ডায়াবেটিস সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন ??
…………………..
ডায়াবেটিস কথাটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক, ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের যুক্তি তর্কের শেষ নেই। ডায়াবেটিস কি, কেন হয় বা হলে করনীয় কি, তা যদি জেনে রাখতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস রোগ থাকা স্বত্বেও আপনি থাকবেন অনেকটাই সুস্থ।
খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, ডায়াবেটিস হল, আপনার শরীরের এমন একটি অবস্থা, যেখানে আপনার রক্তে সুগার বা গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে, সবসময়ই বেশি থাকবে। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে, সবসময়ই রক্তের সুগার বা গ্লুকোজের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট লিমিটের মধ্যে থাকে। কোন কারণে, যদি কারো রক্তের সুগার বা গ্লুকোজ সবসময়ই বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে যে, তিনি সম্ভবত ডায়াবেটিক রোগে ভুগছেন।
আমরা যখন কোন খাবার খাই, তখন আমাদের শরীর সেই খাবারের কার্বো বা শর্করাকে ভেঙে চিনি বা গ্লুকোজে রুপান্তরিত করে। আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নামের এক ধরনের হরমোন নিসৃত হয়, সেটা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়, চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। আমাদের শরীর এই চিনিকে দেহের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে ব্যাবহার করে। কোন কারণে, শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এবং এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে। রক্তে প্রয়োজনের তুলনায়, জমে থাকা বেশি চিনিগুলো, তখন পুরো দেহে নানান সমস্যা তৈরি করে, দেখা দেয় নানান জটিলতা আর বেড়ে যায় দুর্ভোগ।
ডায়াবেটিস কয়েক ধরনের হতে পারে। মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেকোনো সময় ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার, টাইপ-১ এবং টাইপ-২।
টাইপ-১:
টাইপ-১ এ আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ থেকে ২৫ বছরের নীচে হয়ে থাকে।এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। তাদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তারা মারা যেতে পারেন। তাই টাইপ-১ হলে, ইনসুলিন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তার চিকিৎসা করা যায় না।
টাইপ- ২ঃ
টাইপ-২ সাধারণত ৩০ বছরেরে পরে দেখা দেয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে, দেহে ইনসুলিন তৈরি হলেও, তা পর্যাপ্ত পরিমানে তৈরি হয় না, অথবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও, দেহের কোষগুলো সেই ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল থাকে না। একারণে আপনার দেহ সুগারকে ভেঙে এভাবে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সাথে প্রায়ই নিচের ব্যাপারগুলোর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়:
. অতিরিক্ত ওজন।
. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
. পরিবারের কোন সদস্য যেমন বাবা, মা, ভাই বা বোনের টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকা।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, লক্ষণ দেখে সহজেই সনাক্ত করা যায়, যেমন, অল্প বয়সে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়া কিংবা ওজন কমতে থাকা। সমস্যা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়। তারা বুঝতেই পারেন না, যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। বারবার প্রস্রাব করা, খাবার খেয়েও ক্ষুধা না মেটা, ক্লান্ত লাগা, ঝিম ধরা ভাব, কোথাও কেটে গেলে বা ঘা হলে সহজে সেটা না শুকানো ইত্যাদি কিছু লক্ষণ থাকে। যেহেতু তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান না, তাই তিন-চার বছরে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। ততদিনে দেখা যায়, চোখে, হার্টে, লিভারে, কিডনি, ব্রেইনে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নানা জটিলতার জন্ম নেয়।
ডায়াবেটিসের প্রথম অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ না থাকায় কেউ ডাক্তারের কাছে যান না। সেজন্য প্রথমে এ রোগ ধরা পড়ে না। প্রায়ই দেখা যায়, ভিন্ন ধরনের কোনো অসুখ বা সমস্যার জন্য যখন রক্ত কিংবা প্রস্রাব পরীক্ষা করানো হয় তখন এই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
তবে, প্রথম দিকে এ রোগ আছে কিনা, জানতে পারলে খুবই ভালো হয়। সেজন্য জনসচেতনার বিকল্প নেই। যদি জনগণকে ডায়াবেটিসের রক্ত পরীক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়, তাহলে মানুষ আগ্রহের সাথে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাবে। এটার পরীক্ষা করা খুবই সহজ। যেকোনো হাসপাতালে বা ফার্মেসিতে আপনি এই ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করে জেনে নিতে পারবেন।
সচেতনার জন্য জনগণকে আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি। যাদের ফ্যামিলিতে ডায়াবেটিসের কোন ইতিহাস নেই বা হয়নি, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কম। তাদের ক্ষেত্রে ৩৫ /৪০ বছরের পর থেকে, শুধু চেকাপ করাই যথেষ্ট। আর যাদের পরিবারে বা নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের পরিবারের সদস্য বা সন্তানের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই তাদের ২৫ বছরের পর থেকে ২/৩ বছর পর পর পরীক্ষা করা দরকার। আর তৃতীয়ত, যাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে, তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো, নিয়মিত ওষুধ সেবন ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে, রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
………………….. চলবে……
