………………
চোখ নাকি মনের কথা বলে, আবার কাজল কালো, পটল চেরা চোখ সবার নজরও কাড়ে। কিন্তু যদি সেই চোখের নিচে কালি পরে, তাহলে তা দেখতে আর ভালো লাগে না। এক জোড়া সুস্থ সুন্দর চোখ বলে দিতে পারে, আপনার শরীরের আভ্যন্তরীণ খবর। তাই যখনই আপনার শরীরের যত্নের নিয়মে কোনও ঘাটতি দেখা দেয় বা খাদ্যাভ্যাসে কোনও ব্যাঘাত ঘটে, তখনই আপনার চোখ এবং তার আশে পাশে নানান উপসর্গ দেখা দেয়। আর এ কারণেই একজন ডাক্তার আপনার চোখ পরীক্ষা করতে কখনই ভুলেন না।
আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা যতই এড়িয়ে যেতে চাই না কেন, আমাদের বয়স বাড়বে একথা সত্য। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন হারিয়ে আরও পাতলা হতে থাকে। এর ফলে চোখের চারপাশের শিরা স্পষ্ট হয়ে, চোখের ডার্ক সার্কল আরও বেশি দেখা দিবে।
ডার্ক সার্কেলের সমস্যা যদি একবার হয়েই যায়, তাহলে পুরোপুরি যেতে অনেক সময় লাগে। ডার্ক সার্কেলের এই সমস্যা যে কোনও সময় এবং যে কোন বয়সেও হতে পারে।
ডার্ক সার্কেল কেন হয়ঃ
আসলে চোখে প্রচণ্ড চাপ পড়লে সাধারণত ডার্ক সার্কেল হয়। কারণ চোখের আশপাশে যে কোষ আছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেই চোখের চারপাশে কালি পড়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য প্রধান কারণগুলো হল,
. রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে
. প্রচণ্ড কাজের চাপ থাকলে
. মানসিক অশান্তি বা স্ট্রেস থাকলে
. ধূমপানের কারণেও এই ডার্ক সার্কেলের সমস্যা বাড়ে
. রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে
. শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানি স্বল্পতা হলে
. পুষ্টির অভাব হলে
. প্রসাধনী ব্যাবহারে অ্যালার্জি হলে
. চোখের অ্যালার্জি এবং নাজাল ব্লকেজ ডার্ক থাকলে
. হরমোনের পরিবর্তনে হতে পারে
. পরিবেশ দূষণের কারণেও হতে পারে
. সূর্যের আলো বা রোদ লেগেও চোখের চারপাশে বাড়তে পারে ডার্ক সার্কেল।
. টিভি বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের চারপাশে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আপনার চোখের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যায়।
. বংশগত কারণেও হতে পারে
কি করলে এই ডার্ক সার্কেল কমানো যেতে পারেঃ
. ডার্ক সার্কেল প্রতিরোধের প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল আপনার ডায়েট ঠিক রাখা এবং রাতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা। এই জন্য, আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই কিছু বিশেষ জিনিস অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন সি (লেবু, কমলা, টমেটো, টক জাতীয় ফল, ক্যাপ্সিকাম, মরিচ ইত্যাদি ), ভিটামিন কে (বাধা কপি, ফুল কপি, টমেটো, সবুজ শাক ইত্যাদি ) এবং ভিটামিন ই ( ভুট্টা, বাদাম, মাছ, তেল ইত্যাদি ) সমৃদ্ধ খাদ্য রাখুন।
. সারাদিন প্রচুর পানি ( প্রায় ২ লিটার) পান করুন।
. নিয়মিত পেট ক্লিয়ার রাখুন, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
. আপনার যদি ধুলো বালি, ধোঁয়া ইত্যাদিতে অ্যালার্জি থাকে, তবে অবশ্যই বাইরে যাওয়ার সময় একটি মাস্ক পরুন।
. মদ্যপান, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।
. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
. দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপে, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে, বরফ কুঁচি একটি ছোট রুমালে নিয়ে, চোখে সেঁক দিতে পারেন। এতেও বেশ ভাল উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও বরফের সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়।
. শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন সঠিক মাত্রায় প্রবাহিত করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা ৩০/৪৫ মিনিট হাঁটুন।
. বাইরে সূর্যের আলোতে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ক্রিম ও সান গ্লাস ব্যবহার করুন।
. ডার্ক সার্কেল ঢাকতে ঠিকমতো মেকআপ করতে পারেন। চোখের তলায় কনসিলার ব্যবহার করুন। ভাল করে প্রাইমার লাগান। এতেও কিন্তু ডার্ক সার্কল ঢেকে ফেলা যায়। তবে এটা কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়।
. চাইলে লেসার ট্রিটমেন্ট করে ডার্ক সার্কেল সরিয়ে ফেলতে পারেন।
ডার্ক সার্কেল লুকানোর জন্য মানুষ নানান উপায় অবলম্বন করে থাকে । এর মধ্যে রয়েছে মেকআপ। এছাড়া বাজারে নানা ধরনে ক্রিম এবং প্রসাধনী পাওয়া যায়, যেগুলো সাময়িকভাবে ডার্ক সার্কেল দূর করলেও, তা বেশিদিন কার্যকর হয় না। তাই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
