসি কিংবা রুম হিটারে থাকার কারণেও ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে যায় অনেকেরই। ধুলাবালি, ধোঁয়া, বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া মিলিয়ে প্রায় সারা বছরই অনেকের মধ্যেই ঠান্ডার ধাত রয়ে যায়। আবার নাক বন্ধ হওয়ার মধ্যে পলিপও আরেকটি অন্যতম কারণ। পলিপ থাকলে শোওয়ার সময়ে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাই নাক বন্ধের সমস্যা দেখা দিলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কিভাবে এই ড্রপ বা স্প্রের আসক্তি কমাবেন বা ছাড়াবেনঃ
. এই ড্রপ বা স্প্রে-র আসক্তি ছাড়াতে প্রথম পদক্ষেপ হল, নিয়মিত শরীরচর্চা করা। তাতে শরীরে রক্ত শঞ্চালনের পরিমাণ বাড়ে। বন্ধ নাকের সমস্যা কিছুটা কমে থাকবে।
. ধুলো বালি থেকে দূরে থাকুন। বাসায় ধুলা-ময়লা জমতে দেওয়া চলবে না। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
. গরম তরল খাবার খেতে পারেন। এতে নাসারন্ধ্রে জমে থাকা মিউকাস অনেক তরল হয়ে যায়। এতে কপালে চাপ ধরে থাকা ভাব অনেকটা কমে যাবে।
চাইলে গরম পানিতে আদা ফুটিয়ে, তাতে লেবুর রস ও মধু দিয়ে পান করতে পারেন। এতে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
. সারাদিন প্রচুর পানি ও তরল খাবার খান।
. ভাপ বা ভেপার নিতে পারেন। ভাপ নিতে হলে, একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে নিতে হবে। তার কিছুটা উপরে মুখ রেখে, মাথা ও পাত্র একটি মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একটি নাক থেকে শ্বাস নিয়ে অপরটি দিয়ে ছাড়তে হবে। এমন ২-৩ মিনিট ধরে করলেই উপকার পাবেন।
. নাক দিয়ে লবণ পানি টানার থেকে চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। তবে এটা একদিনে অভ্যাস করা মুশকিল। সামান্য উষ্ণ গরম পানি হাতে নিয়ে, তাতে কয়েকদানা লবণ দিয়ে, এক নাক দিয়ে টেনে, অন্য নাক দিয়ে বার করে দিতে হয়। এই পদ্ধতিতে শ্বাসনালী পুরো পরিষ্কার হয়ে যায়, খুব তাড়াতাড়ি রোগী আরাম পান।
প্রতি রাতে শোওয়ার আগে লবণ পানি নাকে টানুন, চাইলে এই লবণ পানি ড্রপারে নিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
. পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রচুর ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। যেমন শাক সবজী ও ফলমূল।
. সরাসরি ফ্যানের নিচে বা এসি বরাবর থাকবেন না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় সতর্ক থাকুন।
. ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
. ঠান্ডা খাওয়া যাবে না।
. অ্যারোসোল, মশার কয়েলের ধোঁয়া, এয়ারফ্রেশনারসহ যেকোনো ধরনের ধোঁয়া ও স্প্রে থেকে দূরে থাকুন।
নাকের ড্রপ একটানা প্রতিদিন ব্যাবহার করলে, এক সময় তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে, তখন এই ড্রপ ছাড়া কিছুতেই ঘুম আসবে না। তাই এইসব ড্রপ নিজ থেকে ব্যবহার করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিন, নয়তো রোজই এ সব নিতে নিতে এক সময় ঘুমের ওষুধের মতো তা বদভ্যাসে পরিণত হবে।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।।
