রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে কি খাবেন এবং কি করবেন ……..

……………

১। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে জোরে জোরে হাঁটুনঃ
প্রতিদিন চেষ্টা করুন ১ ঘণ্টা করে দ্রুত বা জোরে জোরে হাঁটার। কেননা খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর প্রথম ও প্রধান উপায়ই হল প্রতিদিন হাঁটা বা ব্যায়াম করা।

২। স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া কমিয়ে দিনঃ
সাধারণ তাপমাত্রায় যে সকল তেল জমাট বেঁধে থাকে, সেগুলোই হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আর এটি পাওয়া যায়, লাল মাংস এবং ফুল ক্রিম দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে। যেমন গরু/ খাশি/ ভেড়ার মাংস, মুরগির চামড়া, দুধের সর ইত্যাদি। তাই আপনার স্যাচুরেটেড ফ্যাটের ব্যবহার কমিয়ে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারেন।

৩। ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া বাদ দিনঃ
প্যাকেট / ক্যান/ টিন জাত সকল খাদ্য, হোটেল রেস্টুরেন্টের বা দোকানের তেলে ভাজা প্রায় সকল খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। আর এই ট্রান্স ফ্যাট হল আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল, যা সামগ্রিক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। বর্তমানে আমেরিকার Food and Drug Administration (FDA) এই হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই প্যাকেট জাত খাবার যদি কিনতেই হয়, তাহলে প্যাকেটের গায়ে ট্রান্স ফ্যাট লেখা আছে কিনা, তা দেখে কিনুন। আর চেষ্টা করুন, হোটেল, রেস্টুরেন্টের খাবার ঘরে নিজে বানিয়ে খেতে। আপনি চাইলে ইউ টিউবে বিভিন্ন রকমের খাবারের ভিডিও দেখে নিতে পারেন।

৩। খাদ্যতালিকায় খাদ্য আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিনঃ
খাদ্য আঁশ বা ফাইবার আপনার রক্তের খারাপ ​​​​কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সক্ষম। সব ধরনের সবুজ পাতা ও ডাঁটাসুদ্ধ সবজি, যেমন বিভিন্ন ধরনের শাক এবং খোসাসহ ফলমূলে সবজি ও ফলে রয়েছে এই খাদ্য আঁশ বা ফাইবার। রুটি বা ভাতের সঙ্গে এক বাটি সবজির তরকারি এবং সালাদ রাখলে আপনাকে স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না।

৪। খাদ্যতালিকায়, অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবার যুক্ত করুন।
সব ধরনের অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবারে, প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন বি ও মিনারেলস রয়েছে। এগুলো চর্বি ও কোলেস্টেরল কমায়। এ ধরনের খাদ্য যেমন, লাল আটার রুটি, গম, ভুট্টা, ওটমিলস, লাল ঢেঁকি ছাঁটা চাল ইত্যাদি। এদের মধ্যে রয়েছে হাই সলিউবল ফাইবার যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর।

৫। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খানঃ
মাছের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড কিন্তু রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই রোজের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতে পারেন।

৬। খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিনঃ
লো ফ্যাট দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিম, বিভিন্ন রকমের ডাল, বিভিন ধরনের বিচি ও বীজ, সব ধরনের বাদাম ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই হাই প্রোটিন খারাপ কোলেস্টেরলের পাশাপাশি রক্তচাপও কমাতে সক্ষম।
. দৈনিক ৩০-৩৫ গ্রাম বাদাম (একমুঠো) গ্রহণ করা কোলেস্টেরলের মাত্রা গড়ে ৫% কমায়।
. শিমের বিচি, মটরশুটি, বিভিন্ন বীজ ও বিচি, বিভিন্ন রকমের ডাল খেতে পারেন। দুপুরে ভাতের সঙ্গে এক বাটি ডাল রাখলে অনেক উপকার পাবেন। ডাল মূলত প্রোটিনে সমৃদ্ধ উৎস। তাছাড়া, মটরশুটি, শিমের বিচি বা বিভিন্ন ধরনের বিচি ও বীজ এবং ডালের মধ্যে প্রচুর ফাইবার থাকে। সুতরাং, এগুলো খেলে রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় নেই। ফাইবার সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকবে না।

৭। ধুমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিন।

৮। রসুন ও পেঁয়াজ, এই দুই খাবারই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়ক। রসুনের মধ্যে অ্যালিসিন নামের যৌগ রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অন্যদিকে, পেঁয়াজের মধ্যে কোয়ারসেটিন রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি চাইলে রসুনের কোয়া গুলোকে অলিভ তেলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারেন, নরম হওয়া পর্যন্ত। পরবর্তীতে, সেই রসুন সালাদে বা রুটির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

৯। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় টক জাতীয় ফল রাখুন।
যেমন, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, মালটা, পেয়ারা, আপেল, সব ধরনের বেরি জাতীয় ফল, যেমন, ক্র্যানবেরি, স্ট্রবেরি, কালোজাম ইত্যাদি। এই ফলগুলিতে রয়েছে ভিটামিন সি, পেকটিন নামক উপাদান, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুনভাবে কাজে আসে।

১০। রোজ লো ফ্যাট ও চিনি ছাড়া, টক দই খেলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪% পর্যন্ত কমতে পারে। এছাড়া টক দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা হজমে সহায়তা করে এবং খাদ্যনালীর প্রদাহ কমায়।

১১। লেবু দিয়ে গ্রিন টি পান করতে পারেন। গ্রিন টিয়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে নানা উপায়ে উপকৃত করে, যার মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো রয়েছে। আর লেবুর রসে রয়েছে ফ্ল্যাভনয়েড যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। গ্রিন টিয়ের মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে।

১২। বর্তমানে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের উপর নানান গবেষণা করা হচ্ছে, যদিও ফলাফল এখনও নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এক গ্লাস পানি ও এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে, দিনে দুবার পান করলে হয়তোবা, অল্প সময়ের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করবে।

রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে অতিরিক্ত চর্বি, কার্বোহাইড্রেট, চিনি বাদ দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি রোজ শারীরচর্চা করা বাড়িয়ে দিন। বাড়িতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ়, যোগব্যায়াম, হাঁটা ইত্যাদি আপনার কোলেস্টেরল কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। একজন ব্যক্তির রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম কোলেস্টেরলের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমায়। তাছাড়া মানসিক দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেস থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেননা, যেকোনো মানসিক স্ট্রেসে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment