………….
গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস, আমাদের প্রায় সবারই খুব খুব পছন্দের খাবার। আর কোরবানি ঈদ এলে তো কথাই নেই। আমাদের দেশে কোরবানিতে গরুই বেশি জবাই করা হয়। আবার এই সময়টাতে অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মাংস খাওয়া হয়ে থাকে।
যেহেতু গরুর মাংস বেশি স্বাদের তাই খেতে বসলে, স্বাস্থ্যের কথা মাথায়ই থাকে না অনেকের। আবার অতিরিক্ত গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেটাও সবার জানা। কারন, এদের মাংসে যে কোলেস্টেরল থাকে, সেটি বেশি বেড়ে গেলে তা রক্তনালিতে জমে, রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। এতে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল করতে পারে না। যার কারণে স্ট্রোক, কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
তারপরও আশার কথা হলো, গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস খাওয়া যাবে, তবে তার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। এদের মাংস কতোটা নিরাপদ সেটা নির্ভর করবে, আপনি সেটা কিভাবে কাটছেন এবং রান্না করছেন, তার উপর। আসুন দেখে নেই, কিভাবে গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস খেলে, শরিরের জন্য কম ক্ষতিকর হবেঃ
১। বলা হয়ে থাকে, গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হল গরুর পেছনের রানের উপরে ফোলা অংশের মাংস, যেটাকে রাউন্ড বলা হয় এবং পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস যেটাকে সেরলয়েন বলা হয়।
২। মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়।
তাই মাংস রান্নার আগে মাংসের গায়ে লেগে থাকা সব চর্বি, কেটে ছাড়িয়ে নিতে হবে।
৩। চেষ্টা করুন, মাংস ছোট ছোট টুকরো করে কাটার। কারণ মাংসের টুকরো যতো ছোট হবে, ততোই এর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে। এ কারণে কিমা অথবা ব্লেণ্ড করা মাংসে চর্বি সবচেয়ে কম থাকে।
৪। মাংস কাটা শেষে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। এতে পানিতে চর্বির স্তর উঠে আসবে। মাংস কিছুক্ষণ ফুটে ওঠার পর এই পুরো পানিটা ফেলে দিতে হবে। যদিও এতে মাংসে থাকা চর্বির পাশাপাশি ভিটামিনস ও মিনারেলসও বেরিয়ে যায়। এরপর সেই সেদ্ধ মাংস কম তেল দিয়ে রান্না করুন, যতোটুকু না দিলেই না। ঘি, মাখন, ডালডা এমন তেল না দেয়াই ভাল।
৫। আবার মাংসের ঝোল রান্না করলে ঠান্ডা হওয়ার পর উপরে যে হলুদ চর্বির আস্তরণ পড়ে, তা চামচ দিয়ে তুলে ফেলে দিতে পারেন।
৬। মাংসে থাকা ফ্যাট আরও কমাতে ভিনেগার, কাঁচা পেঁপে, লেবুর রস বা টক দই দিয়ে রান্না করতে পারেন।
৭। রান্না মাংস সেদ্ধ করে ফ্রিযে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে, কিছু চর্বি মাংস থেকে বের হয়ে জমাট বাধবে। তখন চর্বি আলাদা করে ফেলুন।
৮। কাঁচা মাংস একটি ঝাঁঝরিতে নিয়ে, একটি ফুটন্ত পানির পাত্রের মুখে বসিয়ে দিন। এতে মাংসের চর্বি গলে গলে নিচের পাত্রে পরে যাবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করুন।
৯। গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস আগুনে ঝলসে খেলে চর্বি অনেকটাই চলে যায়। গ্রিল বা শিক কাবাব, জালি কাবাব পুড়িয়ে খাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে এয়ার ফ্রাইয়ার হতে পারে আপনার একজন উপকারী
বন্ধু। কারন এয়ার ফ্রাইয়ারে, কোন তেলই ব্যবহার করা হয় না। বরং মাংসের বাড়তি তেলও ফ্রাইয়ারের নিচের ট্রেতে জমে আলাদা হয়ে যাবে। তখন বাড়তি তেলটুকু ফেলে দিলেও অনেকটা লাভবান হওয়া যায়।
১০। উচ্চতাপে দীর্ঘ সময় ধরে মাংস রান্না করলে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। তাই অল্প তাপে মাংস রান্না করুন।
১১। মাংস যেন কম খাওয়া হয়, সেজন্য মাংসের সাথে বিভিন্ন সবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া, অালু, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, গাজর, ছোলার ডাল ইত্যাদি মেশাতে পারেন।
১২। মাংসের সাথে অবশ্যই অবশ্যই প্রচুর সালাদ ও লেবু রাখুন।
১৩। এছাড়া মাংসের কাবাব বানানোর সময় কিমার সাথে ডাল, আলু, গাজর বা অন্যান্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করুন। ফলে মাংস কম খাওয়া হবে।
১৪। গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস বেশি তেল মসলা দিয়ে কসিয়ে ভুনা না করাই ভালো। এর চাইতে ঝোল ঝোল করে মাংস রান্না করে, খাবার সময় সেই ঝোল এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
১৫। মগজ, ভুঁড়ি বা ভট, পায়া, নেহারি, হাড়ের মজ্জা ইত্যাদিতে চর্বির মাত্রা অনেক বেশি। তাই এগুলো পরিমানে কম খান বা বাদ দিন।
১৬। মাংস খাওয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা পর থেকে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চাইলে তখন লেবু পানি ও টক দই (লো ফ্যাট, চিনি ছাড়া) খেতে পারেন।
১৭। মাংস খাওয়ার এক/দেড় ঘণ্টা পর হালকা হাঁটাহাঁটি বা চলাফেরা করুন। আর চেষ্টা করবেন যেন মাত্রাতিরিক্ত মাংস খাওয়া না হয়।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…… তিনা শুভ্র ।
