অনেক চেষ্টা করেও কি ওজন বা ভুঁড়ি কমাতে পারছেন না?? প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে, বাড়িতে নিজে রান্না করে খান, আর ম্যাজিক দেখুন……

………………….

আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষই আছেন, যাদের পুরো দেহ তেমনভাবে মেদবহুল না হলেও, পেটের মাঝখানটা বেশ স্ফীত। কসরত করে শরীরের বাকি অংশের মেদ কমানো গেলেও ভুঁড়ি কমাতে বেশ বেগ পেতে হয়। হঠাৎ করেই ভুঁড়ি হওয়া বা পেটে মেদ জমা স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়। আবার চিকিৎসকরা মনে করেন, দেহে নানারকম জটিল রোগেরও লক্ষণ হতে পারে ভুঁড়ি।

আমরা সারাদিন যে খাবার খাই, তা থেকে আমাদের শরীরে কাজকর্ম করার শক্তি আসে। তবে ব্যস্ত জীবনে, প্রায়ই আমরা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত মানে প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে ফেলি। অথচ শারীরিক কসরত না করার ফলে সেই ক্যালোরি খরচ হয় না। এর ফলে সেই অতিরিক্ত খাবার, ফ্যাট বা গ্লুকোজ-এর আকারে শরীরে জমে যায়।
এছাড়াও অতিরিক্ত ফ্যাট খাবার খাওয়ার ফলে তা শরীর ঠিকমতো না পোড়াতে পারলে, সেই ফ্যাট দেহের অভ্যন্তরেই সঞ্চিত হতে থাকে। আর তখনই দেখা দেয় বিরাট ভুঁড়ি কিংবা স্থূলতা।
কিন্তু ভাল বা উপকারী ফ্যাট, কখনই শরীরের ক্ষতি করে না। আর আমরা ভুলটাই করি খাদ্য নির্বাচন করতে। ব্যস্ততায় অনেকেরই সময় থাকে না, যত্ন করে খাবার তৈরি করে পরিবেশন করার। আবার অনেকে রান্না করতে তেমন পছন্দ করেন না। এই সবের কথা মাথায় রেখে বাজারে এসেছে একাধিক প্যাকেট জাত দ্রব্য বা প্রসেসড ফুড। এই সকল প্যাকেট জাত খাবার বা প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর জেনেও আমরা তা প্রতি নিয়ত খেয়ে চলি।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বলতে বোঝায়, প্রাকৃতিক অবস্থা থেকে পরিবর্তিত কোনো খাবার, যেখানে খাদ্য উপাদান গুলোকে, একাধিক মেকানিকাল বা ক্যামিক্যাল প্রসেসিং করা হয়েছে, টেস্ট পরিবর্তন বা সংরক্ষণের জন্য। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে রেডি টু ইট ফুড, পাস্তুরিত, রান্না করা, হিমায়িত, শুকনো, ডিহাইড্রেটেড, টিন বা প্যাকেট জাত সকল খাবার। বর্তমানে প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সস, হটডগ, পিজ্জা, প্রসেসড মিট বা সসেজ, সফট ড্রিংকস, ইন্সট্যান্ট নুডলস ও প্যাকেটজাত স্যুপ প্রভৃতি বহুল জনপ্রিয়। এসব খাবারের মধ্যে টারট্রাজিন, কুইনোলিন, ইয়েলো, সানসেট ইয়েলো, কার্মিন, কার্বন ব্ল্যাক ইত্যাদি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চিপস, কুকিজ এবং ডুবো তেলে ভাজা সকল খাবার, সাধারণত হাইড্রোজেনেটেড তেলে তৈরি হয়। এই তেল শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা পরবর্তীতে পেটের রোগ, লিভার ও কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, ডায়েবেটিস, ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টি ও এমনকি মৃত্যু ঝুঁকির কারণে পরিণত হচ্ছে।

জেনে নিন প্রসেসড ফুড আরও যেসব ক্ষতি ডেকে আনতে পারে-

১। ওবেসিটি বা স্থুলতা বেড়ে যেতে পারেঃ
যেসব খাবারে অত্যধিক মাত্রায় চিনি থাকে, সেগুলো হতে পারে স্থুলতার কারণ। প্রসেসড ফুডে অ্যাডেড সুগার কিংবা হাই ফ্রুক্টোজ, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, ট্রান্স ফ্যাট, প্রসেসড ভেজিটেবল অয়েল থাকে, যা থেকে পরবর্তীকালে ওবেসিটি বা ওজন বেড়ে যেতে পারে খুব সহজেই।

২। দেহের বিপাক ক্রিয়ার বা মেটাবলিজমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন মেটাবলিক অসুখের।

৩। প্যাকেটজাত প্রতিটি খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিসারভেটিভ থাকায়, মারণরোগ ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে৷

৪। প্রসেসড ফুডে অত্যধিক পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড, প্রসেসড ভেজিটেবল অয়েল, বিভিন্ন ধরনের প্রিসারভেটিভও থাকে। সবমিলিয়ে পেটের সমস্যা দেখা দেয়।

৫। যারা বেশি বেশি প্রসেসড ফুড খান, তাদের ভেতরে অস্থিরতা বা অস্বস্তি বেশি দেখা যায়। নিয়মিত ক্ষতিকর প্রসেসড ফুডগুলো খেতে থাকলে তা অধিক উদ্বেগ ও অবসাদের কারণ হতে পারে।

এ সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় কি??

এ সমস্যা থেকে বাঁচার প্রধান ও একমাত্র উপায় হল, এসব প্রসেসড ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার কেনা বন্ধ করে দিয়ে, ঘরে খাবার রান্না করে খেতে হবে। যদিও ঘরের রান্না করা খাবার, প্যাকেট জাত খাবারের মতো সুস্বাদু হবে না, তবুও সেটা হবে স্বাস্থ্যকর, ক্যামিক্যাল ও প্রিসারভেটিভ মুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ, মাংসকে হাতে বা মেশিনে পিশে স্বাদ যুক্ত মসলা, লবন মিশিয়ে, কাবাব বানিয়ে, এয়ার ফ্রাইয়ারে ভেজে নিতে পারেন। এটি কয়েকদিন ফ্রিজিংও করতে পারেন, যা প্যাকেটজাত মাংস বা সসেজ থেকে বহুগুনে ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত।
বর্তমানে ইউ টিউবে, দোকানের প্রায় সব ধরনের খাবারের রেসিপি পাওয়া যায়। আপনি চাইলে ইউ টিউব দেখে, বাড়িতে সহজেই রান্না করে নিতে পারেন।
অধিক ওজনের সমস্যায় অনেকেই ভুগছি। স্হূলতা একাধিক রোগের কারণ হতে পারে। এই জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার সব সময় ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে, অনেকের মতে সঠিক ডায়েট করতে গেলে নিজের রান্না নিজে করাই ভালো। এতে বেশি ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না।

সমস্ত প্রসেসড ফুড ক্ষতিকারক নয়৷ যেমন দুধকে জীবাণু মুক্ত করতে পাস্ত্তরাইজিং করে প্যাকেটজাত করা হয়৷ তাই প্যাকেটজাত দুধ প্রসেসড হলেও তা ক্ষতিকারক নয়৷ এছাড়া প্যাকেটজাত দই, প্যাকেট জাত হোল গ্রেইন আদা-ময়দা এবং ওটস, হিমায়িত শাকসবজি, নারকেল ও অলিভ প্রভৃতির বীজ পিষে তেল বের করা তেল প্রসেসড হলেও ক্ষতিকারক নয়৷ তাই খাওয়ার আগে ভালমতো জেনে নিন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো কিছুটা কঠিন হতে পারে, যদি মানুষ এটিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাই কেনার সময়, সবাইকে পণ্যের লেবেলগুলো ভালো করে পড়ে নিতে হবে। নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে, প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাতে হবে এবং একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক রুটিন এবং স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment