………………..
ধরা হয়ে থাকে যে, ছেলেদের চুল পরা বা টাক মাথার জন্য দায়ী হল, অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন এবং খুস্কি। তবে সবার শরীরের গঠন এক নয়। সবার এক্ষেত্রে এই কারণ দুটি নাও থাকতে পারে।
চুল পড়ে যাবার জন্য মূলত দায়ী টেস্টোস্টেরন যা পুরুষত্ব নির্ধারণকারী হরমোন। যার শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ যত বেশি, তার টাকও ততো বেশি হবে। মানুষের শরীরে থাকা টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনটি বয়:সন্ধিকালে বেশি হয়ে থাকে, সেটি পরবর্তীতে, চুলের গ্রোথ নষ্ট করে, চুলের গোড়া দুর্বল করে, চুল পড়ে যায় এবং মাঝে মাঝে চুলের গ্রোথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণে মূলত অনেকেই টেকো হয়ে যান। যেহেতু এই টেস্টোস্টেরন পুরুষদের প্রধান হরমোন, তাই এটাকে ওষুধের মাধ্যমে কমিয়ে দেয়া উচিত নয়। তাই টেস্টোস্টেরন কমানোর জন্য কোন ওষুধ দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ বা চুল প্রতিস্থাপন সার্জারির মাধ্যমে হারানো চুল ফিরে পাওয়া সম্ভব।
আর চুল পরা বা টাক মাথার আরেকটি প্রধান কারণ হল খুস্কি ও চুলকানি। দেখা যায়, খুস্কি হলে আমরা অনেক সময়ই তা অবহেলা করে থাকি। যার ফলে প্রচুর চুল পড়তে থাকে। আর ছেলেদের মাথায় খুস্কির পরিমাণ হয় অনেক বেশি। তাই খুস্কি হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। খুস্কি দূর করার জন্য ডাক্তারগণ ফাঙ্গাস নাশক শ্যাম্পু কিটোকোনাজল (Ketoconazole 2%) ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম হলো খুশকি দূর করার জন্য, কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু মাথায় লাগিয়ে, ৫/৭ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালভাবে শুধুমাত্র পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, তখন কোন শ্যাম্পু বা সাবান ব্যাবহার করা চলবে না। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমতে থাকবে। এছাড়াও এই শ্যাম্পুটি সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে, ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান নিঃসরণ কমিয়ে আনে, যার ফলে খুশকি ও অতিরিক্ত চুলকানি দূর হয় ও চুল পরা বন্ধ হয়।
বাজারের প্রায় সব ফার্মাসিতেই, বিভিন্ন নামে, এই শ্যাম্পু কিনতে পাওয়া যায়।
ছেলেদের অল্প বয়সে, যখন থেকে এই খুস্কি বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিবে, ঠিক তখন থেকেই যত্নবান হওয়া উচিত। নতুবা চুল পরে গেলে, তখন এগুলো করে কোন লাভ হবে না। তাই চেষ্টা করুন আপনার সন্তান যেন এই নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বংশগত, কর্মব্যস্ততা, মাথার ত্বকের অপরিচ্ছন্নতা, অতিরিক্ত ডায়েট ও পুষ্টিহীনতার কারণেও টাক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা (যেমন যক্ষ্মা, টাইফয়েড), কোনো অস্ত্রোপচারের পর, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা বা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার কারণে চুল বেশি হারে পড়তে পারে।
দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। এ ছাড়া শরীরে দীর্ঘদিন কোনো একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে।
খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধন ব্যাবহার করলে, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়।
টাক সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য সুখবরঃ
যেহেতু এদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেহেতু, তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ কম থাকে।
আর এই টেস্টোস্টেরনের কারণে, এদের শরীর পায় পুরুষালি আকার, ওজন হয় স্বাস্থ্যকর আর পেশি হয় সুগঠিত। মুখে থাকে কম চর্বি, তাই মুখমণ্ডল হবে দারুণ পুরুষালি।
এই টাক সমস্যাটির পাকাপাকি সমাধান আজ অবধি পাওয়া না গেলেও আধুনিক বিজ্ঞান ভবিষ্যতে হয়তো খুঁজে নিয়ে আসবে এর পেছনের প্রকৃত কারণ ও সমাধান।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
