…………………..
ঘাম হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। তাদের ঘামে এতই দুর্গন্ধ হয় যে, তাদের সঙ্গে দুই মিনিট বসাও বেশ সমস্যার হয়ে যায়। এমনকি, যিনি ঘামছেন, তিনি হয়তো টেরই পাচ্ছেন না যে, তার ঘামে অনেক ঘন্ধ রয়েছে। পারফিউম বা ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করে হয়তো সাময়িকভাবে গন্ধ দূর হয়, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই আবার আগের রূপে ফিরে আসে।
এক থেকে দু’দিন এমন গন্ধ হলে চিন্তার কারণ নেই। তবে এধরনের গন্ধ অনেক দিন ধরে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে, ঘাম হওয়াটা শরীরের স্বাভাবিক কার্যপদ্ধতি। প্রাকৃতিকভাবেই ঘাম গন্ধহীন। ঘামের নিজস্ব কোনও গন্ধ নেই। ত্বকের উপর বাস করা একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়াই হল যতসব গন্ধের উৎস। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গন্ধহীন ঘামের সঙ্গে মিশে খারাপ গন্ধ তৈরি করে।
এছাড়া আরও নানান কারণে গন্ধ যুক্ত ঘাম হতে পারে, যেমন,
মানসিক চাপ বা উদ্বেগের ফলে, মেয়েদের মেনপোজের পর, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, হরমোনের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, শরীরে পানি স্বল্পতা ইত্যাদি হলেও ঘামে ঘন্ধ হতে পারে।
স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন বেড়ে গেলে, ত্বকের ভাঁজ ঘাম ধরে রাখে এবং এতে ব্যাকটেরিয়া ঘন্ধ যুক্ত ঘাম সৃষ্টিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
কি করলে ঘামের ঘন্ধ কমানো যাবেঃ
১। নিয়মিত গোসল করার অভ্যাস করুন। গরমে সম্ভব হলে দিনে দুবার গোসল করুন। এতে শরীরে জমে থাকা ময়লা, ঘাম ও ব্যাকটেরিয়া দূর হবে এবং দুর্গন্ধও কমে আসবে।
২। ধূমপানের কারণে শরীরে দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ধূমপান পরিহার করুন।
৩। বগল বা আর্ম পিটের লোম পরিষ্কার করুন। এসব লোম জমে থাকা ঘামকে, বাষ্পীভূত হতে দেয় না, ফলে ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় ধরে দূর্গন্ধ তৈরি করে।
৪। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে, পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন।
৫। পানি সমৃদ্ধ তাজা ফল ও শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
৬। সুতির বা আরামদায়ক কাপড় পরিধান করুন। অন্তর্বাস ও মোজা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
৭। প্রচণ্ড রোদ ও গরম এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করুন।
৮। মানসিক অশান্তি বা মানসিক যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৯। বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা হাঁটুন।
১০। প্রাস্রাব বেশি সময় ধরে আটকিয়ে রাখবেন না এবং নিয়মত পেট ক্লিয়ার রাখুন।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার আরও দুটি সমাধান রয়েছে, তা হল,
ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টি পারস্পিরেন্ট ব্যাবহার করা।
ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করলে, সেটা বগলের দুর্গন্ধকে সুবাস দিয়ে ঢেকে দেয়। আবার ডিওডোরেন্ট বগলের পরিবেশ, ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল করে তুলে, ফলে ব্যাকটেরিয়া গন্ধ তৈরি করতে পারে না।
অন্যদিকে অ্যান্টি পারস্পিরেন্ট ঘাম গ্রন্থিকে ব্লক করে, ঘাম নিঃসরণ কমিয়ে ফেলে। এতে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে না।
আপনার শরীর থেকে যদি ঘন্ধ যুক্ত বেশি ঘাম ঝরে, এমন প্রোডাক্ট কিনুন যার লেবেলে অ্যান্টি পারস্পিরেন্ট ও ডিওডোরেন্ট উভয় রয়েছে। আর তেমন ঘাম বের না হলে, কেবল ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এসব প্রডাক্ট প্রচুর পাওয়া যায়। কেনার সময় দেখে কিনুন। আপনার জন্য সঠিক অ্যান্টি পারস্পিরেন্ট/ডিওডোরেন্ট কিনতে, চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
