হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগীরা কি ধরনের ফ্যাট বা তেল খাবেন আর কি ধরনের ফ্যাট বা তেল বাদ দিবেন…

………………….

যাদের হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের রোগ রয়েছে, তাদের মনে নানান প্রশ্ন থাকে যে, কোন ফ্যাট বা তেল খাবেন বা কোনগুলি বাদ দিবেন। এসব রোগীদের, সব ডাক্তাররাই ভালো ফ্যাট খেতে এবং খারাপ ফ্যাট বাদ দিতে পরামর্শ দেন। তখন রোগীরা পুরাপুরি কনফিউজড হয়ে যান যে, ফ্যাট তো সবসময়ই খারাপ, তার আবার ভালো/ খারাপ কি?

আজ আমরা ভালো ও খারাপ ফ্যাট নিয়ে কথা বলবো…

ফ্যাট সাধারণত ৩ ধরনের হয়ে থাকে,

১) স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা মোটামুটি খারাপ ফ্যাট।

২) আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ভালো ফ্যাট।

৩) ট্রান্স ফ্যাট বা পুরাপুরি খারাপ ফ্যাট।
………………………………..

১) স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা মোটামুটি খারাপ ফ্যাটঃ

এই ফ্যাট রুম টেম্পারেচারে শক্ত হয়ে যায়। এই ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো প্রানিজ খাদ্য। যেমন, চিংড়ি মাছ, গরু/ খাসি/ ভেড়ার মাংস, ডিম (কুসুম), দুধের সর এইসব। এক কথায়, প্রানী থেকে যে ফ্যাট আসে সেটাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট।

এই ফ্যাট আমাদের রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যে কারনে হার্টের নানান রোগ, ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যাদের এই সমস্যাগুলো আছে, তাদের এই জাতীয় ফ্যাট কম খেতে হবে। আর এজন্যই একে মোটামুটি খারাপ ফ্যাট বলা হয়ে থাকে।

২) আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ভাল ফ্যাটঃ

ভালো ফ্যাট সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। ভালো ফ্যাট পাওয়া যাবে, সামুদ্রিক মাছ, বীজ, বিচি, বাদাম এবং সবজি থেকে।

বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমান হয়েছে যে, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমায়। এজন্য এটা ভালো ফ্যাট নামে পরিচিত।

কোথায় থাকেঃ

• বাদাম (চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি)
• ভেজিটেবেল তেল (বাদাম তেল, অলিভ তেল, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল, সান ফ্লাওয়ার তেল)
• পিনাট বাটার
• বীচি – (সূর্যমুখীর বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি ইত্যাদি)

৩) ট্রান্স ফ্যাট বা পুরাপুরি খারাপ ফ্যাটঃ

খারাপ ফ্যাট এর মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটকে সবচেয়ে খারাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। খারাপ বলার পেছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস। ট্রান্স ফ্যাট এর উৎপত্তি বিংশ শতাব্দির দিকে, যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” এর মাধ্যমে কঠিন পদার্থ তৈরি করে পচন রোধ করা যায়। স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” করলে উৎপন্ন দ্রব্যের পচন রোধ হয় কিন্তু তার সঙ্গে কিছু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটেরও উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার ব্যবসায়িদের জন্য বেশ লাভ জনক হয়ে উঠল। কেননা, তেল এর পচন রোধ হচ্ছে, বেশি দিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে তথা আর্থিক দিক দিয়ে সকলে লাভবান হচ্ছে । কমার্শিয়াল ক্ষেত্রে তাই ট্রান্স ফ্যাট বেশি ব্যবহার করা হয়, ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট এর প্রতিটি খাবার তাই আজ আমাদের কাছে এত লোভনীয়!

ট্রান্স ফ্যাটের কিছু উদাহরণঃ

. বেকড খাবার – কেক, ডোনাট, মাফিন, পাই ইত্যাদি।
. ডুবো তেলে, অনেকক্ষণ ধরে ভাজা খাবার।
. একই তেলে বারে বারে ভাঁজা বা রান্না করা খাবার।
. প্যাকেট চিপস বা প্যাকেটে বিক্রি করা যেকোনো ফ্রাই খাবার।
. হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা দোকানের তৈরি প্রায় সকল খাবার।

কি হবে ট্রান্স ফ্যাট বা পুরাপুরি খারাপ ফ্যাট খেলে?

অধিক পরিমান ট্রান্স ফ্যাট খেলে, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যাবে এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান কমতে থাকবে এবং ইনসুলিন এর পরিমান রক্তে কমিয়ে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর আশঙ্কা বাড়িয়ে দিবে।

তাহলে কোন ফ্যাট খাবো আর কোনটা খাবো নাঃ

১। খাদ্যতালিকা থেকে ট্রান্স ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দেয়ার চেষ্টা করা।

২। খাদ্যতালিকা থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট পুরোপুরি বাদ না দিয়ে বরং কমিয়ে আনা।

৩। খাদ্যতালিকায় আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাট রাখা।

৪। চেষ্টা করুন, পছন্দের খাবারগুলি ঘরে বানিয়ে খেতে। এতে স্বাদ দোকানের মত ভাল না হলেও, স্বাস্থ্যকর হবে। কারণ, হোটেল, রেস্টুরেন্টে ট্রান্স ফ্যাট ব্যাবহার করা হয়, শুধু তাই নয়, এরা একই তেলে বারে বারে রান্না করে, যা শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর।

৫। একবার রান্নার পর, সেই তেল পুনরায় ব্যাবহার করা যাবে না। একবার রান্না করা তেল, বার বার রান্না করলে, এতে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য খারাপ।

৬। অতি উচ্চ তাপে, তেলে কিছু রান্না করা উচিত হবে না। কারণ, অতি উচ্চ তাপে, তেলের গুনাগুণ নষ্ট হয়ে, ক্ষতিকারক ক্যামিকেল তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য খারাপ। তাই কম থেকে মাঝারি তাপে, তেলে রান্না করুন।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment