মাইগ্রেন, যা না জানলেই নয়…।।

……………………

মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। এ ব্যথা, মাথার যে কোনো একপাশ থেকে শুরু হয়। আস্তে আস্তে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়।

অনেক সময়ই আমরা সাধারণ মাথা ব্যাথা ও মাইগ্রেনের ব্যাথা আলাদা করতে পারি না। সহজ করে বললে, শুধু মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের পার্থক্য হলো, শুধু মাথাব্যথায় কেবল মাথায় যন্ত্রণা হয়, কিন্তু মাইগ্রেনে, মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে শরীরে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, মাথার সঙ্গে চোখ, পেট, মুখ, নাক, অনেক কিছুই আক্রান্ত হয় বা হতে পারে। সাধারণ মাথাব্যথা হলে, মাথার যন্ত্রণাটি পুরো মাথাজুড়ে হতে পারে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে, তা সচরাচর মাথার যে কোনো একপাশে হয়। আর সাধারণ মাথা ব্যাথার চেয়ে, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা অনেকগুন বেশি হয়।

তাছাড়া, মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরুর আগে সাধারণত, কিছু সমস্যা বা পূর্বাভাস দেখা দেয়। যেমন, মাইগ্রেন শুরু হবার আগে, রোগী চোখে কম দেখতে পারে, চোখে জিগজাগ লাইন দেখতে পারে, অথবা ফ্লাশিং লাইট দেখতে পারে।

ব্রেইনের সাথে পেটের একটি সংযোগ আছে। মাইগ্রেনে ব্রেইনের সাথে সাথে শরীরের বা পেটের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে পেটে পরিপাকের কিছু সমস্যা যেমন দেখা দেয়। তখন পেটে খাবার থাকলে, সেই খাবারটি হজম হওয়ার কাজটি কমে যায়। আর তাতে বমি বমি ভাব হয় অথবা বমি হতে থাকে।

মাইগ্রেন কেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে, চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খেলে, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ খেলে, মেয়েদের পিরিয়ডের সময়, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো , সেন্ট বা পারফিউমের গন্ধ, হালকা শব্দ, ধুলাবালিও অনেকসময় এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়।

মাইগ্রেন থেকে আরাম পাওয়ার কিছু উপায়ঃ

মাইগ্রেনের ব্যাথায় ওষুধও অনেক সময় কাজ করে না। মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে আরাম পাওয়া যায়, যেমন,

. মাইগ্রেনের রোগীর প্রথমে জানার চেষ্টা করা উচিত যে, কোন কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন, কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

. মাসে যদি কারো একাধিকবার মাইগ্রেন হয়, সেক্ষেত্রে একটি মাইগ্রেন হেডেক ডায়েরি মেন্টেন করুন। কিছুদিন পর দেখতে পাবেন, মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যথাটি আসছে। তখন সেই সময়টির এক বা দুই দিন আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করলে অথবা যে কারণগুলোর কারণে মাইগ্রেনের ব্যাথা বাড়ে, তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

. প্রতিরাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে ৭/৮ ঘণ্টা।

. অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।

. কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা বা অতিরিক্ত ধুলাবালি পরিহার করতে হবে।

. উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।

. বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর, মোবাইল ও টিভির সামনে না থাকা।

. মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফলের রস পান করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা কিংবা ঘরের আলো কমিয়ে বিশ্রাম নেয়া উচিত।

. স্ট্রেস বা মানসিক অশান্তি থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় অন্য সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। মাথাব্যথার সমস্যা থাকলে, ডাক্তারকে না দেখিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া একদমই উচিত নয়।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment