…………………………….
মেটাবলিজম বা বিপাক হল, আপনার শরীরের শক্তি বা ক্যালোরি পোড়ানোর প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে খাবারের মধ্যে থাকা উপাদান শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আপনার মেটাবলিজম যত দ্রুত বা গতিশীল হবে, আপনার শরীর তত বেশি ক্যালরি খরচ বা বার্ন করে শক্তি অর্জন করার উপযোগি হবে।
কিছু মানুষ শুধু মাত্র পানি খেয়েও মোটা হন৷ আবার কারও প্রচুর তেল চর্বি খেয়েও ওজন বাড়ে না৷ শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়ার হার, কম হলেই এই তারতম্য ঘটে৷ সবার মেটাবলিজমের হার আবার এক নয়। তবে সুখের কথা, বিজ্ঞানীদের কাছে এমন কিছু অস্ত্র আছে, যার সাহায্যে তারা, ঝিম ধরা স্লো মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়াকে চাঙ্গা করে দিতে পারেন৷
এখানে মেটাবলিজমের হার দ্রুত করার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।
১। সারাদিন শরীরকে সক্রিয় রাখুনঃ
সকল প্রকার শরীরিক সক্রিয়তা ক্যালোরি দ্রুত পোড়ায়। আপনি যত বেশি সক্রিয় হবেন, ততই আপনার মেটাবলিক রেট বাড়বে। এমনকি নিয়মিত উঠে দাঁড়ানো, চারপাশে হাঁটাহাঁটি করা, উসখুস করা বা হাত-পা নড়াচড়া করা, আপনার পা গুলো সঞ্চালন করা কিংবা আঙ্গুল গুলোতে মৃদু আঘাত করা অথবা ঘরের যেকোনো কাজকর্ম করা মেটাবলিক রেটকে জোরদার করে।
আপনি যদি ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাহলে দাঁড়ানো ডেস্ক ব্যবহারে, আপনার ক্যালরি বার্ন ১৬% বৃদ্ধি পেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, একটি বিকেল দাঁড়িয়ে কাটালে, বসে থাকার তুলনায় অতিরিক্ত ১৭৫ ক্যালোরি বার্ন বেশি হয়। এমনকি টাইপিংয়ের মত অনুল্লেখযোগ্য কাজ করলেও, বসে বসে কিছু না করার তুলনায়, ৮% বেশি ক্যালরি বার্ন হয়। একইভাবে হাত-পা নাড়াচাড়া করার মধ্য দিয়েও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অস্থায়ীভাবে নিশ্চল ২০ মিনিট শুয়ে থাকার তুলনায়, চুপচাপ ২০ মিনিট বসে থাকলে ৪% ক্যালরি বেশি খরচ হয়। আবার বসে হাত-পা নড়াচড়া করলে সে তুলনায় আরো বেশি পরিমাণে (৫৪%) ক্যালরি বার্ন করা যায়।
আর যারা ভালোভাবে ওজন কমাতে বা স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চান, তাদের জন্য ব্যায়াম বা শরীরচর্চা একেবারে অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, ব্যায়াম হলো মেটাবলিজমের হার বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ উপায়। দৈনিক ৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম আপনার মেটাবলিজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে খুব সহজে। পর্যাপ্ত ব্যায়ামের পাশাপাশি, যারা দিনভর সচল থাকেন তাঁদের ৩০০/৪০০ ক্যালোরির মতো বেশি শক্তি খরচ হয়৷
ব্যায়াম করলে শরীর ঘামে এবং হ্দস্পদন বেড়ে যায়। এ দুটিই মেটাবলিজম সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ক্ষুধা লাগলে বুঝতে হবে মেটাবলিজম সক্রিয় হয়েছে।
২। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুনঃ
দিনে অন্তত ৩ লিটার পানি পান করুন। ঠান্ডা পানি পান করতে পারলে আরও ভালো। এর দুটি সুফল আছে। এক, পানি আপনার খিদে ভাব কমাবে এবং দুই, ঠান্ডা পানি পান করার পর শরীর তার টেম্পারেচার বাড়ানোর জন্যে, মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাড়তি ক্যালরি কমাতেও সুবিধে হয়।
৩। খাবার খেয়ে মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দিনঃ
আমাদের অনেকেরই ধারনা যে, দু/এক বেলা খাবার খাওয়া বাদ দিলে, ওজন বোধহয় তাড়াতাড়ি কমবে। ধারণাটা পুরোপুরি ভুল।
আপনার শরীর যখন পর্যাপ্ত খাবার পায় না, তখন সে তার বিপাকীয় বা মেটাবলিক হার এবং ক্যালোরি বার্নের সংখ্যা হ্রাস করে, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।
মোটা মানুষের মধ্যে পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, অনাহারের ফলে ক্যালরি বার্ন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিমাত্রায় কম খাওয়া বা অনাহারে থাকলে, প্রতিদিন মেটাবলিক রেট ৫০৪ ক্যালরি পর্যন্ত কমে যায়।
তাই আরাই/তিন ঘণ্টা পরপর অল্প অল্প করে খাবার খান আর মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখুন।
৪। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বাড়িয়ে দিনঃ
সাধারণত, প্রোটিন জাতীয় খাবার হজম করতে সময় বেশি লাগে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, আপনার শরীরের মেটাবলিক রেট ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে, বাড়ান প্রোটিন গ্রহণ।
৫। রাতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুনঃ
রাতে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টার ঘুম একান্ত প্রয়োজনীয়। কেউ যদি নিয়মিত তার চেয়ে কম সময় ঘুমান, প্রভাব পড়বে মেটাবলিক রেটে। তখন মেটাবলিক রেট কমে গিয়ে, বেড়ে যাবে ওবিসিটির সম্ভাবনা। চেষ্টা করুন, ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘন্টা আগে ডিনার সেরে ফেলতে।
৬। কোন মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঃ
কারণ মানসিক চাপ বাড়লে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষ, বেড়ে যায় অনিয়ম, অনিদ্রা ও বেশি খাওয়া৷ সবে মিলে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়৷ আবার মানসিক চাপে কর্টিসোল নামক হরমোন বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়া ও পেটে বেশি চর্বি জমানোর জন্য দায়ী। তাই যেকোনো মানসিক সমস্যায় অবহেলা না করে, ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
