………….
ডিম খাওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। ডিম খাওয়া নিয়ে মানুষের মনে অনেক আতংক। হাই প্রেশার, হার্ট, ডায়াবেটিস, কিডনি, ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীরা ডিম খাওয়ার কথা শুনেই আঁতকে উঠেন। তাদের মতে- ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ডিমে বেশি কোলেস্টেরল আছে, ডিম খেলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাবে, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ইত্যাদি বেড়ে যাবে।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, মহান সৃষ্টিকর্তার, মানুষের জন্য অপূর্ব দান হচ্ছে ডিম। উচ্চ মানসম্মত প্রোটিন, অতি সস্তায়, কম দামে পাওয়া যায়, এই ডিমে।
ডিমে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং শরীরের ভাল কোলেস্টেরল বাড়ায়।
ডিমের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় যে সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইডস, তা কমাতে কাজ করে।
ডিমের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ব্লাড প্রেশারও কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ডিমকে একটি উচ্চ মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। ডিমে যে চর্বি থাকে তার তিন-চতুর্থাংশ হচ্ছে হার্ট এবং রক্তনালির জন্য উপকারী।
আবার অনেকেই মনে করেন, ডিমের সাদা অংশ, পুরো ডিমের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। কিন্তু ডিমের কুসুমটাও যে শরীরের পক্ষে কতটা উপকারী, তা অনেকেই জানেন না।
ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন ছাড়া তেমন কোনো পুষ্টি নেই, কিন্তু ডিমের কুসুমে ভিটামিন, খনিজ, কলাইন ইত্যাদি ভরপুর। আপনি যদি কুসুমসহ ডিম খান, তাহলে আপনি শুধু ফ্যাট ও পুষ্টিই পাবেন না, আপনার ডায়েটে প্রোটিনের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে। তাই পুষ্টির কথা বিবেচনা করলে কুসুম বাদে ডিম খেয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।
তবে প্রতিদিন ইচ্ছামতো ডিম খাওয়াটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অতিরিক্ত কোনো কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়। সেটা যত অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হোক না কেন। আমাদের দেহের চাহিদা ও উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক খাবার গ্রহণের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা বা পরিমাণ রয়েছে। আপনার যদি হাই কোলেস্টরল থাকে, তাহলে কুসুমসহ ডিম খেতে পারেন সপ্তাহে ২-৩ বার কিংবা কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারেন প্রতিদিন। কিন্তু আপনার যদি কোলেস্টেরল ঠিক থাকে, তাহলে আপনি প্রতিদিন কুসুমসহ একটি ডিম খেতে পারেন।
ডিম অনেক উপায়েই রান্না করা যায়, কিন্তু সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হলো, ডিম সেদ্ধ করে খাওয়া। কারণ ভাজা বা পোচ করা ডিমে বেশি ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। সেদ্ধ ডিমের সাথে স্টিম করা সবজি, শাক বা সালাদ, স্যামন বা টুনা মাছ মিশিয়েও খেতে পারেন।
ডিম অবশ্যই একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাদ্য, যার মধ্যে খাদ্যের সব উপাদানই বিদ্যমান। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর।
মহিলাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডিম অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধেও ডিম উপকারী।
শুধুই ডিমকে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী করলে হবে না, বরং আমরা দৈনিক অনেক খাবার খাই, যা কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। যেমন, গরু/ খাশি/ ভেড়ার মাংস, মুরগির চামড়া, চিংড়ি মাছ, দোকানের তেলে ভাঁজা খাবার ইত্যাদি খাবার খাওয়া কমিয়ে, নিয়মিত এক ঘণ্টা করে জোরে জোরে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। ভয় পেয়ে ডিমকে খাদ্য তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দেয়া বা ডিমের কুসুম বাদ দেয়া ঠিক নয়।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
