সিদ্ধেশ্বরী লেনের নিৎসে

অস্তিত্ববাদী জাহিদের পরাবাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো: পর্ব ৬

সিদ্ধেশ্বরী লেনের মনোয়ারা ক্লিনিকে গম্ভীর মুখে জন্ম নিলো এক শিশু। বাচ্চারা জন্মানোর পর কেঁদে ওঠে, কিন্তু সে কাঁদলো না। আফতাব সাহেবের ভ্রু জোড়া অনেকটা সময় ধরে ভীষণভাবে কুঁচকে রইলো। ডিউটি ডাক্তার তখন দৌড়ে এলো, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালো – শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ আছে, বাচ্চারা জন্মানোর পর কেঁদে ওঠে ঠিকই, কিন্তু না কাঁদা অস্বাভাবিক কিছু না। আফতাব আহমেদ হাফ ছাড়লেন, স্ত্রী হালিমা খাতুনের সাথে পরামর্শ করে ছেলের নাম রাখলেন জাহিদ।

ক্লাস থ্রিতে থাকতে একদিন খাবার টেবিলে বাবার কাছে সে জানতে চাইলো মানুষ বানর থেকে এসেছে কিনা।    

“বাবা, সায়েন্স ক্লাসে আজকে বাশার স্যার বলেছে, মানুষ বানরের বংশধর। সত্যিই কি মানুষ বানর থেকে এসেছে?” – নিরীহ বালক বলে।

“সব মানুষ না,” – কিছুক্ষন ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন আফতাব সাহেব – “অল্প কিছু মানুষ আছে যারা বানরের বংশ, যেমন তোমার সায়েন্স টিচার।”

পরদিনই আফতাব সাহেব ছেলেকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে আনলেন, সেকুলার স্কুলে পড়িয়ে ছেলের দুনিয়া আর আখিরাত দুইটাই নষ্টের কোন সুযোগ তিনি নিতে চাইলেন না। পরের সপ্তাহে জাহিদের জায়গা হলো মারকাজুল ইসলাম মাদ্রাসায়।

মাদ্রাসায় গিয়ে কিছু অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করেছিল কিশোর ছেলে জাহিদ।  শার্ট-ইন করাকে সেখানে ‘নাসারা’-দের অনুসরণ করা ভাবা হয় – আর কে না জানে, আদমসন্তান  যে সম্প্রদায়কে অনুসরণ করে তার হাশর হবে সেই সম্প্রদায়ের সাথেই। আরেকবার টুপি ছাড়া নামাজ পড়ার পর ক্লাস টেনের মোবারক ভাই তাকে ডেকে একটা থাপ্পড় কষিয়ে দিয়ে বলল – টুপি ছাড়া নামাজ পড়লে সেই নামাজ হয় না। জাহিদকে পুরো জোহর আবার পড়তে হলো, সুন্নত সহ।

কিশোর জাহিদ একসময় বুঝতে পারলো, এসব নিয়ে কথা বললে তার বিপদ বাড়বে বই কমবে না। তখন সে লুকিয়ে লুকিয়ে বিধর্মীদের বই পড়তে শুরু করলো – দেখা যাক, অন্য ধর্মগুলো কিরকম, তাদের ধর্মেও কখনো কখনো অন্যায় করা বৈধ আছে কিনা, এসব। আর সেগুলো ঘটতে গিয়েই সে জানতে পারলো – একদল লোক আছে, যারা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না, এমনকি তারা খোদাকেই মানে না। এরকম কিছু যে থাকতে পারে, সেটা ছিল জাহিদের চিন্তার বাইরে – কিন্তু বিষয়টা তাকে কৌতূহলী করে তুললো।

আলিম পাশ করার আগে থেকেই ইন্টারনেটে ব্লগ লেখা শুরু করলো “সিদ্ধেশ্বরী লেনের নিৎসে” নাম নিয়ে।  তার লেখার মূল বিষয় ছিল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার নানা অসঙ্গতি। শুধু সেটাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে একটা কথা ছিল – আনুষ্ঠানিক ধর্মগুলোর সূত্র ধরে সে এমনকি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েও, সৃষ্টি পরিচালনায় তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করা শুরু করলো।     

শুরু হলো অতিলৌকিক অভিজ্ঞতার পথে একজন নাস্তিক জাহিদের অদ্ভুত এক অভিযাত্রা। 

      

Leave a comment