মন খারাপ মানেই কি বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন ??বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন আসলে কি, চলুন জেনে নেই……।

……………

বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন বলতে অনেকে মন খারাপকে বুঝে থাকেন। ডিপ্রেশন এবং মনখারাপ দুটি ভিন্ন জিনিস। একজন মানুষের নানা কারণে মন খারাপ হতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যখনই সেটা বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন রোগ হবে, তখন সেটা হবে একটু ভিন্ন ধরনের। আর তাই মন খারাপ হওয়া মানেই ডিপ্রেশন রোগ হওয়া নয়।

চলুন আজ আমরা জেনে নেই, ডিপ্রেশন আসলে কি …

ধরা হয়ে থাকে যে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি মধ্যে যদি পাঁচটি বা তার বেশি লক্ষণ, কোনও মানুষের মধ্যে, টানা দুই সপ্তাহ বা তার বেশি থাকে, এবং সেটা তার স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন কাজকে প্রভাবিত করে, তখন তাকে ডিপ্রেসিভ রোগী বলা যায়।

১। বিষণ্ণ মানুষ জীবনকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে। নিজের প্রতি তার নিজের ঘৃণা এমন স্তরে চলে যায় যে, সে ভাবে তার এবং তার আপনজনদের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত নেতিবাচক ঘটনার জন্য সে নিজেই দায়ী।

২। দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকে। সারাক্ষণ অবসন্ন, ক্লান্ত ও বিরক্ত ভাব লাগে।

৩। বিষণ্ণ ব্যাক্তি জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যেসব কাজে আগে সে আনন্দ পেতো, সেসব কাজে আনন্দ ও আগ্রহ কমে যায়।

৪। এদের হতাশা বোধ বেড়ে যায়। তাদের মনে হয় যে, সামনে ভালো কিছু নেই এবং তাদের দ্বারা ভালো কিছু হবেনা। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এরা নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায়।

৫। বিষণ্ণ ব্যাক্তি অনেক সময় খুব একাকিত্বে ভোগে। নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ লাগে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে থাকে। ভাবেন, মরে গেলেই ভালো হতো। অনেকে ধর্মীয় কারণে হয়তো করেন না। তবে খুব ইচ্ছা করে মরে যেতে। বেঁচে থাকার আগ্রহটা একদম কমে যায়।

৬। ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া অথবা বেশি ঘুম হয়।

৭। খাবারে অরুচি তৈরি হয় বা রুচি বেড়ে যায়।

৮। শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, চিকিৎসা নেওয়ার পরও হজমে সমস্যা দেখা দেয়।

৯। ওজন বাড়া বা কমে যায়।

১০। কাজে ও চিন্তায় ধীরগতি হয়ে যায়, মনোযোগে সমস্যা, ভুলে যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। বিষণ্ণতা জটিল অবস্থায় চলে গেলে এ ধরনের চিন্তা বেশি হয়।
কেউ সারাক্ষণ আত্মহত্যার বা মৃত্যুর কথা বলতে থাকলে এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো আরো খারাপের দিকে গেলে, দ্রুত মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বিষণ্ণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ শুরুতেই এর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে, এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই যেকোনো মানসিক সমস্যাতেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কেননা, শুচিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন থেকে অবস্থার উন্নতি সম্ভব।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment