……………….
ছোট থেকেই বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও বইপুস্তকে জেনেছি, ক্যালশিয়ামের গুণেই মজবুত হয় দাঁত ও হাড়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ ঠিক মতো তৈরি না হলে, ক্যালশিয়াম কাজ করতে পারে না। ফলে, ছোটদের রিকেট থেকে শুরু করে বড়দের অস্টিয়োম্যালশিয়া, অস্টিয়োপোরেসিস প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন ডি এর একটি প্রাথমিক ভূমিকা হল, শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করা, যা শক্তিশালী হাড় গঠন এবং হাড়ের ক্ষয় থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
অন্য সব ভিটামিন, খাবারে নিয়মিত পাওয়া গেলেও, ভিটামিন ডি এর মূল উৎস সূর্যের আলো। বলা হয়, দেহের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে। এছাড়াও বেশ কিছু খাবারে ভিটামিন ডি-র উৎস্য রয়েছে, যেমন তেলযুক্ত মাছ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি। অনেকেই অতিরিক্ত ফ্যাট এড়ানোর জন্য, কুসুম ছাড়া ডিম খান। কিন্তু ডিমের কুসুমে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
মূলত আমাদের ত্বকের ভিতরে রয়েছে কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরলের উপর যখন সূর্যরশ্মি পরে, এরপর তৈরি হয় ভিটামিন ডি। আর এই ভিটামিন সরাসরি শরীর গ্রহণ করে। এতে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে, ক্যালশিয়াম হাড়ের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে হাড়ের ক্ষয় অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাই চেষ্টা করুন, যতই কষ্ট হোক না কেন, সূর্যের আলোয় এসে দাঁড়াতে।
তবে যারা, খুব ঠান্ডার জায়গায় থাকেন, যারা নিরামিষাশী বা যারা বয়স্ক, কিংবা যারা বিছানায় পরে আছেন, তাদেরই চিকিৎসকরা মূলত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত নয়।
চলুন কিভাবে, কখন, কতক্ষণ এই রোদে দাঁড়াতে হবে, জেনে নেইঃ
. সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো, যখন সূর্য আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে অবস্থান করে তখন। সাধারণত এই সময়টি ধরা হয়, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে।
. গ্রীষ্ম ছাড়া সারা বছর দুপুরে রোদে দাঁড়াতে পারেন। তবে গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে রোদে দাঁড়াতে যাবেন না। এতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন, গ্রীষ্মের সময়ে একটু সকাল-সকাল বা বিকেলের দিকে আলতো রোদে বের হওয়ার।
. দেহের যত বেশি অংশ, রোদে খোলা রাখা যাবে, তত বেশি ভিটামিন ডি মিলবে। তাই রোদে থাকার সময় হাত, বাহু, পা, মুখ, পিঠ, গলা ইত্যাদি অংশ খোলা রেখে, হালকা পোশাক পরিধান করা ভালো। যারা হিজাব বা পর্দা করেন, তারা চাইলে, ঘরের যে অংশে রোদ আসে, সেখানে বা ঘরের বারান্দায়, দুই হাত খোলা রেখে, রোদে দাঁড়াতে পারেন।
. ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকা উচিত, তবে কোনভাবেই ৩০ মিনিটের বেশি নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়ানোর কোনও প্রয়োজনই নেই। অল্প সময়েই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মিটে যাবে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষের গায়ের রং শ্যামবর্ণের হয়। এটি ভিটামিন ডি, শরীরে শোষণ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা। কারণ শ্যামবর্ণের ত্বকে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ বেশি থাকে৷ মেলানিন অতি বেগুনি রশ্মিকে বাধা দেয়। যাদের গায়ের রং উজ্জ্বল তাদের প্রতিদিন ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকলেই চলে।
. রোদ লাগানোর সময় কোনো ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন না। তবে মুখে সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন এবং চোখে সানগ্লাস ব্যাবহার করতে পারেন।
সাবধানতাঃ
সূর্যের আলোতে থাকে অতিবেগুনি রশ্মি। তাই বেশিক্ষণ রোদে থাকলে, এই রশ্মি, ত্বকের ক্ষতি করতে পারে বা ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
বয়স বাড়তে থাকলে, ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরির ক্ষমতা কমতে থাকে৷ ফলে বেশি বয়স হলে, হাড় ক্ষয়ের রোগও বাড়তে থাকে। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে, সারাক্ষণ বাড়িতে বসে না থেকে, নিয়মিত গায়ে রোদ লাগাতে হবে৷
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
