……………
হাই ব্লাড প্রেশার এবং হৃদরোগীরা রোযা রাখতে পারবেন কি না, এ নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে রোজা নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত হাই ব্লাড প্রেশার কিংবা জটিল হার্টের সমস্যা থাকলে কিংবা একেবারে খারাপ রোগী ছাড়া, অন্য হৃদরোগীদের জন্য রোযা বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে তাদের উচিত হবে, রোযার দেড় / দুই মাস আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা।
আর, হার্টের রোগীরা যদি রোযা রাখতে চান, তাদের জন্য ভালো হচ্ছে, তারা রমজানের আগেই, শাবান মাসে কিছু নফল রোযা রেখে ট্রায়াল দিয়ে নিবেন। এতে করে আপনি আপনার শারীরিক অবস্থা, অনেকটা অনুমান করতে পারবেন। এবং যেটা হাদীসেও বলা হয়েছে, শাবান থেকে রমজানের প্রস্তুতি নিতে।
কোন কোন রোগী রোযা না রাখলে ভালোঃ
. সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে এমন রোগী ।
. যেসব হার্টের রোগী, সঠিক জীবনযাত্রা ও ঔষধ সেবনের পরও, বিশ্রামে থাকা অবস্থায় বা অল্প পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন, তারা।
. অনিয়ন্ত্রিত হাইপ্রেসারের কারণে বুকে ব্যথা/ কিডনী/ ব্রেন বা চোখে সমস্যা হচ্ছে এমন রোগী।
. সম্প্রতি কিংবা ৩ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে হার্টে রিং বা বাইপাস সার্জারী হয়েছে, এমন রোগী। তবে রিং বা বাইপাসের ১ বছর পর যদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে রোযা রাখা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
. যদি কারো হার্টের জটিল কোন সমস্যা বা জন্মগত হার্টের ত্রুটি থাকে, তাহলে।
রোযায় প্রেশার বা হার্টের ওষুধ গুলো খাওয়ার নিয়মঃ
. উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অন্যান্য রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, দুবেলা ওষুধ খেতে হয়। সে ক্ষেত্রে রমজানে সাহরি ও ইফতারিতে মিলিয়ে ওষুধ খেতে পারেন সহজেই। এক্ষেত্রে সকালের ঔষধগুলো ইফতারে, রাতের ঔষধগুলো সেহরীতে নেয়া যায়।
তবে ডাই ইউরেটিক ( Lasix, Fusid etc) জাতীয় ঔষধগুলো, সন্ধ্যায় খেতে হবে। এগুলো সেহরীতে খেলে, সারাদিন প্রসাবের সাথে শরীরের পানি সব বের হয়ে পানিস্বল্পতা এবং প্রেসার কমে যাওয়া সহ নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
. কেউ যদি শুধু একটা প্রেসারের ঔষধ খান, তাহলে সেটাও ইফতারের সময় খেলে ভালো।
. যাদের হার্টের অসুখের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগীদের মূল ওষুধটা কিন্তু ইফতারেই খেতে হবে। সাহরির সময় যদি ডায়াবেটিসের বেশির ভাগ ওষুধ খাওয়া হয়, তবে সারা দিন না খেয়ে থাকায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে বা হার্টের সমস্যা বাড়তে পারে। তাছাড়া সময়মতো ঘুম না ভেঙে গেলে, সাহরি মিস হতে পারে, কিন্তু ইফতারি মিস হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কাজেই সাহরির সময়কার ওষুধ মিস হতে পারে, কিন্তু ইফতারের সময়কার ওষুধ মিস হবে না।
এছাড়া হার্টের রোগীদের রোযা রাখা অবস্থায়, দিনের বেলা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া বাধ্যতামূলক। খেয়াল রাখতে হবে, যেন একটানা কাজে ব্যাস্ত থাকা না হয়।
কখন রোযা ভাঙ্গা যাবেঃ
অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রোযা ভাঙতে চান না। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোযা চালিয়ে নিতে চান। কিন্তু অসুস্থতার ক্ষেত্রে, ইসলামেই রোযার ভাঙ্গার বা না রাখার বিধান রেখেছে। হার্টের রোগীদের যদি প্রচন্ড বুক ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, অতিরিক্ত বুক ধড়ফড়, হার্ট বিটের প্রচন্ড ইরেগুলারিটি বা পরীক্ষা করে হার্ট এটাক পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম। আবার, যদি কারো হাই ব্লাড প্রেশার খুব বেশি থাকে বা হাই ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে থাকে না, এমন রোগীর ক্ষেত্রে হাই ব্লাড প্রেশার, কন্ট্রোলে না আসা পর্যন্ত, রোজা না রাখাই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধগুলো অ্যাডজাস্ট করে নিলে ভালো হয়।
খাবার দাবার নিয়ে কিছু কথাঃ
. যেহেতু সারাদিন না খেয়ে থাকা হয়,তাই ইফতারের হার্টের রোগীরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি জাতীয় খাবার বা শরবত খেলে, সেটা শরীরে ঝামেলা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত পানি বা শরবত না খাওয়াই ভালো।
আমরা যে খাবারগুলো ইফতারী তে খাই, তার সবই তেলে মচমচে ভাঁজা এবং দোকানের ডুবো তেলে ভাজা। এগুলো সব ট্রান্সফ্যাট বা খারাপ চর্বিতে ভর্তি থাকে। যেগুলো হার্টের রোগীদের জন্য খুবই বিপদজনক। তাই হার্টের এবং প্রেশারের রোগীরা ইফতারে এসব ভাজাপোড়া খাবেন না। আর খুব খেতে ইচ্ছা করলে, ঘরে এয়ার ফ্রাইয়ারে এই খাবারগুলো, নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন। এয়ার ফ্রাইয়ারে কোন বাড়তি তেল ব্যাবহৃত হয় না, যেটা পুরাটাই স্বাস্থ্যকর।
. একসাথে অতিরিক্ত না খেয়ে ইফতারে অল্প অল্প খাওয়াটা উত্তম।
অনেকেই জানতে চান, রোজা রাখার সময় হার্টের বা হাই প্রেশারের রোগী হাঁটাহাঁটি করতে পারবে কি না? তাঁদের ক্ষেত্রে বক্তব্য হলো, প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের সাথে, ২০ রাকাত তারাবির নামাজে কিন্তু যথেষ্ট ব্যায়াম হয়। তাই এ সময় হাঁটা অত বেশি জরুরি নয়। তারপরও ইফতারির দুই/আড়াই ঘণ্টা পর, ২০/২৫ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। সম্ভব হলে এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
