মন কি মস্তিষ্কের ভেতর শুধুই নিউরোনের অনুরণন?

প্রশ্নগুলো সহজ (পর্ব ৪) 

আপনার কি মনে আছে, কোন বছর ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতেছিল? হ্যা, ১৯৮৬ সালে, মেক্সিকোতে। 

সেই একই সালে ফ্রাঙ্ক জ্যাকসন নামে এক অস্ট্রেলিয়ান দার্শনিক খুব সহজ একটা থট এক্সপেরিমেন্ট প্রস্তাব করেছিলেন ‘হোয়াট ম্যারি ডিডন্ট নৌ’ – অর্থাৎ ‘ম্যারি কোন জিনিসটা জানতো না’ – নামে তার এক আর্টিকেলে। এই থট এক্সপেরিমেন্টটি ‘নলেজ আর্গুমেন্ট’ নামেও পরিচিত।  

ম্যারি একজন বিজ্ঞানী। সে কোনোদিন রং দেখেনি। জন্মের পর থেকে তাকে বন্দি রাখা হয়েছে একটা রংবিহীন ঘরে। তবে সে একটা সাদা-কালো স্ক্রিন দিয়ে অন্য সব মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখেছে আর লেখাপড়াও চালিয়ে গেছে।

সাদা ও কালো ছাড়া অন্য কোনো রং না দেখলেও ম্যারি রং সম্পর্কে সবকিছু জানে – রঙের উৎপত্তি, বিভিন্ন রঙের কম্পাঙ্ক, সবকিছু। মোটকথা, রং সম্পর্কে যা যা জ্ঞান দিয়ে জানা সম্ভব, সব সে জানে। শুধু নিজ চোখে কোন রং সে কোনদিন দেখেনি।

এরপর একসময় এল সেই দিন। ম্যারি-কে প্রথম সেই ঘর থেকে বের করা হলো – সে দেখলো নীল আকাশ, সবুজ ঘাস, আর লাল টমেটো। যদিও সে নীল, সবুজ আর লাল রং সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানে, তবুও কি রং-গুলো নিজ চোখে দেখার পর নতুন কিছু অনুভব করবে না? যদি সে তখন অনুভব করে, রং-গুলো সম্পর্কে তার ভেতর নতুন কোন অনুভূতি এসেছে, যেটা শুধু তথ্য দিয়ে অতীতে সে জানতো না – তাহলে বলতেই হবে, জ্ঞানের উৎস শুধু তথ্য না, জ্ঞানের উৎস অভিজ্ঞতাও বটে।

এর উদাহরণ বাস্তবেও কিন্তু দেখা যায় – সাঁতার সম্পর্কে এক হাজার বই পড়লেও আপনি সাঁতার শিখতে পারবেন না, ক্রিকেট খেলার ওপর লক্ষ-কোটি ভিডিও দেখলেই আপনি সাকিব হয়ে যাবেন না যদি না আপনি বাস্তবে মাঠে নেমে প্রাকটিস করেন।

জ্ঞানের উৎস শুধু তথ্য না, জ্ঞানের উৎস অভিজ্ঞতাও – ইটা যদি সত্য হয়, তার মানে মনের ভেতর একটা অংস নিশ্চয়ই আছে যেটা বস্তুজগতের বাইরের অতিবাস্তব কিছু।

চেতনা সম্পর্কে দুইটা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চিন্তাধারা আছে:

১. চেতনা বস্তু জগৎ থেকে উদ্ভুত।

এটাই সবচেয়ে পরিচিত তত্ত্ব। এই থিওরি বলে, মন বলে এলাকা কিছুই নেই – মন বস্তুভিত্তিক শরীরের একটা বিমূর্ত এক্সটেনশন মাত্র, হার্ড ড্রাইভের ইমার্জেন্ট ফেনোমেনা যেমন সফ্ট ড্রাইভ।

এই চিন্তাধারা ম্যারি-র এক্সপেরিমেন্টকে ভালো করে ব্যাখ্যা করতে পারে না ।     

২. বস্তুজগৎ চেতনা থেকে উদ্ভুত।  

প্রাচীন দার্শনিক বার্কলে থেকে শুরু করে আধুনিক নিউরোবিজ্ঞানী ডোনাল্ড হফম্যান পর্যন্ত অনেকেই এধরণের মতবাদে বিশ্বাস করেন। ডোনাল্ড তো এই মতবাদের পক্ষে একটা গাণিতিক মডেল পর্যন্ত দাঁড় করিয়েছেন। এই চিন্তাধারা ম্যারি-র এক্সপেরিমেন্টের ব্যাখ্যাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যায়।  

আমরা একটা তৃতীয় সম্ভাবনার কথা কি বলতে পারি? অর্থাৎ:

এমন কি হতে পারে, কনশাসনেস বা চেতনা একটি ফিফ্থ ফোর্স বা পঞ্চম ধরণের বল?

ইউনিভার্সের প্রধান চারটা ফোর্স হলো হলো – ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক, গ্রাভিটি, দুর্বল নিউক্লিয়ার, শক্তিশালী নিউক্লিয়ার। হতে পারে কনশাসনেস, যা অবসার্ভার হিসেবে একজন মানুষের ভেতর থাকে – সেটা পঞ্চম ফোর্স, যা মানুষ কখনো ব্যাখ্যা করতে শেখে নি।

এই ধারণাটা কিন্তু ম্যারি-র এক্সপেরিমেন্টকে হয়তো কিছুটা ব্যাখ্যা করতে পারে।

Leave a comment