………………
যারা গাড়ি, ট্রেন, প্লেন, বা জলযানে চেপে পরিভ্রমণ করেন, তাদের কারো কারো জন্য অতি পরিচিত সমস্যা হচ্ছে, ভ্রমণের সময় বমি হওয়া, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি লাগা। এই সমস্যাই Motion sickness নামে পরিচিত।
এই Motion Sickness আসলে কোন রোগ নয়। ভ্রমণের সময় আমাদের ব্রেইনে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়, আর তখনই এ সমস্যা শুরু হয়। আবার ভ্রমণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটিরও ইতি ঘটে। তাই আপনি যত বেশি ভ্রমণ করবেন, আপনার সমস্যাও আস্তে আস্তে ঠিক হতে থাকবে।
আসুন, ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। আমাদের শরীরের কানের কাজ হচ্ছে, আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আপনি কি অবস্থায় আছেন, যেমনঃ দাড়িয়ে আছেন নাকি বসে আছেন, নাকি স্থির আছেন, এসব তথ্য ব্রেইনে প্রেরণ করে।
এবার মনে করুন আপনি গাড়িতে যাচ্ছেন। যেতে যেতে আপনি আপনার পছন্দের বই পড়ছেন। এবার আপনার চোখ বলছে আপনি স্থির, কারণ আপনি স্থির জিনিসের উপর দৃষ্টি দিয়ে আছেন এবং আপনার চোখ দেখতে পাচ্ছে, সামনে পেছনে সিট গুলো স্থির এবং মানুষ গুলোও স্থির হয়ে বসে আছে। কিন্তু আপনার অন্তঃকর্ণ বলছে আপনি চলন্ত অবস্থায় আছেন, উঁচু নিচু রাস্তায় যাচ্ছেন।
আপনার ব্রেইন এই দুই ধরনের বার্তা পেয়ে নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আর তখনই দেখা দেয় Motion Sickness. এজন্য জন্য দেখবেন গাড়িতে মোবাইল টিপলে বা বই পড়লে বমি বমি একটা ভাব আসে। কারণ অন্তকর্ণ বলে আপনি গতিশীল। কিন্তু চোখ বলে আপনি স্থির। তাই যখন এই বিভ্রান্তি ঘটে তখন আমাদের ব্রেইন ধরে নেয় যে আমাদের দেহে নিশ্চয়ই কোন একটি বিষক্রিয়া কাজ করছে। অর্থাৎ কোন না কোনভাবে আমাদের শরীরে বিষ ঢুকে গিয়েছে। অতঃপর ব্রেইন সিদ্ধান্ত নেয় যে, শরীর থেকে বিষটি বের করে দিতে হবে। যার একমাত্র উপায় হচ্ছে বমি করা।
এক্ষেত্রে করনীয় কি?
১। গাড়িতে সামনের দিকে বসার চেষ্টা করুন। গাড়ি নিজে চালালে Motion sickness হয় না। কারণ ব্রেইন তখন, গাড়ি চালনায় বেশি মনযোগী থাকে।
২। সব সময় জানালার পাশের সিটে বসার চেষ্টা করুন। বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে দিন। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। এতে করে চোখ দেখবে আমরা গতিশীল। আর অন্তঃকর্ণ তো বুঝতেই পারবে আমরা গতিশীল অবস্থায় আছি। এতে তারা উভয়েই ব্রেইনে একই বার্তা পাঠাবে, ফলে Motion Sickness হবার সুযোগ কমে যাবে।
৩। যেদিকে গাড়ি চলছে, সেদিকে পেছন করে বসবেন না।
৪। চলন্ত গাড়িতে বই ও ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৫। ভ্রমণের আগে, ডাক্তারের পরামর্শ মত বমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারেন।
৬। বমি বম ভাব আসলে, এক হাত দিয়ে অন্য হাতের কব্জির ভিতরের দিকে ২/৩ মিনিট চেপে ধরতে পারেন। আকুপ্রেসারের কারণে বমি বমি ভাব তখন কমতে থাকবে।
বর্তমানে বড় বড় ফার্মেসিতে বমি রোধক ব্যান্ড পাওয়া যায়। ভ্রমণ শুরু করার আগে দুই হাতের কব্জিতে ব্যান্ড দুটো পরে নিতে পারেন, এতে আকুপ্রেসারের কারণে বমি বমি ভাব লাগবে না।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
