হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী বা যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি বা যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কি কোনোভাবেই ঈদের দিনে একটু কোরবানির মাংস খেতে পারবেন না?

এই প্রশ্নটি, প্রায় প্রতিটি কোরবানি ঈদে, আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে। বিষয়টি খুব আবেগময়। পরিবারের লোকজনও চায়, অসুস্থ ব্যক্তিরা অন্তত এক দিন, এই কোরবানির ঈদে যেন একটু মাংস খাক। বাসায় যদি কোনো হৃদরোগের, ডায়াবেটিসের, হাই প্রেশারের বা হাই কোলেস্টেরলের রোগী থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চেষ্টা করুন, এসব রুগীদের জন্য গরু, খাসি, ভেড়ার মাংসের পরিবর্তে, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংসের বিভিন্ন আইটেম রান্না করতে, যেন তারা মন প্রাণ ভরে তৃপ্তি করে খেতে পারেন। ।
যেহেতু কোরবানি ঈদ, সেহেতু অল্প স্বল্প মাংস তারা খেতেই পারেন। এক্ষেত্রে, এসব রোগীদের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো হলঃ

১। দৈনিক ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রামের বেশি খাবেন না, আয়তনের দিক দিয়ে তা একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বাণ্ডিলের সমান।

২। মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়।
তাই মাংস রান্নার আগে মাংসের গায়ে লেগে থাকা সব চর্বি, কেটে ছাড়িয়ে নিতে হবে।

৩। মগজ, ভুঁড়ি বা ভট, পায়া, নেহারি, হাড়ের মজ্জা ইত্যাদিতে চর্বির মাত্রা অনেক বেশি। তাই এগুলো পরিমানে কম খান বা বাদ দিন।

৪। চেষ্টা করুন, মাংস ছোট ছোট টুকরো করে কাটার। কারণ মাংসের টুকরো যতো ছোট হবে, ততোই এর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে। এ কারণে কিমা অথবা ব্লেণ্ড করা মাংসে চর্বি সবচেয়ে কম থাকে।

৫। মাংস কাটা শেষে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। এতে পানিতে চর্বির স্তর উঠে আসবে। মাংস কিছুক্ষণ ফুটে ওঠার পর এই পুরো পানিটা ফেলে দিতে হবে। যদিও এতে মাংসে থাকা চর্বির পাশাপাশি ভিটামিনস ও মিনারেলসও বেরিয়ে যায়। এরপর সেই সেদ্ধ মাংস কম তেল দিয়ে রান্না করুন, যতোটুকু না দিলেই না। ঘি, মাখন, ডালডা এমন তেল না দেয়াই ভাল।

৬। রান্না মাংস সেদ্ধ করে ফ্রিযে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে, কিছু চর্বি মাংস থেকে বের হয়ে জমাট বাধবে। তখন চর্বি আলাদা করে ফেলুন।

৭। কাঁচা মাংস একটি ঝাঁঝরিতে নিয়ে, একটি ফুটন্ত পানির পাত্রের মুখে বসিয়ে দিন। এতে মাংসের চর্বি গলে গলে নিচের পাত্রে পরে যাবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করুন।

৮। গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস বেশি তেল মসলা দিয়ে কসিয়ে ভুনা না করাই ভালো। এর চাইতে ঝোল ঝোল করে মাংস রান্না করে, খাবার সময় সেই ঝোল এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

৯। গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস আগুনে ঝলসে খেলে চর্বি অনেকটাই চলে যায়। গ্রিল বা শিক কাবাব, জালি কাবাব পুড়িয়ে খাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে এয়ার ফ্রাইয়ার হতে পারে আপনার একজন উপকারী বন্ধু। কারন এয়ার ফ্রাইয়ারে, কোন তেলই ব্যবহার করা হয় না। বরং মাংসের বাড়তি তেলও ফ্রাইয়ারের নিচের ট্রেতে জমে আলাদা হয়ে যাবে। তখন বাড়তি তেলটুকু ফেলে দিলেও অনেকটা লাভবান হওয়া যায়।

১০। মাংস যেন কম খাওয়া হয়, সেজন্য মাংসের সাথে বিভিন্ন সবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া, অালু, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, গাজর, ছোলার ডাল ইত্যাদি মেশাতে পারেন।

১১। মাংসের সাথে অবশ্যই অবশ্যই প্রচুর সালাদ ও লেবু রাখুন।

১২ । মাংস খাওয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা পর থেকে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চাইলে তখন লেবু পানি, টক দই (লো ফ্যাট, চিনি ছাড়া) ও বোরহানি খেতে পারেন।

১৩। মাংস খাওয়ার এক/দেড় ঘণ্টা পর হালকা হাঁটাহাঁটি বা চলাফেরা করুন। আর চেষ্টা করবেন যেন মাত্রাতিরিক্ত মাংস খাওয়া না হয়।

রোগাক্রান্ত অবস্থায় রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে, তার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী, খাবারের ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের পরামর্শ বাধ্যতামূলক।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment