শূন্য = ধনাত্মক এক + ঋণাত্মক এক

শূন্য = ধনাত্মক এক + ঋণাত্মক এক

কোনদিন ভাবতেই পারি নি, শান্তিনগরের খন্দকার গলিতে মাত্র নয় হাজার টাকা ভাড়ায় বাসা পাওয়া যাবে। বাসাটা একটু ভেতরের দিকে, তারপরও আমি নিশ্চিত ছিলাম “ডাল মে কুছ কালা হ্যায়”। কিন্তু আপাতত আমার কিছুই করার ছিল না – মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা আনতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, একটা না একটা বাসা ভাড়া না নিলেই না। 

এটা ঠিক, বাসাটা পুরোনো – সম্ভবত সত্তরের দশকে তৈরী। ফ্লোর সাদা-কালো মোজাইকের, বাজারে তখনো টাইলস জিনিসটা আসে নি। দশ ইঞ্চি ইটের দেয়াল, তিনতলা বাড়ির বারান্দাগুলো বিশাল।

ভাড়া দেয়া হয়েছে একতলাটা, যেটা একটু অন্ধকার। বাড়িওয়ালা ষাটোর্ধ্ব আফসার মালেক একসময় হাইকোর্টে ওকালতি করতেন, এখন কিছু করেন না। বাড়ির পেছনের জায়গাটা জংলা, শীতকালে মশা হয় নিঃসন্দেহে। আমার বিশ্বাস, বর্ষায় সামনের গলিতে পানিও জমে। না হলে এরকম একটা এলাকায় বাড়িভাড়া নয় হাজার হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এই আমলে নিম্নবিত্তরাও দশ হাজার টাকার ওপর খরচ করে বাসা ভাড়ার জন্য, বিশেষ করে এই ঢাকা শহরে। তবে এ নিয়ে এখন আর ভেবে লাভ নেই, এডভান্স দেয়া হয়ে গেছে – অর্থাৎ ভাগ্যে যা লেখা আছে, তা হয়ে গেছে। নিয়তির কলমও উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এখন শুধু ঘটনা ঘটার অপেক্ষা।

অবশ্য আরেকটা কারণে বাড়ির ভাড়া কম হতে পারে। পূবদিকের ওই বন্ধ রুমটা। অদ্ভুত কালো দরজা দিয়ে আটকানো সেই রুমটা।

আফসার সাহেব বলেছেন, একতলার অংশ হলেও ওই রুমটা আমরা ব্যবহার করতে পারবে না – কোন ভাড়াটিয়াকেই ওটা কোনদিন ব্যবহার করতে দেয়া হয় নি। ওই রুমে নাকি কিছু পারিবারিক জিনিস স্টোর করা আছে, ওগুলো কিছুতেই সরানো যাবে না। রুমটার পুরোনো কাঠের দরজায় বড় একটা বেঢপ সাইজের তালাও ঝুলছে।  

তবে ফেব্রুয়ারির তিন তারিখে মাত্র এক ঠেলাগাড়ি জিনিস নিয়ে যখন বাসাটায় এসে উঠলাম, আমার সব আশংকা এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল। সেই দিনটা ছিল রোদ ঝলমলে, বাসার সামনের ছোট্ট উঠানটার সবুজ ঘাসগুলো চিকচিক করছিলো। সবগুলো জানলা খুলে দেয়ার সাথে সাথে ঘরের ভেতর আলোরা এসে লুটোপুটি করতে লাগলো।

ঘর ঢোকার ঘন্টা চারেক পরও আমি যখন বাক্স-পেটরা টানা-হ্যাচড়া নিয়ে ব্যস্ত, শেষ বিকেলের আলো গায়ে মেখে দেখা করতে এলো সে।

প্রায় শোনা যায় না এরকম মৃদু নক শুনে দরজা খুলতেই দেখি, মিষ্টি চেহারার ছোটোখাটো একটা মেয়ে একটা ফ্লাস্ক আর একটা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঠারো কি উনিশ হবে বয়স।

“আমার নাম সায়মা। এই বাড়ির ছোট মেয়ে আমি। বাবার শরীর প্রায়ই খারাপ থাকে, তাই সবকিছু আমাকেই দেখা-শুনা করতে হয়।”

আমি দরজা খুলে সরে দাঁড়ালাম। কিন্তু সে বললো, সে ভেতরে আসবে না।

“আপনার জন্য চা আর সিঙ্গারা আনিয়েছি। শুধু প্রথম দিন বলে।”

ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে আমি হেসে ফেললাম। সে চলে গেলো।

তবে দ্বিতীয় দিনেই সে আবার ঘরে এলো। চারপাশটা ঘুরে-ফিরে দেখে শেষে আমার বইয়ের লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো, তীক্ষ্ণ চোখে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো বাংলা-ইংরেজি বইগুলোর শিরোনাম।

“দেখতে এলাম, আপনি ঘর-বাড়ি ঠিকমতো রাখেন কিনা। আমাদের বাসায় নিয়ম কিন্তু খুব কড়া, বাসা নোংরা রাখা যাবে না।”

“আমি জানি, আপনার বাবা বলেছে।”

“আপনি কি স্কুল টিচার?”

“না। আমি ফিজিক্স পড়াই – জগন্নাথে।”

এইসব হাবি-জাবি কথা-বার্তা বললাম আমরা সেদিন।       

অল্প কয়দিনের মধ্যেই সায়মা তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলো। সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর সে আমার সাথে গল্প করা শুরু করলো। আমার জানা হয়ে গেলো – সে ভুত ভয় পায়, তার বিয়ের কথা-বার্তা হচ্ছে, ইত্যাদি।

“আচ্ছা, আপনাদের এই গোপন রুমের দরজাটা কালো কেন?” – এক বিকেলে জানতে চাইলাম।

“এই রুমে জীন আছে। আপনি বোধ হয় এখনো টের পান নি।” – সে বললো।

আমি হেসে ফেললাম তার ছেলেমানুষি কথা শুনে। কিন্তু উত্তরে সে হাসলো না।

ওর সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে বলেই কিনা কে জানে, সে রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতেই পাশের ওই বন্ধ ঘরের ভেতর মনে হলো খুট-খাট শব্দ শুনতে পেলাম। বাকি রাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবতে চেষ্টা করলাম, পুরোনো স্টোর রুমে ইঁদুরের আবাস হওয়া খুবই সম্ভব।

২ 

বারডেমে মায়ের এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে যেদিন ফিরছি, সেদিনই প্রথম দেখলাম ছেলেটাকে। গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই তিনতলার ছাদের এদিকের কার্নিশটা চোখে পড়ে। গাঢ় নীল শার্ট পরা ছেলেটা আমার দিকে পেছন ফিরে ছিল, আর ওর হাতে ছিল একটা গিটার। ওর বাজানোর সাথে সাথে একটা মেয়েকণ্ঠ গলা মেলাচ্ছিলো। আমি সাথে সাথে চিনতে পারলাম, ওটা সায়মারই কণ্ঠস্বর।

সম্ভবত এটাই সেই ছেলে, যার সাথে ওর বিয়ের কথা-বার্তা হচ্ছে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সংসারে অনেকগুলো ঝামেলা আমাকে মেটাতে হতো তখন – প্রেমের সময় তো নেইই, এমনকি বিরহেরও সময় ছিল না আমার।

পরদিন বিকেলে যখন সে ফ্লাস্ক হাতে আমার রুমে এলো – একসাথে চা খাবে বলে – তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম ছেলেটার কথা।

“না, অনিকের সাথে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে না। ও আমার স্কুল ফ্রেন্ড, ওর সাথে বাবা আমাকে কোনোদিনই বিয়ে দেবে না।”

কিছুক্ষন চুপ থেকে সে বললো – “জানেন, আমার বিয়ে করার একদম ইচ্ছা নেই। কিন্তু বাবার ধারণা, সে যে কোনদিন মারা যাবে। তাই জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আপনিই বলেন, এটা কি ঠিক?”

বিকেলের রোদ ওর নিষ্পাপ চোখদুটোর ওপর পড়ছিলো। আমার বুকের ভেতর নীল একটা ব্যথা অনুভব করলাম এক মুহূর্তের জন্য।

“সবকিছুই একসময় ঠিক হয়ে যায়।” – কেন কার উদ্দেশ্যে কথাটা বললাম, বুঝতে পারলাম না। কিন্তু আমার কথা শুনে তার ঠোঁটের কোণে যে মুচকি একটা হাসি উঁকি দিয়ে গেলো, সেটা আমার দৃষ্টি এড়ালো না।

আরেকদিন – সেদিন ছিল শনিবার, সাপ্তাহিক ছুটি – ভর দুপুরবেলা কালো কাজ করা পুরোপুরি কালো একটা জামদানি শাড়ি পরে সে ঘরে এলো। সেদিন একটা অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করলো সে আমাকে।

“এই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন পৃথিবী থাকা কি সম্ভব, মানে অন্য কোন ডাইমেনশনে?”

“অবশ্যই সম্ভব।” – আমি বললাম – “আজকাল তো থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্টরা বলছেন, আমাদের ইউনিভার্সের প্যারালাল আরো ইউনিভার্স আছে। তুমি কি ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির কথা শুনেছ? অঙ্ক করে বিজ্ঞানীরা বের করেছেন, আমাদের এই মহাবিশ্বের ছিয়ানব্বই শতাংশই এ দুটো জিনিস দিয়ে তৈরী। হতে পারে, এই দৃশ্যমান গ্যালাক্সিগুলোর সমান্তরাল অনেকগুলো অদৃশ্য গ্যালাক্সিও আছে যেগুলো এই ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরী।”     

“ভাইয়া, আমি বলছিলাম বেহেশত-দোজখের কথা। এগুলো কি সত্যি আছে – মানে বিজ্ঞানের দিক থেকে চিন্তা করলে?”

আমি কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, মনে হলো সে আসলেও জানতে চাচ্ছে। হয়তো জানতে চাচ্ছে, আমি কি ভাবি।

“আমি তো পদার্থবিদ্যা পড়াই। ধর্ম, বিশ্বাস, এগুলো আমার আয়ত্ত্বের বাইরে।” – এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললাম, কিন্তু মনে হলো সে আমার উত্তরটা শোনে নি, পাল্টা প্রশ্ন করলো – “আমি যদি খুব প্রিয় কিছু একটা পাবার জন্য জেনে-শুনে কারো খুব খারাপ কোন ক্ষতি করি, তাহলে কি আমি দোজখে যাবো?”

“বলতে পারবো না। তবে সেটা যে হবে চরম স্বার্থপরতা, এটা শিউর।”

সে রাতে আবার আওয়াজ শুনতে পেলাম পাশের ঘরে। এবার শব্দটা এত স্পষ্ট ছিল যে আমার ঘুম আসতে চাইছিলো না। রাত দুইটার দিকে আওয়াজ শুরু হলো, চারটা পর্যন্ত চললো টানা, তারপরও চলতে থাকলো থেমে থেমে। 

ভোর পাঁচটার দিকে শান্তিনগর মসজিদ থেকে যখন আজানের শব্দ ভেসে আসতে শুরু করলো, হঠাৎ করেই আমার ধৈর্যের সমস্ত বাঁধ ভেঙে গেলো। সেই মুহূর্তে আমার ভেতর একবিন্দু ভয় কাজ করছিল না, সারারাত ছটফট করতে করতে মাথার ভেতর মনে হয় কোথাও শর্ট সার্কিট হয়ে গিয়েছিলো। 

সেই শেষরাতে আমার মনে হচ্ছিলো, আমি একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছি, যেন আমাকে চালাচ্ছিল আমার শরীরের বাইরের অদৃশ্য কোন শক্তি। নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণই যেন ছিল না আমার। শুধু একটা জিনিসই আমার মাথায় ঘুরছিলো – তালা ভেঙে হলেও আমার দেখতে হবে, আসলে কি হচ্ছে দরজার ওপাশে।

আমি বিছানা থেকে নামলাম, হাত বাড়িয়ে ড্রয়ার থেকে চার ব্যাটারির টর্চটা বের করলাম। লাইটটা জ্বালিয়ে একটু খোঁজা-খুঁজি করে একটা পেরেক পেলাম খাটের নিচে, সেটাই প্রথমে চাবির জায়গায় ঢুকিয়ে তালাটা খোলার চেষ্টা করলাম। কোন কাজ হলো না, হওয়ার কথাও ছিল না।

এরপর আমি দেখলাম বাইরের দরজার চিপায় একটা ছোট রডের টুকরা দাঁড় করানো আছে। ওটা নিয়ে জোরে একবার চাপ দিলাম, আর এতেই কেমন করে যেন জংধরা তালাটা কট করে ভেঙে গেলো। আমি সম্মোহিতের মতো দুই পাল্লার দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।

জানালাহীন ছোট্ট একটা বদ্ধ ঘর, আমার বেডরুমের চারভাগের এক ভাগ হবে আয়তনে। এই রুমে কোন লাইট খুঁজে পেলাম না, টর্চটা জ্বালিয়ে চারিদিকে আলো ফেলে দেখলাম – এই ঘরে আমি ছাড়া অন্য কোন মানুষ নেই। ঘরে একটা মাত্র আসবাব, আর সেটা হলো দরজার সমান বিশাল এক আয়না। এ আয়নায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে আপাদমস্তক পুরো দেখা যাবে। নাটক-সিনেমার মেকাপ রুমে এইসব আয়না থাকে। আয়নাটা দেয়ালের গায়ে লাগিয়ে দাঁড় করানো আছে, সুতরাং এর পেছনে গিয়ে কারো লুকানোর কোন সুযোগ নেই।

যখন বুঝতে পারলাম – পুরোটাই আমার মনের ভুল ছিল – কালো দরজাটা লাগিয়ে দিলাম ঠিক আগের মতো করে, তারপর ভাঙা তালাটাই আবার ঝুলিয়ে দিলাম আংটার মধ্যে – কেন কে জানে।

সেরাতে আমি খেয়াল করি নি যে টর্চটা স্টোররুমের ভেতর ফেলে এসেছি। জানলে ওটা গিয়ে নিয়ে আসতাম অবশ্যই, কিন্তু আমি পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলাম চার ব্যাটারির ভারী সেই টর্চটার কথা। অবশ্য তখনো আমি জানতাম না, যা ঘটে তা ভালোর জন্যই ঘটে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে পড়লো, আজ বিকেলে ট্রেনের টিকেট কাটতে যেতে হবে স্টেশনে – নানা ধান্দায় ভুলে গেলাম গতরাতের ঘটনাটা।

দুপুরের দিকে সায়মা এলো হন্ত-দন্ত হয়ে। ওর চুল ছিল উসকো-খুসকো, চোখ দু’টো কড়া লাল।  

আমি জানতে চাইলাম, কি হয়েছে। সে বললো, পরে বলবে সব কথা, এখন আমি আমার কাছে তার একটা শপিং ব্যাগ রাখতে পারবো কিনা।

“অবশ্যই পারবো,” – আমি বললাম – “কি আছে ব্যাগে?”

“আমার একটা জামা, সন্ধ্যার সময় এসে নিয়ে যাবো। তখন খুলে বলবো সব কিছু।”

আমি তাকে ওটা রেখে যেতে বললাম। সে যেভাবে এসেছিলো, সেভাবেই ছুটে বেরিয়ে গেলো।

কিন্তু সেসময় ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারি নি যে, এই ব্যাগ ঘরে রাখাটা হতে পারে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কাজগুলোর একটা।      

সন্ধ্যায় গেট খুলে ভেতরে ঢুকে যা দেখলাম, তার জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। গেট খুললেই টানা বারান্দা পেরিয়ে আমার দরজাটা দেখা যায়। দেখলাম আমার দরজার সামনে ছোটোখাটো একটা ভিড়। আমার  আমার এক হাতে ছিল ব্যাগ, আরেক হাতে রুটির ঠোঙা – গোলমালের অভ্যাস পেয়ে নিজের অজান্তেই ও দুটা মাটিতে নামিয়ে রাখতে হলো আমাকে।

আমার দরজার সামনে ঠিক পাঁচজন মানুষ দাঁড়িয়ে – আফসার সাহেব, সায়মা, একজন পুলিশ, আর দুইজন কনস্টেবল।

“সায়মা, কি হয়েছে?” – আমি বলে উঠলাম বারান্দায় পা রাখতে রাখতে।

“এই লোকটা।” – বলে সায়মা কান্নায় ভেঙে পড়লো, আফসার সাহেব তাকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিচ্ছিলেন আর আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাচ্ছিলেন – এমনভাবে যেন এই পুলিশগুলি সামনে না থাকলে তিনি আমাকে আস্ত গিলে ফেলতেন।

“এই যে ভদ্রলোক, এদিকে আসেন।” – পুলিশের পোশাক পরা লোকটা নির্দেশ দিলো। “ভালোয় ভালোয় দরজাটা খুলে দেন।”

আমি বাধ্য ছেলের মতো তালা খোলার সময় দেখলাম তার নেমপ্লেটে লেখা ‘ওসি ফারুক’।  ফারুক সাহেব আমাকে দাঁড়াতে ইঙ্গিত করে বললেন – “ভুলেও পালানোর চিন্তা করবেন না, বাইরে বাড়ি ঘেরাও করা আছে।” 

“আলামত কি ঘরের ভেতর?” – ওসি ফারুকের শেষ প্রশ্নটা সায়মার দিকে। মেয়েটা তখন কাঁদছিলো আর হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ছিলো।

দরজা খোলার সাথে সাথে কনস্টেবল দুজন ঘরে ঢুকে গেলো। ওসি লোকটা আফসার সাহেবের কাঁধে হাত রেখে কি যেন কথা বলছিলো। আমি তখন চূড়ান্ত অবিশ্বাস নিয়ে সায়মার দিকে তাকিয়ে আছি।

সেও আমার চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিল, সে চোখে আমি কোন লজ্জা বা আক্ষেপের ছায়ামাত্র দেখতে পেলাম না। শুধু একবার – যখন ওসি তার বাবার কানের কাছে মুখ নিয়ে কি যেন বলছিলো – সায়মা দেখলো কেউ তাকে লক্ষ্য করছে না, সে আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এসে প্রায় শোনা যায় না এমন করে বললো – “সরি ভাইয়া, বিয়েটা ভাঙার জন্য আমার  কাছে আর কোন বুদ্ধি ছিল না।”

ততক্ষনে কনস্টেবল দুইজনের একজন সেই শপিং ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে এসেছে। সে যখন বলছিলো – “স্যার, এই যে আলামত”, তখন আমার মাথা ঘুরছিলো। মনে হচ্ছিলো, আমি ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়বো।

কিন্তু একই সময় আমার ভেতর কাজ করছিলো অন্য একটা স্বত্তা, যে আমাকে ফিস ফিস করে বলছিলো – “তোমাকে বাঁচতে হবে, মঈন। তোমাকে কোনভাবে বাঁচতে হবে।”

আমার তখন হঠাৎ কি মনে হলো কে জানে, আমি এক ছুটে আধা খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে গেলাম ঘরের ভেতরে। ওসি নিশ্চয়ই ভাবে নি আমি কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ ঘরে ঢোকার চেষ্টা করবো।

ভেতরে তখন অন্য কন্সটেবলটা খাটের নিচ থেকে বড়ো সুটকেসটা বের করার চেষ্টা করছিলো, সে কিছু বোঝার আগেই ওই গোপন স্টোর রুমের কালো দরজায় ঝুলে থাকা তালাটা ফেলে দিয়ে আমি এক টানে দরজা খুলে ফেললাম, তারপর ভেতরে ঢুকে ভেতর থেকে ছিটকিনিটা টেনে দিলাম। ততক্ষনে ওপাশ থেকে দরজা ধাক্কানো শুরু হয়ে গেছে, ওদের ভেতর কেউ একজন চিৎকার করে বলছে – “বান্দা, তোমার পালানোর কোন পথ নেই।” 

আমি তখন দরজার নিচের ছিটকিনিটাও লাগিয়ে দিলাম। এটা পুরোনো ভারী দরজা। এটা ভাঙতে গেলে তাদের লোক জোগাড় করতে হবে, তিন-চার ঘন্টা লেগে যাবে – আমিও একটু সময় পাবো – ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা-ভাবনা করার জন্য।

বাইরে হৈচৈয়ের বিপরীতে আমি দ্রুত চিন্তা করছিলাম, কি করা যায়। তখনি স্টোরের অন্য পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা আয়নাটা চোখে পড়লো। দরজার নিচ দিয়ে যতটুকু আলো আসছিলো, তাতে ঘরের ভেতরটা আবছাভাবে দেখা যাচ্ছিলো। হঠাৎ মনে হলো, আয়নাটা তো ভারী আছে, ওটা টেনেটুনে দরজার সামনে এনে আড়াআড়ি করে রেখে দিলে কেমন হয়।

হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলাম আয়নাটার দিকে, তখন আমার হাতে লাগলো ধাতব একটা কিছু। ওটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম, এটা সেই চার ব্যাটারির টর্চ যেটা সেই ভোররাতে এই ঘর ফেলে গিয়েছিলাম।

আয়নার কাছাকাছি পৌঁছাতেই অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো – মনে হলো, ঠান্ডা একটা বাতাস আসছে আয়নার ভেতর থেকে। আরেকটু কাছে যেতেই মনে হলো, আয়নাটা আসলে একটা খোলা দরজা।

আমি হাতড়ে বের করে টর্চটা জ্বালালাম, তারপর আয়নাটার সামনে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম, ওটার স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর টর্চের কড়া আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করলাম ওপাশে কি আছে। অবাক হলাম, যখন দেখলাম আয়নাতে এই ঘরের একটা প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আমার নিজের কোন প্রতিবিম্ব সেখানে নেই। আয়নাতে এই পুরো ঘরটা দেখা যাচ্ছে আধো-অন্ধকার, শুধু আমার শরীরের জায়গাটাই ফাঁকা।

আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষন। পেছনে দরজার ওপাশ থেকে ধাক্কা-ধাক্কির শব্দ আমার কানে পৌঁছাচ্ছিল না তখন।

সেই সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে একসময় আমার মনে হতে শুরু করলো, একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে টানছে আয়নাটার কাঁচের দিকে। কিছুতেই আমি সেই শক্তির সাথে পেরে উঠছি না, যেন একটা বিশাল একটা চুম্বক টানছে কাছাকাছি থাকা ছোট একটা লোহার খন্ডকে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না, তারপর হঠাৎই হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম সামনের দিকে।

যখন মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম, দেখলাম – কেমন করে যেন – আমি আয়নাটার দিকে পেছেন ফিরে আছি। আর কালো দরজাটা আমার সামনে।

কিন্তু আমার বুঝতে দেরি হলো না, এই দরজা সেই দরজা না, যার ওপর আর নিচে আমি এইমাত্র ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে এসেছি – পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য। এই দরজা একই রকম দেখতে হলেও এটা আসলে অন্য একটা দরজা। আমার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না, কারণ এই দরজাটা স্টোর রুমের ভেতর দিক থেকে বন্ধ না, বরং এটা পাশের রুমের দিক থেকে বন্ধ।

“কে? কে ভেতরে?”

ঐপাশ থেকে এক যুবকের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। কণ্ঠটা খুব পরিচিত লাগছে, কারণ কণ্ঠটা আর কারো না – আমার নিজের।

আমি সাবধান হয়ে গেলাম। চেষ্টা করলাম আর কোন শব্দ না করতে। 

আমি তখন বুঝতে চেষ্টা করছি, আমি নিজেই কিভাবে নিজের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি। একটা ব্যাখ্যা আমার মাথায় এলো, কিন্তু সেটা আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আর কিভাবেই বা আমি বিশ্বাস করব যে আয়নাটার দুইপাশে আসলে দুইটা পৃথিবী – এই অন্য পৃথিবীটা আমাদের পৃথিবীরই প্রতিবিম্ব, কিন্তু সেই প্রতিবিম্ব আবার বাস্তব – আর আমি কোনোভাবে আয়না ভেদ করে চলে এসেছি এই প্রতি-পৃথিবীতে।

এখন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি কেন আফসার সাহেব ওই স্টোর রুমটা তালাবন্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি হয়তো জানতেন, ওই রুমে কোন সমস্যা আছে, যদিও তিনি হয়তো জানতেন না যে আয়নাটা ঘিরেই যত সমস্যা – অথবা সেটাও তিনি হয়তো জেনে থাকতে পারেন, কি আসে যায় এখন আর তাতে! 

এসব যখন ভাবছি, তখন ওই পাশ থেকে গোঙানির একটা শব্দ ভেসে আসতে শুরু করলো। আমি কান পেতে শুনলাম – ওটা একটা মেয়ের  গোঙানি, কোন কিছু দিয়ে মুখ চেপে ধরে রাখলে কিংবা কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে দিলে যেরকম একটা চাপা শব্দ বের হয় আহত কণ্ঠ থেকে, অনেকটা সেরকম একটা শব্দ।

আমি আঁতকে উঠলাম, এটা সায়মা না তো! আমি, মানে আমার প্রতিরূপ সায়মার সাথে কি করছে? আমার হৃৎপিণ্ড আমার গলার কাছে উঠে আসতে চাইলো। আর ঠিক সেসময় মনে হলো কেউ তালাটা ভাঙার চেষ্টা করছে। আমি সতর্ক হয়ে গেলাম, চেষ্টা করলাম ঘরের এপাশের কোনায় গিয়ে অন্ধকারের সাথে মিশে যেতে – টর্চলাইটটা নিভিয়ে দিয়ে বুকের কাছে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম চুপচাপ।

“তোকে আজকে জীনের ঘরে নিয়ে যাবো। আমি তোকে কিছু করবো না। যা করার করবে আমার ঘাড়ের জীন। হা হা হা হা।” – আমার কণ্ঠ। অবিশ্বাস্য, এরকম পিশাচ হতে পারে মানুষ!

ঘ্যাট করে দরজা খুলে গেল। মেয়েটাকে টেনে-হিচড়ে যে পিশাচটা স্টোরের ভেতর নিয়ে এলো, সে আর কেউ না – আমি নিজে, কিংবা আমার দ্বিতীয় স্বত্তা, বা আমার সমান্তরাল পৃথিবীতে আমারই এক কপি, বা এরকম কিছু একটা।

আধো আলোতেও আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, এটা সায়মা আর ওর মুখ একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। বুঝতে পারলাম – যা ঘটে নি কিন্তু ঘটতে পারতো তাও আসলে সত্য, এই পৃথিবীতে সম্ভব না হলেও অন্য কোন পৃথিবীতে সেটা অবশ্যই ঘটে গেছে। 

সেই প্রতি-আমি অবশ্য আমাকে দেখতে পেলো না, এতটাই মত্ত ছিল সে। সায়মাকে মেঝেতে ফেলে সে তার ওপর শুয়ে তাকে জাপ্টে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো।

আমি ওর অন্যমনস্কতার এই সুযোগটা নিলাম। হাতের টর্চটা দিয়ে ওর মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। সে সাথে সাথে জ্ঞান হারালো।

ওই মুহূর্তে সায়মার চোখে আমার চোখ পড়লো। মেয়েটার চোখে আতঙ্কের চেয়ে বড় হয়ে ফুটে ছিল বিস্ময় – সে একবার আমার দিকে, আরেকবার আমার প্রতিরূপের নিস্পন্দ শরীরটার দিকে তাকাচ্ছিলো।

কিন্তু আমি সময় নষ্ট করতে চাইলাম না। আমি ততক্ষনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি কি করতে হবে। ফলে অল্প সময়ের ভেতর নিস্পন্দ ওই দেহটাকে আয়না পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলাম আমি, তারপর ওকে আয়নার কাঁচ বরাবর ঠেলতে শুরু করলাম। আমার ভেতর তখন মনে হয় কোন অসুর ভর করেছিল, লাথি দিয়ে ঠেলে-ঠুলে কোনোমতে তাকে ঢুকিয়ে দিলাম আয়নার ওপাশে – যে পাশ থেকে আমি এদিকে এসে পড়েছি, দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে। 

ওর শরীরটা ওপাশে উধাও হতেই আয়নাটা টেনে সরিয়ে আনলাম ওই দেয়াল থেকে, তারপর শুইয়ে দিলাম ওটাকে ফ্লোরে। সায়মার মুখ আর হাতের বাঁধন খুলে দিতেই সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – “আপনি কে?”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম – “আমি কেউ না।”  

হাত ধরে ওকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলাম। বাইরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। আমার প্রতিরূপ তালাটা ভেঙে ফেলেছিলো, তাই আমি বিছানার নিচে থেকে ট্রাঙ্কের মাঝারি তালাটা খুলে ওটা দরজায় লাগিয়ে দিলাম – আমি কোন সুযোগ নিতে চাচ্ছিলাম না। 

এই অন্য সায়মা যখন নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বার বার পেছন ফিরে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে, তখন আমার চোখ আটকে গেলো ওর পরনের সবুজ জামাটার ওপর – এটা হুবহু সেই জামা, যেটা আমার আগের পৃথিবীতে মিথ্যা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল আমারই বিরুদ্ধে।   

আমার ভয় ছিল, এই দ্বিতীয় সায়মা আমার নামে অভিযোগ করে দেবে, থানা-পুলিশ হবে – কিন্তু কেন যেন আমি সেই সুযোগ নিতে চাইছিলাম, আমার মন বলছিলো ওই পৃথিবীর চেয়ে এই পৃথিবীতে আর কিই বা খারাপ হতে পারে – ওখানে তো পুরো পুলিশ বাহিনী অপেক্ষা করে আছে আমাকে ধরবে বলে।

এই সায়মা অবশ্য সেরকম কিছুই করলো না। সে আগের মতোই আমার ঘরে আসতো প্রায় প্রতিদিন, আর এমনভাবে গল্প করতো যেন সে রাতে কোথাও কিছুই হয় নি।

শুধু একদিন সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল – “আপনার কি কোন যমজ ভাই আছে? নাকি আমি সে রাতে ভুল কিছু দেখেছি। ওই অন্য লোকটা কি আসলে জীন ছিল? আমাকে প্লিজ বলেন, এর কি ব্যাখ্যা।”

“এর ব্যাখ্যা খুবই সহজ।” – আমি ওকে আশ্বস্ত করে বললাম – “আপনি তো জানেন, এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকে। শূন্যকে দুইভাগে ভাগ করলে কি হয়, জানেন তো?”

“জানবোনা কেন? শূন্যকে দুই ভাগ করলে দুইটা শূন্য হয়, আর এজন্যই শূন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে না?”

“ভুল বলেছেন। শূন্যকে দুই ভাগ করলে হয় একটা প্লাস ওয়ান আরেকটা মাইনাস ওয়ান। এই যে প্লাস ওয়ান আর মাইনাস ওয়ান মিলে যে ইমব্যালেন্স, যে ভারসাম্যহীনতা – এটাই আপনার আমার জীবন, এটাই শূন্য থেকে বিশ্বসৃষ্টির রহস্য। বোঝাতে পারলাম?”

সে হাসলো। শিশুর মতো নিষ্পাপ সে হাসি, যার অর্থ আমার মনে হলো এরকম – “আমি এসবের কিছুই বুঝতে চাই না, আমি শুধু চাই আমার ক্ষণকালীন এই অস্তিত্বটাকে অনুভব করতে।”

আরেকদিন শেষ বিকেলে সে জিজ্ঞেস করলো – “ভাইয়া, বেহেশত-দোজখ বলে কি সত্যি কিছু আছে?”

আমি কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, তারপর হেসে বললাম – “আমি তো পদার্থবিদ্যা পড়াই। ধর্ম, বিশ্বাস, এগুলো আমার আয়ত্ত্বের বাইরে। তবে আমার মনে হয়, প্রতিটা মানুষের একটা করে কপি আছে – সে যদি বেহেশতে যায় তাহলে তার কপি যাবে দোজখে, সে যদি দোজখে যায় তাহলে তার কপি যাবে বেহেশতে।”

কিন্তু মনে হলো সে আমার উত্তরটা শোনে নি, পাল্টা প্রশ্ন করলো – “আমি যদি আমার বাবাকে খুশি করার জন্য নিজের ভালোবাসাকে স্যাক্রিফাইস করি, তাহলে কি আমি বেহেশতে যেতে পারবো?”

ওর প্রশ্ন শুনে আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এলো। বললাম – “তুমিই বেছে নিতে পারো, তুমি কি স্বর্গের রাজপথ বেছে নেবে, নাকি তোমার বিপরীত ছবি হয়ে নরকের পথ ধরবে।”

আমি ওর নাম দিয়েছিলাম ‘প্রতি-সায়মা’ – এটা যদি আমাদের আসল পৃথিবীর সমান্তরাল ডার্ক একটা ইউনিভার্স হয়ে থাকে, তাহলে এই নামটা তাকে ভালোই মানাবে।

এর পর থেকেই আমি এই ডাইরিটা লিখছি – ভুলে যাবার আগেই লিখে ফেলতে চাচ্ছিলাম বিশ্বসৃষ্টি আর ভারসাম্যের এই আদিম তত্ত্ব।

এরকমই এক দুপুরে আমি লিখছিলাম আমার এই উদ্ভট কাহিনী, এদিকে প্রতি-সায়মা কখন যে আমার টেবিলের পাশে এসে বসেছে, আমি জানিও না। সে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো – “আপনি আবার কবে থেকে ডান হাতে লিখতে শুরু করলেন?”

বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, এই প্রতি-পৃথিবীর বেশির ভাগ লোকই কিন্তু বাঁ-হাতী।

প্রতি-সায়মার কথা শুনে আমি হাসলাম, কিছুই বললাম না। এই দুই পৃথিবী মিলিয়ে ওই মুহূর্তে আমার চেয়ে সুখী মানুষ যে কেউ নেই, সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহই ছিল না। 

Leave a comment