………………
ট্রাইগ্লিসারাইড, কি এবং কিভাবে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখবো…।।
…………
লিপিড প্রোফাইল রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে, আমরা আমাদের রক্তে বিদ্যমান চর্বির পরিমাণ জানতে পারি। আর এই চর্বি গুলো হল কোলেস্টেরল এবং
ট্রাইগ্লিসারাইড।
শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল স্বাভাবিক পরিমাণ থাকলে শরীরের জন্য কোন ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু যদি ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল দুটোই অনেকটা বেশি হয়ে যায়, তাহলে দুটোই আলাদাভাবে হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক হলেও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি মাত্রায় থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি হতে পারে। অনেকেই আবার কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডকে এক করে ফেলেন কিংবা তালগোল করে ফেলেন।
তাই, আজ আমরা ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ে কিছু কথা বলব…
ট্রাইগ্লিসারাইড শরীরের রক্তে বিদ্যমান, এক ধরনের চর্বি এবং একজন ব্যক্তি যে খাবার খায় তা থেকে এটা আসে। ট্রাইগ্লিসারাইডের মূল কাজ শরীরকে শক্তি জোগানো এবং পরবর্তী সময়ের জন্য অব্যবহৃত শক্তি জমিয়ে রাখা।
চলুন জেনে নেই, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে কোন কোন খাবারেঃ
১। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ
আপনার খাদ্যের অতিরিক্ত চিনি, ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হবে যা আপনার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। এর ফলে হৃদরোগ রোগসহ অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।
চিনিযুক্ত বা অ্যাডেড সুগার বিশিষ্ট খাদ্য পরিত্যাগের মাধ্যমে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বহুলাংশে কমানো যায়।
২। অতিরিক্ত ভাত, রুটি, পাস্তা খাওয়া কমাতে হবেঃ
খাদ্যে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যেমন, ভাত, রুটি পাস্তা ইত্যাদি বেশি খেলে, তা ট্রাইগ্লিসারাইডে রুপান্তর হয়ে যায় এবং পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাট হিসাবে জমতে শুরু করে। তাই কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের সাথে, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যাওয়ার একটি যোগসুত্র আছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
৩। অধিক ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাদ্য খাওয়াঃ
সাধারণত ফলমুল, শাক-সবজি এবং পুরো শষ্য দানা বা whole grain জাতীয় খাদ্য, বাদাম, সিরিয়াল এবং লিগিউম জাতীয় খাদ্য ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবারের ভাল উৎস। আপনি যদি খাদ্যের সাথে, অধিক ফাইবার বা আঁশ খেতে পারেন, তাহলে এই ফাইবার বা আঁশ আপনার খাদ্যনালী থেকে চিনি ও ফ্যাট শোষনের হার কমিয়ে দিবে। যার ফলে, রক্তে চিনি বা সুগার অধিক হওয়ার সুযোগ থাকেনা। ফলে, ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দুর হয়ে যায়।
কাজেই, অধিক ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাদ্য খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যাবে।
৪। নিয়মিত ১ ঘণ্টা জোরে জোরে হাঁটা বা ব্যায়াম করাঃ
দ্রুত হাঁটা বা জোরে জোরে হাঁটা, ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে খুবই কার্যকরী। জোরে হাঁটার বা ব্যায়ামের ফলে ক্যালরি বার্ন হয়, ফলে তা আর ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হওয়ার সুযোগ থাকে না। জোরে জোরে হাঁটার ফলে, শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায়। আর, এই ভাল কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমান কমাতে সহায়তা করে। জোরে হাঁটা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যায়াম যেমন, দৌড়ানো, জগিং, সাইক্লিং, সাতার কাটা ইত্যাদিও করা যেতে পারে।
৫। চর্বিযুক্ত মাছ বা সামুদ্রিক মাছ খাওয়াঃ
সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার চর্বি বিশিষ্ট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। মাছের তেল, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোসহ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর কারণ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা এই ধরণের মাছে বিদ্যমান থাকে। এই মাছ গুলো হল, স্যালমন (salmon), হ্যারিং (herring), সারডিনস (sardines), টুনা (tuna), ম্যাকারেল (mackerel) ইত্যাদি।
৬। ট্রান্স ফ্যাট বাদ দিতে হবেঃ
ট্রান্স ফ্যাট হল এমন ধরণের ফ্যাট, যা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে যোগ করা হয়, যাতে খাদ্যের shelf life বৃদ্ধি পায়। এই ট্রান্স ফ্যাট সাধারনত বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত ভাজা জাতীয় খাদ্যে এবং যে সব খাদ্য hydrogenated oils দিয়ে তৈরি করা হয়, ঐসব খাদ্যে সচারাচরভাবে বেশী পাওয়া যায়। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্য গ্রহণের দ্বারা আপনার রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হবে। এজন্য, খাদ্য তালিকা থেকে এটিকে বর্জন করা উচিত।
ট্রান্স ফ্যাটের কিছু উদাহরণঃ
. বেকড খাবার – কেক, ডোনাট, মাফিন, পাই ইত্যাদি।
. ডুবো তেলে, অনেকক্ষণ ধরে ভাজা খাবার।
. একই তেলে বারে বারে ভাঁজা বা রান্না করা খাবার।
. প্যাকেট চিপস বা প্যাকেটে বিক্রি করা যেকোনো ফ্রাই খাবার।
. হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা দোকানের তৈরি প্রায় সকল খাবার।
৭। স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাদ দিতে হবেঃ
এই ফ্যাট রুম টেম্পারেচারে শক্ত হয়ে যায়। এই ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো প্রানিজ খাদ্য। যেমন, চিংড়ি মাছ, গরু/ খাসি/ ভেড়ার মাংস, ডিম (কুসুম), দুধের সর ইত্যাদি। এক কথায়, প্রানী থেকে যে ফ্যাট আসে সেটাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ফ্যাট আমাদের রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
৮। আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেতে হবেঃ
এই ফ্যাট রুম টেম্পারেচারে তরল অবস্থায় থাকে। এই ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো, সামুদ্রিক মাছ, বীজ, বিচি, বাদাম এবং সবজি। এক কোথায়, উদ্ভিদ থেকে আসা সকল প্রকার তেলই স্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমান হয়েছে যে, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমায়।
কোথায় থাকেঃ
- বাদাম (চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি)
- ভেজিটেবেল তেল (বাদাম তেল, অলিভ তেল, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল, সান ফ্লাওয়ার তেল ইত্যাদি)
- পিনাট বাটার
- বীচি – (সূর্যমুখীর বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি ইত্যাদি)
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
