আপনি কি আসলেই জানেন, আপনি পুরুষ নাকি নারী? 

প্রশ্নগুলো সহজ (পর্ব ৫) 

আগেকার জমানায় এটা কোন প্রশ্ন ছিল না, কারণ শরীর দেখেই সমাজ কিংবা ডাক্তার নির্ধারণ করে দিতো কে পুরুষ আর কে নারী। 

কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। সভ্যতার চরম বিকাশের পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ ‘জেন্ডার’ কিংবা ‘লিঙ্গ’-এর নতুন সংজ্ঞা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা সমাজে এই নতুন সংজ্ঞা অনেক বাহবা পেয়েছে।

আমাদের মতো পূর্বাঞ্চলীয় তথাকথিত পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীগুলো অবশ্য এখনো এই নতুন সংজ্ঞা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার যখন ক্লাস সেভেনের বইয়ের  মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানের এই নতুন আবিষ্কারকে তুলে ধরার উদ্যোগ নিলো, তখন ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এর এমন চরম ধিক্কার জানালো যে মনে হলো বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা হয়তো তারা চায় না। 

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা দেখবো, লিঙ্গের এই ‘বিজ্ঞানভিত্তিক’ সংজ্ঞা আসলে কি বলে।

লিঙ্গের নতুন এই সংজ্ঞা অনুযায়ী – শরীর দিয়ে মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ করা বেঠিক হবে, কারণ মানুষ যতটা না শারীরিক তার চেয়ে বেশি মানসিক। মানুষকে সভ্য বলা যায় তার মনের কারণে, শরীরের কারণে না। সুতরাং, মনের বিচার দিয়েই নির্ধারণ করতে হবে কে পুরুষ আর কে নারী, অর্থাৎ:

– কারো যদি মনে হয় সে পুরুষ, তাহলে তার শারীরিকভাবে সে নারী হলেও সে আসলে আস্ত একটা পুরুষই;     

– কারো যদি মনে হয় সে নারী, তাহলে তার শারীরিকভাবে সে পুরুষ হলেও সে আসলে পুরোই একটা নারী;

– উপরের দুই পক্ষের কারো যদি সময়ের সাথে মত পরিবর্তন হয়, তাহলে সে এক লিঙ্গ থেকে আরেক লিঙ্গে লাফ দিয়ে যেতে পারবে, এটা কোন ব্যাপার না।

(দ্রষ্টব্যঃ অনিবার্য কারণবশত যে প্রশ্নের তদন্ত করা যায় নি – নারীর যদি সংজ্ঞাই না থাকে, তাহলে “নারী মনে হওয়া” বলতে কি বুঝায়।)

লিঙ্গের এই নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মানুষ মূলত চার (৪) শ্রেণীতে বিভক্ত হবে:

১. “কঠোর পুরুষ” – হোমোসেপিয়েন্স-এর এই উপ-প্রজাতিটি শরীরে পুরুষ, মনেও পুরুষ;

২. “কোমল পুরুষ” – এই উপপ্রজাতির হোমোসেপিয়েন্সগুলো শরীরে পুরুষ, কিন্তু মনে নারী;

৩. “কোমল নারী” – হোমোসেপিয়েন্স-এর এই উপ-প্রজাতিটি শরীরে নারী, মনেও নারী;

৪. “কঠোর নারী” – এই উপপ্রজাতির হোমোসেপিয়েন্সগুলো শরীরে নারী, কিন্তু মনে পুরুষ।

(দ্রষ্টব্যঃ আলোচনা সহজ রাখার স্বার্থে আমি জেন্ডার ফ্লুইড-দের এখানে আনি নি, যদিও তাদের প্রতি আমি সমানভাবে চরম শ্রদ্ধাশীল।)  

লিঙ্গের এই নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, যৌন সম্পর্কও মূলত তিন (৩) শ্রেণীতে বিভক্ত হবে:

১. পুরুষ ও নারী (ইংরেজীতে ‘স্ট্রেট’) : এই সম্পর্ক ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সমর্থন করে;

২. কঠোর পুরুষ ও কোমল পুরুষ (ইংরেজীতে ‘গে’): এই সম্পর্ক ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সমর্থন করে না, কিন্তু উগ্রবাদী প্রগতিশীলরা সমর্থন করে;

৩. কোমল নারী ও কঠোর নারী (ইংরেজীতে ‘লেসবিয়ান’): এই সম্পর্ক ধর্মীয় উগ্রবাদীরা মুখে সমর্থন করে না, কিন্তু উগ্রবাদী প্রগতিশীলরা সমর্থন করে।

(দ্রষ্টব্যঃ এই আর্টিকেল লেখার সময় পর্যন্ত লেসবিয়ান নীল ছবির বিষয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয় নি, দুঃখিত।)

ধর্মীয় উগ্রবাদী আর প্রগতিশীল উগ্রবাদীদের দ্বন্দ্ব যখন বিশ্বব্যাপী চরমে উঠেছে, তখন আমার এই আর্টিকেল বিবাহ কিংবা যৌন-সম্পর্কের জন্য এমন একটা সমাধান প্রস্তাব করতে যাচ্ছে, যেটা (আমার ধারণা) দুই পক্ষের এজেন্ডাকেই সন্তুষ্ট করবে আর যৌন সম্পর্কের ধরণ নির্ধারণে মানবসভ্যতায় একটা যুগান্তকারী প্রভাব রাখবে।

বিয়ে কিংবা যৌন-সম্পর্ক হবে নিচের ছক অনুযায়ী:

১. কঠোর পুরুষ ও কোমল নারী;

২. কঠোর নারী ও কোমল পুরুষ।

প্রশ্নগুলো শেষপর্যন্ত সহজই:

– আপনি আসলেও জানেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী আপনার লিঙ্গ আসলে কি?

– কোন ধরণের বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে আপনার পছন্দ? 

Leave a comment