চিনি যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তা প্রায় সবারই জানা। হয়তো আমরা চেষ্টা করি প্রতিদিন কম করে চিনি খাওয়ার। তারপরও মাঝেমধ্যে দাওয়াতে গেলে, বন্ধুদের আড্ডায়, বেড়াতে গেলে, মেহমান আসলে, কিংবা টি ভি দেখতে দেখতে, আমরা না চাইতেই মিষ্টি খাবার বেশি খেয়ে ফেলি। খাওয়ার পর আমাদের আফসোসের আর শেষ থাকে না। এক্ষেত্রে নিজেকে দোষারোপ না করে, বরং কিভাবে পরবর্তীতে মিষ্টি কম খাওয়া যাবে সেই চিন্তা করতে থাকুন আর যেটুকু খেয়েই ফেলেছেন, সেটুকু কিভাবে শরীরের জন্য কম ক্ষতিকর হয়, সে উপায় খুঁজতে থাকুন।
একবারে বেশি মিষ্টি খাবার যদি খেয়েই ফেলেন, তাহলে কিছু উপায়ে রক্তের চিনির পরিমাণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা উচিত। জেনে নিন কিভাবেঃ
১। বেশি চিনি খাবার পর, পানি পান করার পরিমাণ আগের তুলনায় অনেকটা বাড়িয়ে দিন। কেননা পর্যাপ্ত পানি পান করলে, কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে বাড়তি চিনি শরীর থেকে বের করে দেয়। আর এজন্যই অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর, প্রচুর পানি বারে বারে পান করতে থাকুন।
এছাড়া, খুব বেশি চিনি খেয়ে ফেললে, সেটা শরীরে গ্লাইকোজেন এবং ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। প্রতি ১ গ্রাম চিনি ভাঙ্গার জন্য শরীরে ৩ গ্রাম পানির ঘাটতি দেখা যায়। এ জন্যই মিষ্টি বা চিনি খাওয়ার পর পানির তেষ্টা পায়। সুতরাং বেশি চিনি খেলে, যাতে শরীরে বাড়তি পানি যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা ক্লান্তি এবং মাথাব্যথার মতো পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
২। লেবু পানি পান করতে পারেন। লেবুর রস, চিনিকে রক্তে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। ফলে চিনি রক্তে বা প্রস্রাবে না গিয়েও মলের সাথে বের হয়ে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তবে যদি কারো কিডনি বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লেবু পানি পান করা উচিত।
৩। আজ চিনি খেয়ে ফেলেছেন, তাই আগামীকালকের খাবারটা যেন স্বাস্থ্যকর হয় সেদিকে নজর রাখুন। খাবারে থাকা উচিত, বেশি করে প্রোটিন, কিছু পরিমাণ ফ্যাট এবং একদম কম পরিমাণে শর্করা।
বেশি চিনি খাওয়ার পর লো কার্ব ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। এটা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার পরে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। লো কার্ব ডায়েট মানে হল, এখানে শর্করা এবং চিনি খুবই কম থাকবে আর থাকবে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ডিম, মুরগির মাংসের মতো স্বাস্থ্যকর প্রোটিন, ডাল, বিভিন্ন রকম বাদাম, গোটা শস্য এবং ফল। কেননা এগুলো হজম করতে বেশ সময় লাগে, আর
দীর্ঘ হজম প্রক্রিয়ায় রক্তের চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক হতে থাকবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলার সম্ভাবনাও থাকবে না।
৪। বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর, আপনার ক্লান্তিতে শুয়ে-বসে থাকতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু সেটা করা যাবে না। বরং শরীরচর্চা আপনার বেশি কাজে আসবে। এতে রক্তের বাড়তি সুগার ব্যবহার হয়ে যাবে ও আপনার শরীর ঝরঝরে অনুভব হবে। তারমানে এই নয় যে, জিমে গিয়ে আপনার ঘাম ঝরাতে হবে। বরং মিষ্টি খাওয়ার পর ২০/৩০ মিনিট হাঁটা বা সিঁড়ি ভাঙা কাজে আসবে বেশি।
আপনি জানেন কি, কোকেইনের মতোই চিনির উপরে তৈরি হতে পারে প্রবল আসক্তি। যে কারণে চিনি গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার জন্য, নিজের মাঝে যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি রাখতে হবে। নয়তোবা আপনার শরীরে বাসা বাধতে থাকবে নানা জটিল রোগ।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
