জ্বর নিয়ে কিছু জরুরি কথা…।।

……………

হঠাৎ করে জ্বর আমাদের যে কারোরই আসতে পারে। সাধারণত এই জ্বর আবার কয়েকদিন থেকেও চলে যায়। শরীরের ভেতরে যখন কোনো জীবাণু আক্রমণ করে, সেটা ঠেকাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, লড়াই করতে শুরু করে। আর তখনই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বরের অনুভূতি হয়। জ্বর আসলে কোন রোগ নয়, বরং এটি নানান রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। আপাত দৃশ্যমান কোন কারণ ছাড়াই যদি কারও জ্বর হয়, তখন সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কারণ সেটা গুরুতর কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই জ্বর হলে, কোনো রকম দেরি না করে, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তখন চিকিৎসক অন্যান্য লক্ষণ যাচাই করে, জ্বরের কারণ নির্ধারণ করে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

আজ আমরা জ্বর নিয়ে কিছু জরুরি কথা বলবোঃ
যেমন,
১. জ্বর হলে শরীরের ভেতরে থাকা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীর লড়াই করতে শুরু করে। তাই এসময় শরীরকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে ঘুমের কোন বিকল্প নেই।

২. জ্বরে যখন শরীর গরম হয়, তখন শরীর থেকে প্রচুর পানি, তাপের সাথে বের হয়ে যায়, যদিও সেই পানির বের হওয়াটা চোখে দেখা যায় না। ফলে শরীরে দেখা দেয় পানি স্বল্পতা। তাই জ্বরের সময়, প্রচুর পরিমাণে পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে শরীরের পানি স্বল্পতা রোধ করা যায়। বিশেষ করে লেবুর শরবত, কমলার রস, সুপ, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি পান করা যেতে পারে।

৩. জ্বরে অনেক সময় বমি, ডায়রিয়ার মতো লক্ষণ থাকে, সে ক্ষেত্রে এই ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স করার জন্য মুরগি ও সবজীর সুপ, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি খাওয়ানো ভাল।

৪. জ্বরে অনেকেরই কষা পায়খানা হয়ে থাকে। সম্ভব হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন বা সাপোসিটরি দিয়ে হলেও নিয়মিত পায়খানা করানোর ব্যাবস্থা করাতে হবে, নতুবা রোগীকে পরতে হবে মহাবিপাকে।

৫. জ্বরের সময় ভাজাপোড়া, শক্ত বা কাঁচা খাবার, বাইরের খাবার, দুধ চা, কোমল পানীয় ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এসময় সেদ্ধ ডিম এবং বিভিন্ন সবজি ও মুরগি দিয়ে রান্না করা পাতলা খিচুড়ি খুব সহজেই ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে দুর্বলতা দূর করে।

৬. অনেকেই জ্বর হলে, নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কিনে খেতে শুরু করেন। জ্বরের প্রথমদিকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কোন ক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
কারণ, অনেকের হয়তো ওই অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয় না। কয়েকদিন পর জ্বর এমনিতেই কমে যায়। আবার ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজেও লাগে না। কিন্তু নিজে নিজে নিয়ম না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হলে, শরীরে সেটার প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসক এ ধরনের ওষুধ দিলেও সেটা আর কাজ করে না।

৭. বাচ্চাদের এসিডিটি কম হয়, তাই একদম সম্ভব না হলে, খালিপেটে জ্বরের ওষুধ দেয়া যেতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে, ভরপেটে কিংবা গ্যাসের ওষুধ সহযোগে খাওয়ানো।

৮. আমরা অনেকেই জ্বর হলে শুধু মাথায় পানি দেই বা জ্বল পট্টি দেই। এতে করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সারা শরীরের মধ্যে মাথা খুব ছোট একটি অংশ। ফলে শুধু মাথায় পানি দিলে উপকার পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে ভালো হবে, শরীরের সব জায়গা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে, ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দেয়া কিংবা আরও ভাল হয়, যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করা যায়। এক্ষেত্রে পানি যেন বরফ ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডা কিংবা গরম না হয়। গোসলের পানির তাপমাত্রা অবশ্যই সাধারন রুম টেম্পারেচারের হতে হবে।

৯. অনেকের ধারণা, জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। এটি ভুল ধারণা। জ্বর হলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি শরীর অনেকটা সচল হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা ঠিক হবে না।

১০. জ্বর শুরু হওয়ার পরের দিনই জ্বর কেনো কমছে না, সেটা ভেবে আমরা অস্থির হয়ে যাই। দ্রুত জ্বর থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ দ্বিগুণ পরিমাণে কিংবা একইসঙ্গে দুই ধরনের ওষুধ সেবন করে ফেলি। আর তখনই তা হতে পারে জ্বরের থেকেও বিপজ্জনক অবস্থা।

১১. অনেক সময় জ্বরের কারণ রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না। যেমন বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এলে, ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর থাকলে, সেটা কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায়। এরকম জ্বরে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু জ্বরের সাথে সাথে যদি কিছু আলাদা উপসর্গ দেখা দেয়, তখন দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে বা অত্যধিক মাত্রায় জ্বর হলে কিংবা তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বমি, শুধু রাতে জ্বর আসা, শরীরে র‍্যাশ বের হওয়া, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

১২. অনেক সময়ই আমাদের জ্বর জ্বর ভাব লাগে কিন্তু থার্মোমিটারে মাপলে জ্বর আসে না। এই জ্বর জ্বর ভাব নানা কারণে হতে পারে। এ ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করে দেখেন, অন্য কোন রোগ আছে কিনা এবং সেভাবে চিকিৎসাও দেয়া হয়ে থাকে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment