মুখের ভিতরে ঘা, যা খুব কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর …।এক্ষেত্রে কি করা উচিত…

……….

প্রায়ই আমাদের মুখ গহ্বরেরে ভিতরের দিকের পাতলা আবরণে, ঘা এর মত কিছু দেখা দেয়, যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর। এরা সাধারণত, মুখগহ্বরের ভেতরে দিকে, যেমন ঠোঁট বা গালের ভেতরের দেয়ালে, ঠোঁটের কোণে, জিহ্বার (ওপরে বা নিচের অংশে, দুই পাশে), দাঁতের মাড়ির গোড়ায়, ওপরের তালুতে হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ মুখের ঘা ডিম্বাকৃতির বা বৃত্তাকৃতির হয়। এর মাঝখানটা সাদা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে এবং একে ঘিরে লাল রঙের সীমানা থাকে। ঘায়ের আবির্ভাবের দুই এক দিন আগে থেকে ঘায়ের জায়গায় টনটনে ব্যাথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে।
যেকোনও ব্যক্তিরই মুখের ঘা হতে পারে, তবে এগুলি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। কারও কারও পারিবারিক ইতিহাসে মুখের ঘা হবার প্রবণতা থাকতে পারে।

ঠিক কি কারণে মুখের ঘা হয়, তা এখনও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকরা নিচের কিছু কারণ অনুমান করেন, যেমন,

. দাঁতের চিকিৎসার সময় হালকা আঘাত পেলে।

. বেশি জোরে দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে মুখে আঘাত পেলে, দুর্ঘটনাবশত মুখের ভেতরে দাঁতের কামড় বসলে।

. ঠাণ্ডা লাগলে মুখে ঘা হতে পারে।

. অতিরিক্ত গরম বা কড়া চা/ কফি পান করলে, বেশি ঝালযুক্ত খাবার খেলে, মুখের ভিতরের চামড়া ছিলে ঘা হতে পারে।

. ধূমপান, নেশা জাতীয় জিনিস, পান, জর্দা, মদ খেলেও মুখে ঘা হতে পারে।

. পেটের নানা অসুখ বা হজমের সমস্যা থাকলে।

. রাতে ঘুম না হলে অথবা দেরি করে ঘুমালে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে।

. অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করলে কিংবা মানসিক অশান্তিতেও মুখে ঘা হতে পারে।

. খাদ্যে ভিটামিন বি৬, বি-১২ ভিটামিন, জিঙ্ক, ফোলিক অ্যাসিড বা আয়রনের অভাব ঘটলে। হরমোন এর ভারসাম্যের অভাব ঘটলে।

. মুখের ভেতরে অ্যালার্জি থাকলে।

কিভাবে মুখের ঘা থেকে প্রতিকার সম্ভব:

. ঘরে বসে গরম পানিতে লবন অথবা বেকিং সোডা দিয়ে কুলি করলে আরাম মিলবে। মাউথ ওয়াশও মুখের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং খাওয়ার পর মুখগহ্বর সর্বদা পরিষ্কার রাখা। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা।

. অতিরিক্ত গরম বা কড়া চা /কফি পান না করা। অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করা।

. রাস্তা-ঘাট কিংবা ঘরের বাইরের পানি না পান করা।

. পেটের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন লো ফ্যাটের টক দই খান। কারণ পেটের এবং হজমের নানা সমস্যার জন্য, মুখে ঘা বেশি হয়ে থাকে।

. রাতে কমপক্ষে ৭/ ৮ ঘন্টা ঘুমান। কেননা, রাতের ঘুম ঠিকমতো না হলে মুখে ঘা এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

. রঙ্গিন শাক সবজী খাওয়া বা ডাক্তারের কথামতো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।

. নরম ব্রাশ ব্যবহার করা যাতে, মুখের ভিতরে চাপ বা ঘষা না লাগে।

. মানসিক চাপ কমাতে হবে, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেননা মানসিক সমস্যায় মুখের ঘা অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখগহ্বরের ঘা, এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়। যদি ঘায়ের আকার অস্বাভাবিক রকমের বড় হয় কিংবা নিজে থেকে সেরে না যায়, সাথে জ্বর বা অন্যান্য সমস্যা যুক্ত থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment