সিজোফ্রেনিয়া কি…চলুন জেনে নেই

……

সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে সমাজে নানান গল্প, কাহিনী প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করে, এটা জীনে ধরা, ভুত পেত্নীর আছর লাগা, উপরি বাতাস লাগা, পাপের ফল ইত্যাদি। আর তখন সুস্থতার জন্য মানুষ নানান কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মাদুলি, পানি পড়া, মাজারে মানত করা ইত্যাদি করে থাকেন।
এছাড়া অনেক গল্পে এবং মুভিতে, এই রোগ এ আক্রান্ত রোগীদের হিংস্র হিসেবে দেখানো হয়। এটা সাধারণত সত্যি না। অধিকাংশ রোগীরা হিংস্র না এবং তারা শুধুমাত্র একা থাকতে পছন্দ করে।

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির চিন্তা ধারা ও অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে, কোন প্রকার মিল থাকে না। রোগী বাস্তবতার বোধ হারিয়ে ফেলে।

এই রোগের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বংশগতভাবে এই রোগ থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও তা দেখা যায়। বাবা, মা-এর কারো এই রোগ থাকলে সন্তানেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২০ বছর বয়সের শুরুর দিকে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। ৪৫-এর পর এটা কমে যায়। ৫০ বছরের পর আর হয় না। ৫৫ বছরের পর নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব কম।

চলুন জেনে নেই এই রোগের লক্ষণ গুলো কিঃ

সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগীদের বেশ কয়েকটা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাদের চিন্তা, ক্রিয়া, ব্যবহার, ও পার্সোনালিটিতে পরিবর্তন আসতে পারে এবং তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ব্যবহার করতে পারে।

যদি কারো একটানা কমপক্ষে ৬ মাস নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি থাকে তাহলে সাধারণত তার সিজোফ্রেনিয়া আছে বলে ধরা হয়। যেমন,

১। সিজোফ্রেনিয়ার প্রথম লক্ষণই হল, বাস্তবতার সাথে রোগীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রোগী অনেকটা স্বপ্নের জগতের বসবাস করে এবং এটাকেই সে বাস্তব মনে করে। তাকে যুক্তি, তর্ক দিয়েও ভুল ভাঙ্গান যাবে না।

২। এক্ষেত্রে রোগী এমন কিছু বিশ্বাস করে, যার আসলে বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। রোগীর মাঝে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা থাকে। রোগী কোনো অশরীরীর কথা শুনতে পাচ্ছে, বহুদূর থেকে কেউ তার সাথে কথা বলছে, অন্য কোনো ব্যক্তি তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, সব সময় এমন ভাবনা ভাবতে থাকে।

৩। এ ক্ষেত্রে রোগী অবাস্তব জিনিস দেখতে থাকে বা অনুভব করে। সহজ ভাষায়, যে জিনিসের অস্তিত্ব নেই, মস্তিষ্ক সেটি নিজ থেকে তৈরি করে ফেলে। অদ্ভুত কোনো গন্ধ পাওয়া বা শরীরে কিছু না থাকা সত্ত্বেও শরীর কিছু স্পর্শ করছে এমন সমস্যাও দেখা যায়।

৪। রোগী দীর্ঘ সময় একই ধরনের শারীরিক অবস্থান ধরে রাখে।
৫। আবেগের উপস্থিতি একদম কমে যায়।
৬। পরিবার বা বন্ধু বান্ধবের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া
৭। সামাজিক যে কোনো কাজ বা অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া
৮। শরীরের যত্ন না নেওয়া।
৯। যে কোনো বিষয়েই কথাবার্তা একদমই কম বলা অথবা না বলা এবং
জীবন নিয়ে কোনো আগ্রহ না থাকা।
১০। খুব দ্রুত চিন্তা বদলানো, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।

এই রোগ প্রতিরোধ করার কোনো উপায় ডাক্তারদের জানা নেই। তবে এটা যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তাহলে এটার মারাত্মকতা অনেকটা কমানো সম্ভব।

সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য সাধারণত এ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধ, সাইকোথেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। দেখা যায় যে, ৮০ভাগ রোগী কিছু দিন ভালো, কিছু দিন খারাপ থাকে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ভালো হয় না।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment