………….
চল্লিশ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের, বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি, প্রোস্টেট পরীক্ষা করা দরকার। প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যায় অনেকেই ভুগেন। অস্বস্তি আর লজ্জায় তারা কাউকে কিছু বলেন না। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল ও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
প্রোস্টেট হচ্ছে একটি ছোট গ্রন্থি, যা দেখতে সুপারির মতো। এটি সব পুরুষের মুত্রথলির ঠিক নীচে মুত্রনালিকে ঘিরে থাকে। মেয়েদের এই গ্রন্থিটি থাকে না। সাধারণত, এই গ্রন্থিটি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। আর এটা সাধারণত, পুরুষদের ৫০ বছরের পর থেকে শুরু হয়। গ্রন্থিটি বাড়লে অনেক সমস্যা হতে পারে। এই বৃদ্ধি কারও কারও ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং কারও কারও ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে না বা সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করে।
ঠিক কি কারণে এই গ্রন্থি বড় হয়, তা আজও অজানা। তবে ধারনা করা হয় যে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের হরমোনেও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। হরমোনের এই পরিবর্তনকেই প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। পঞ্চাশ ঊর্ধ্বো প্রায় সব পুরুষের প্রোস্টেট বড় হতে থাকে কিন্তু সবার উপসর্গ দেখা দেয় না।
লক্ষণ গুলো কি কিঃ
পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তা বা প্রস্রাবের নালিটা, এই প্রোস্টেট গ্রন্থির ভেতর দিয়ে আসে। তাই এই প্রোস্টেট গ্রন্থি যদি বড় হয়ে যায়, তখন সেটা প্রস্রাবের নালির ওপর চাপ দেয়। ফলে প্রস্রাবের বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। যেমনঃ
. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া,
. ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া,
. প্রস্রাব করার পরও প্রস্রাবের থলি খালি না হওয়া,
. রাতে প্রস্রাবের জন্য বারবার ঘুম থেকে জেগে ওঠা,
. এই রোগে, প্রস্রাবের বেগ আটকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়, প্রস্রাবের গতি দুর্বল ও মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়, প্রস্রাবের থলি বেশি ভরে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয় ও অনেক সময় প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায়।
. কখনও প্রস্রাব একেবারে আটকে যেতে পারে কিংবা আটকানোর মতো হতে পারে। হঠাৎ করে প্রস্রাব আটকে গেলে তলপেটে তীব্র ব্যথা ও প্রচণ্ড প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যথা এতো বেশি হয় যে, যতক্ষণ না এই প্রস্রাব বের করে দেয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত রোগী খুব অস্বস্তিতে থাকেন।
তাছাড়া যখন প্রোস্টেট বড় হয়, তখন জটিলতা হিসেবে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ কিংবা মূত্রথলিতে পাথর এবং সবচেয়ে বড় কথা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া কিংবা পরবর্তীতে প্রোস্টেটে ক্যান্সারও হতে পারে। এই রোগে যেহেতু ঠিকমতো প্রস্রাব হচ্ছে না, একসময় কিডনিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
আর এধরনের সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে প্রোস্টেট রোগের চিকিৎসাতে নানান পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা প্রযোজ্য হবে, সেটা আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করে দেবেন।
আপনার প্রস্রাবে যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কেননা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো, নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে, সেটা প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া প্রতিরোধ করবে কিংবা সার্জারি থেকেও রক্ষা পেতে পারেন, এমনকি আপনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিও, রক্ষা পাবে।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
