আপনার কি দিন দিন ওজন বেড়েই চলছে ? সাথে কি পাল্লা দিয়ে ভুঁড়িও বেড়ে চলছে?জেনে নিন কি করবেন…।

………………

বয়স ৪০ এর পর, আমরা চাই বা না চাই, আমাদের অনেকেরই ওজন বাড়তে থাকে। কারো আবার ওজন ঠিক থাকলেও, ভুঁড়ি ঠিকই বাড়তে থাকে। এ অবস্থায়, আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না যে, কি করব। যে যা বলে তাই খেতে থাকি বা নানান জাদুকরী উপায় খুঁজতেও থাকি। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হয় না। হতাশা নেমে আসে আমাদের জীবনে।

এই সমস্যার ক্ষেত্রে আপনাকে, সায়েন্সের উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। কেবলমাত্র একজন চিকিৎসকই আপনার শরীর সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখেন। ঠিক কি কারণে, কোন বয়সে, কিসের প্রেক্ষিতে আপনার ওজন বেড়ে চলছে, তা একজন চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে দিতে পরেন, সাথে দিতে পরেন সমাধানও। তাই ওজন কমানোর জন্য নানান ম্যাজিকেল সমাধানে না গিয়ে, বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে সমাধান খুঁজুন। এতে হয়তো আপনার একটু বেশি সময় লাগবে কিন্তু সেটা হবে আপনার স্থায়ী এবং কার্যকরী সমাধান।

চিকিৎসকরা বলে থাকেন, যে কোনও খাবার যতই স্বাস্থ্যকর হোক না কেন, অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তার কিছুটা প্রভাব পড়বেই। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস ও শারীরিক পরিশ্রম না করে অলস সময় পার করার মধ্যদিয়ে শরীরের ওজন এবং পেটের চর্বি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত।

একটু সতর্ক হলেই চর্বি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন,

১। খাবার খেতে হবে পরিমাণে কম করে। প্রতিবেলাতেই পেটের অর্ধেকটা ভরে খাবার খাবেন। এতে আপনার stomach এর ক্যাপাসিটি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসবে। এভাবে একটানা ৩/৪ মাস চলার পর দেখতে পাবেন যে, আপনার stomach এর ক্যাপাসিটি এমন পর্যায়ে চলে আসছে যে, আপনি চাইলেও বেশি বেশি খেতে পারবেন না। আমাদের stomach একটি বেলুনের মতো। ওকে খাবার দিয়ে যত ফুলাবেন, সেটা ততই ফুলতে থাকবে। আপনি যদি সব সময় পেট টাপুর টুপুর করে খান, তবে আপনার stomach সব সময়ই বেশি বেশি খাবার চাইবে। আর এজন্য খাওয়া কমানো বা ওজন কমানোর জন্য stomach এর চাহিদা টা কমিয়ে নেয়াটা জরুরি।
তাই চেষ্টা করুন, পেট কিছুটা খালি থাকতেই খাবার টেবিল থেকে উঠে পরতে।

২। খিধা না লাগলে কখনই নিজ থেকে খাবার খাবেন না। খিধা শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শরীরকে সুযোগ দিন খিধা লাগানোর। তা না হলে বাড়তি খাবার শরীরে জমতে থাকবে। তাই প্রয়োজন ছাড়া কখনই খাবার খাবেন না। কেবলমাত্র পানি পান করতে পারেন যেকোনো সময়।

৩। সারাদিন প্রচুর পানি ( দুই/ আড়াই লিটার) পান করতে হবে। কেননা পানি আপনার শরীরের পরিপাক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর জিনিস বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে ওজন বাড়তে পারে না।

৪। সাধারণত, দুপুরে ভারী খাবার খান এবং রাতে হালকা খাবার খান। যেহেতু সারাদিন আপনি নানা কাজে ব্যাস্ত থাকে, তাই দুপুরে ভারী খাবার খেলেও তা খরচ হয়ে যাবে। আর দেখা যায় যে, রাতে আমাদের তেমন কোন কাজ থাকেনা, তাই রাতে যদি ভারী খাবার খাওয়া হয়, তাহলে সেটা খুব সহজেই ওজন বাড়াতে পারে। একবেলা যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন অন্য বেলায় না খেতে কিংবা হালকা কিছু খেতে। এতে শরীরে বাড়তি মেদ জমবে না।
দুপুরের খাবারে ভাত, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, লেবু ইত্যাদি রাখুন।, আর রাতের খাবভারে রাখুন, সবজি, সালাদ, বাসায় বানানো স্মুথি বা সব্জি-ফলের রস, ডাল, সেদ্ধ ডিম, লো ফ্যাট দুধ ইত্যাদি।
চাইলে খাবার খাওয়ার ১০/১৫ মিনিট আগে ইসবগুলের ভুসি, পানিতে গুলিয়ে সাথে সাথে খেতে পারেন। এতে আপনার পেট অনেকটা ভরে যাবে এবং খাবার খাওয়াও কম হবে।

৫। বাড়তি ওজন কিংবা পেটের চর্বি থেকে রেহাই পেতে হলে চিনি ও চিনি জাতীয় খাবারের সঙ্গে শত্রুতা ছাড়া উপায় নেই। চিনি জাতীয় খাবার শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে পেট ও ঊরুতে।
এক্ষেত্রে আপনি চিনির বিকল্প হিসেবে stavia ব্যাবহার করতে পারেন। চিনির বিকল্প হিসেবে, বর্তমান বিশ্বে এটাকে প্রায় স্বাস্থ্যকর ধরা হয়ে থাকে।

৬। প্রতিদিন চেষ্টা করুন, লো ফ্যাট দুধ পান করতে। দুধের তৈরি সকল খাবারেই লো ফ্যাট দুধ ব্যাবহার করুন।

৭। প্রতিদিন নিয়ম করে, ৪০/৬০ মিনিট একটানা হাঁটা বা ব্যায়াম ছাড়া, আপনার মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনমতেই সম্ভব নয়। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী হাঁটার বা ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। চেষ্টা করুন, ঘরের সব কাজ নিজে নিজে করার। এতে শরীর চালু থাকবে এবং বাড়তি মেদ জমবে না। মনে রাখবেন, আপনি যত বেশি চলা ফেরা করবেন, আপনার শরীর ঠিক ততটাই মেধহীন সুস্থ থাকবে।

৮। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাক সবজী, ডাল, সালাদ, লেবু, টক দই, ইত্যাদি রাখুন। এগুলো আপনার খাদ্যনালীর উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সুস্থ রাখবে। কেননা, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখবে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৯। চেষ্টা করুন, সাদা চিনি, সাদা চাল এবং সাদা আটার রুটি না খেয়ে, বাদামি চিনি, বাদামি চাল এবং বাদামি আটার রুটি খেতে। কারণ, সাদা খাবারগুলোতে পুষ্টি গুন নাই বললেই চলে, যা খুব দ্রুত আপনার ওজন বাড়িয়ে দিবে।

১০। যদি কারো পেটের সমস্যা বা হজমের সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তবে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা, এই সমস্যাগুলো আপনার ওজন বাড়াতে দায়ী।

১১। রান্নায় যতদূর সম্ভব তেলের ব্যাবহার কমিয়ে ফেলুন। রান্নায় চাইলে সূর্যমুখী তেল, ক্যানলা তেল, রাইস ব্রান তেল, অলিভ তেল ব্যাবহার করতে পারেন, কারণ এরা অনেকটা স্বাস্থ্যকর। রান্নায় ডুবোতেলের পরিবর্তে এয়ার ফাইয়ার, বার বি কিউ কিংবা গ্রিল করা খাবার খেতে পারেন। কারণ এগুলোতে তেলের ব্যাবহার খুব কম হয় বলে, এরা স্বাস্থ্যকর। বাইরের বা হোটেলের রান্না, ভাজা পোড়ার পরিবর্তে খাবার ঘরে তৈরি করে খান।

১২। রাতে ৭/৮ ঘণ্টা একটানা ঘুম নিশ্চিত করুন। কারণ, রাতের একটানা ঘুমের মধ্যেই শরীরের হজম এবং শরীরের ভাঙ্গা গড়ার কাজ চলতে থাকে। রাতের ঘুম ঠিকমতো না হলে, আপনার শরীরের হজম এবং ভাঙ্গা গড়ায় বাঁধা পরবে, ফলে ওজন বাড়তেই থাকবে।

১৩। সম্ভব হলে সপ্তাহে ১দিন / ২ দিন রোজা রাখুন বা উপবাস করুন। এতে যে শুধু আপনার ওজনই নিয়ন্ত্রনে থাকবে তা নয়, রোজায় অটোফ্যাগির মাধ্যমে, আপনার শরীরের আবর্জনাও কমতে থাকে, শরীর পাবে এক নবজীবন।

১৪। যদি কারো কোন প্রকার মানসিক সমস্যা বা দুশ্চিন্তা, অশান্তি ইত্যাদি থেকে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মানসিক সমস্যায় শরীরে হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের তারতম্য ঘটে, ফলে ওজনও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাই যেকোনো মানসিক সমস্যাতেই চিকিৎসা প্রয়োজন।

১৫। ওজন বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হল, নানান রকমের হরমোনাল
ইম্ব্যাল্যান্স বা তারতম্য। বিশেষ করে, ইনসুলিন, লেপটিন, থাইরয়েড, ইসট্রজেন, এনড্রজেন ইত্যাদি হরমোনাল সমস্যা। তাই যদি কারো অনিয়ন্ত্রিত ওজন থাকে, তবে তার উচিত হবে অতিদ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment