অটিজম কি?? চলুন জেনে নেই ও অন্যকে জানাই ……।।

অটিজম হচ্ছে শিশুর ব্রেইনের ডেভেলপমেন্ট বা বিকাশজনিত সমস্যা।বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) বলেন। এই অসুখে, জন্মগতভাবেই শিশুর আচার-আচরণে, কিছু সমস্যা তৈরি হয়, ফলে একজন স্বাভাবিক শিশু যেমন কথাবার্তা, যোগাযোগ ও আচার-আচরণ করে, অটিস্টিক শিশুরা তা করতে পারে না।

সাধারণত ধরা হয়, ৯/১০ বছর পর্যন্ত একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটার সঠিক সময়। তাই এই সময়ে মা, বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন ও মনোযোগ দেয়া জরুরী। শিশু কিভাবে খাচ্ছে, কিভাবে সারা দিচ্ছে, তার আচার-আচরণ ও কথাবার্তা ইত্যাদি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা খেয়াল রাখা জরুরী। শিশুদের অনেক গুলো সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে অটিজম। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা, একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, অন্য শিশুদের সঙ্গে তার নিজের বাচ্চার আচরণগত সমস্যা রয়েছে। আর এই বয়সে, যেকোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা দেখা দিলে, যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা, যত দ্রুত এই রোগ শনাক্ত হবে, শিশুর জন্য তা হবে ততই মঙ্গলজনক।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, শৈশবে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে, অটিজম নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু, প্রাপ্তবয়সে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে। শৈশবে ব্যবস্থা নেওয়া বলতে বোঝায় জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩৬ মাস বয়সের মধ্যে অটিজম শনাক্তকরণ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিশুকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া।

অটিজম রোগটি সাধারণত শিশুর ১ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা দেয় এবং মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যেই এই রোগটি বেশি দেখা যায়।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের উপসর্গগুলো হলোঃ

১। অটিস্টিক শিশুরা কখনই তার সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশবে না।
তাদের সাথে খেলা করা, গল্প করা বা তাদের সঙ্গ তার ভালো লাগবে না। সমবয়সীদের প্রতি তার কোনই আগ্রহ থাকবে না।
সে সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করবে। ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নিজের মত থাকার চেষ্টা করবে। এদের নাম ধরে ডাকলে, এরা সাড়া দেয় না। কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় না।

২। এই শিশুরা সহসা নিজেদের আনন্দ অনুভূতি অন্যের সাথে ভাগ করতে পারে না। নিজের চাওয়া, নিজের অনুভূতি কারো কাছে প্রকাশ করতেও পারে না।

৩। অটিজমে আক্রান্ত শিশু কারও চোখে চোখে তাকায় না। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে, উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে সেও একই কথার পুনরাবৃত্তি করে। নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুনের বাহিরে এরা যেতে চায় না।

৪। কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলায় জড়তা থাকতে পারে।
আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাবে, শিশু একেবারে কথায় বলছে না।
বা একটা বয়স পর্যন্ত কথা বললেও, পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে।

৫। পারস্পরিক সম্পর্কগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তারা বুঝতে পারে না। যেমন এসব শিশুরা যদিও বাবা-মা বলা শিখে। কিন্তু দেখা যায় নিজের বাবা-মাকে, বাবা-মা ডাকার পাশাপাশি, অন্য কাউকে দেখলেও এরা বাবা-মা বলে ডাকে।

৬। এরা চারপাশে উপস্থিত লোকদের কথা শুনতে আগ্রহ দেখায় না, এমনকি তাদের কোনো কথায় সাড়া দেয় না। অন্যের অনুভূতি এরা বুঝতে পারে না। অন্য কেউ ক্ষোভ, দুঃখ বা স্নেহ প্রদর্শন করলেও এরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, নির্লিপ্ত থাকে।

৭। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে এই শিশুরা সেটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না। দৈনন্দিন জীবন যাপনে প্রক্রিয়ার সামান্য পরিবর্তন এরা পছন্দ করে না। যেমন: তার খেলনাগুলো যেভাবে সাজানো রয়েছে, তার একটু ব্যতিক্রম হলেই সে বিরক্ত প্রকাশ করে।

৮। এই শিশুদের ধৈর্য কম থাকে। এমনকি একটা খেলনা দিলে, সেই খেলনার প্রতি ধৈর্য নিয়ে এক মিনিট খেলা করাটা তার জন্য কঠিন হয়। এক-দুই মিনিট পর তার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে।

৯। কিছু কিছু সময় তারা, তাদের দুই হাতে ঝাপটা মারতে থাকে, তাদের শরীর দোলাতে থাকে, অথবা চক্রাকারে শরীর ঘোরাতে থাকে।
কখনো কখনো কিছু শব্দের, গন্ধ, স্বাদ, চেহারা বা আচরণের সঙ্গে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

এই রোগ নির্ণয় করা কঠিন, কারণ এর কোনো ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নেই। চিকিৎসক শিশুর আচার-আচরণ এবং বুদ্ধির উপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন।

এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঔষধ নেই। বিভিন্ন রকমের থেরাপি হলো এই রোগের মূল চিকিৎসা। যেমন, আচরণগত থেরাপি, ভাষাগত বা ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, শিক্ষাগত বা এডুকেশনাল থেরাপি এবং পেশাগত বা অকুপেশনাল থেরাপি ইত্যাদি। তবে এই রোগের সাথে যদি অন্য কোনো সমস্যা যেমন, অস্থিরতা, চঞ্চলতা, বিষণ্নতা, খিঁচুনি ইত্যাদি থাকে, তাহলে সেই সমস্যা অনুযায়ী ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হয়।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বাড়তি যত্ন নেয়া জরুরি। যদিও এ ধরণের শিশুরা সামাজিক ভাবে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না বা চলাফেরা করতে পারে না, তবুও এদের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ ও যত্নের। পাশাপাশি দরকার প্রয়োজনীয় নানান থেরাপি। তবেই অটিজম নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু প্রাপ্তবয়সে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারবে বলে আসা করা হয়।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment