…………………….
আমাদের অনেককেই দেখা যায় যে, গোসলের পর, প্রায় ৫-১০ মিনিট ধরে সারা শরীর চুলকায়, আর সাবান ব্যাবহার করলে চুলকানিটা একটু বেশি হয়। তবে দিনের বাকি সময় তারা ভাল থাকেন।
এধরনের সমস্যায় আমরা গোসলে অনেক কিছু ব্যাবহার করি, যেমন, ডেটল সাবান, বেবি সাবান, লিকুইড সাবান, হারবাল সাবান কিংবা গোসলের আগে তেল মেখেও বসে থাকি কিছুক্ষণ। কেউ কেউ আবার নানান মলম, অ্যালার্জির ওষুধও ব্যাবহার করে থাকেন, কিন্তু তেমন কোন সুফল পান না। আজকের এই পোষ্টটি শুধুমাত্র তাদের জন্য।
প্রথমে চলুন জেনে নেই, সাবানে কি এমন উপাদান থাকে, যার জন্য চামড়া চুলকায়?
প্রায় সব সাবান তৈরির মুল উপাদান হোল, ক্ষার ও চর্বি। আর এই ক্ষার ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর, যা আমাদের নরম ও কোমল ত্বক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের শরীরে যে ন্যাচারাল অয়েল থাকে, প্রতিদিন সাবান ব্যবহার করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ত্বক একেবারে রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে গেলে, তা ফেটে যেতে পারে এবং ওই ফেটে যাওয়া অংশগুলিতে চুলকানির সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা ফুলে যেতে ও লালচে ভাব হতে পারে।
চুলকানি কমানোর জন্য অনেক সময় আমরা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যাবহার করে থাকি। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রতিরোধ করা বা মেরে ফেলার পাশাপাশি উপকারীগুলোকেও প্রতিরোধ করে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চামড়া।
শিশু ও বয়স্কদের এই সমস্যা বেশি হয়। বয়স ৪০-এর পর তেল ও ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত গ্রন্থি না থাকার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আর বাচ্চাদের তেলগ্রন্থিগুলো সঠিকভাবে গঠিত থাকে না, ফলে তাদের ত্বকও শুষ্ক হতে পারে।
এ সমস্যার সমাধান কি?
এই ধরনের সমস্যা হলে প্রথমেই আপনাকে গোসলে সাবান ব্যাবহার বাদ দিতে হবে। অবাক হচ্ছেন, তাই না ?? সাবান ছাড়া কি গোসল হয় ? শরীর তো পরিষ্কারই হবে না!! ….??
ব্যাপারটা টিক তা নয়, এক্ষেত্রে আপনি সাবানের বিকল্প হিসেবে ইমোলিয়েন্ট ক্রিম ( Emollient ক্রিম) দিয়ে গোসল করে নিতে পারবেন।
ইমোলিয়েন্ট হোল একধরনের ময়েশচারাইজার, যা ত্বকে লাগালে, ত্বকের শুষ্কতা কমে এবং আরামদায়ক হয়। সাবানের ক্ষার ত্বকের যে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে, ত্বককে শুষ্ক করে দেয়, ইমোলিয়েন্ট সেটা বাঁধা দেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক, আর্দ্র হয় না, ফেটে যায় না এবং চুলকায়ও না। আবার ইমোলিয়েন্ট যেহেতু পানিতে দ্রবণীয় হয়, তাই এটা সহজেই ত্বক পরিষ্কারও করে থাকে।
কোথায় পাওয়া যাবে বা কি নামে পাওয়া যাবেঃ
ইমোলিয়েন্ট অনেক ধরনের হতে পারে, যেমন,
Zeroderma , ECZMOL , Ovelle Silcock’s , Dermasoft , Fatty Emulsion Cream , Sorbolene Cream , ইত্যাদি।
দেশের যেকোনো বড় ফার্মাসি বা শপিং মলে এগুলো পাওয়া যাবে। আর দামও সাধ্যের মধ্যে। এছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনেও কিনতে পারবেন। বাইরের দেশগুলোতে এই ইমোলিয়েন্ট ক্রিমগুলো খুবই কম দামে, এমনকি বিনামূল্যে রোগীদের দেয়া হয়ে থাকে।
আপনার ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, ঠিকমতো যত্ন না করলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। তাই গোড়াতেই নজর দিন ও শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিন এবং পরিচর্যার সঠিক উপায় বেছে নিন।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
