রোজা রাখা অবস্থায় কি হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যাবে? আর, রোজা রেখে, কখন ও কতক্ষন হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে হবে? এ বিষয়ে জেনে নিন…।।

…………….

রোজার সময় অনেকেই মনে করেন, রোজা রেখে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজা রেখে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে তা কোন সময়ে করা হচ্ছে এবং কতটা সময় ধরে করা হচ্ছে, তা বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

রোজা থাকা অবস্থায় ব্যায়াম করা যাবে কি যাবেনা, এটা অনেকটাই নির্ভর করে যিনি ব্যায়াম করবেন এবং রোজা রাখবেন তার শারিরীক সামর্থ্যের ওপর। অনেকেই আছেন রোজা রাখতেই খুব কাহিল হয়ে পড়েন এবং রোজা রেখে ব্যায়াম করাটা তাদের জন্যে বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে তারা ইফতারিরর অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে, ২০/৩০ মিনিট, হালকা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এতে আপনার ইফতার হজম সহজতর হবে, শরীর কর্মক্ষম থাকবে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

রোজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম তাতে বাধা নয় বরং সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

রোজায় কি ধরনের ব্যায়াম করবেন?

রোজার ব্যায়াম সাধারণত হালকা করাই ভালো। কারণ সারাদিন রোজা রেখে শরীর দুর্বল থাকে। দুর্বল শরীরে বেশি চাপ না দেয়াই ভালো। তাই রোজায় হালকা cardio করতে পারেন, যেমন, হাঁটা, ট্রেড মিলে হাঁটা, সাইক্লিং করা, সাতার কাটা ইত্যাদি। তবে আপনি খুব সহজেই হাঁটা দিয়ে আপনার ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। খুব জোরে জোরে না হেঁটে, স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন।

পেট যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন সবসময়। পেট এর ব্যায়াম করুন নিয়মিত।

বিভিন্ন ধরনের কঠিন বা ভারী ব্যায়াম, রোজায় আপাতত বাদ রাখতে পারেন। রোজা অবস্থায় খুব ভারী ব্যায়াম করলে, লো ব্লাড প্রেশার, মাথা ঘোরানোসহ নানান সমস্যার তৈরি করতে পারে।

রোজায় কোন সময়ে হাঁটবেন?

রোজা রেখে বিকেলের দিকে না হাঁটাই ভালো, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীরা বিকেলে হাঁটবেন না। কারণ, এ সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। রোজা রাখা অবস্থায়, দিনের বেলা ব্যায়াম না করাই ভালো।

তাই ইফতারের দেড়/দুই ঘন্টা পরে, হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করতে পারেন। তবে সময়সীমা কমিয়ে দেয়াই ভালো। ইফতার করেই সাথে সাথে হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করবেন না। ভরা পেটে কখনই হাঁটা বা ব্যায়াম করবেন না। আবার ইফতার করেই শুয়েও পড়বেন না। এতে হজমের সমস্যা সহ, পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইফতারের সাথে সাথে স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যস্ত থাকুন। এতে খাদ্যনালীর গতি চলমান থাকবে।

এছাড়া ও তারাবিহর নামাজ পড়তে যাবার আগে বা পরে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি, ২০ রাকাত তারাবির নামাজে, শরীরের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। নামাজের মাধ্যমে পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গের ব্যায়াম হয়।

কেউ চাইলে সেহরির আগেও, হালকা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করে নিতে পারেন।

রোজায় কতক্ষণ ব্যায়াম বা হাঁটবেন?

রোজায় ব্যায়ামের সময়সীমা কমিয়ে আনুন। তাই যারা আগে ৯০ মিনিটের ব্যায়াম করতেন, তারা কমিয়ে ৪০/৪৫ মিনিট করতে পারেন। যারা ৬০ মিনিট করতেন, তারা ৩০-৩৫ মিনিট করতে পারেন। যারা ৩০ মিনিট করেন তারা ১৫-২০ মিনিট করতে পারেন।

আর অতি সাধারণদের জন্য, ইফতারের দেড় / দুই ঘণ্টা পর, ২০/৩০ মিনিট হাঁটাই যথেষ্ট। তবে চেষ্টা করুন, প্রতিদিন ইফতারের পর, অল্প কিছু হাঁটাহাঁটি করার। এছাড়া সারাদিন শুয়ে, বসে না থেকে, চেষ্টা করুন কাজের মধ্যে নিয়োজিত থাকতে। যারা চাকরি করেন না, তারা সারাদিন ধরে, ঘরের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন। কেননা, রোজা রেখে, সারাদিন শুয়ে, বসে থাকলে, আপনার ওজন ও ভুঁড়ি বেড়ে যেতে পারে সহজেই।

রমজান মাসে ব্যায়াম বা হাঁটার ক্ষেত্রে সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। সারদিন না খেয়ে ব্যায়াম করলে শরীরে থাকা সঞ্চিত শর্করা দ্রুত শেষ হয়ে যায় ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই রোজায় হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম অবশ্যই করবেন, তবে জেনে এবং বুঝে।

ইফতার, রাতের খাবার এবং শেষরাতের খাবারে, শর্করাজাতীয় খাবার অবশ্যই রাখা উচিত।

রোজায় ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটিতে, শরীরে পানি ও লবনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে, পেশিতে টান ধরা বা ক্র্যাম্প হতে পারে। সে জন্য ইফতারের সময় বেশি করে পানি, ফল ও ফলের জুস ( ঘরে বানানো), ডাবের পানি বা খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি পান করুন।

আর রোজা রেখে, যদি অতিরিক্ত দুর্বল বা অসুস্থ বোধ করেন তাহলে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করবেন না। এমন কি হালকা ব্যায়াম থেকেও সেদিন অবসর নিন।

তাই শুরু করে দিন হাঁটাহাঁটি, হোক না সেটা রমজান মাস। নিয়মকানুন মেনে ঠিকভাবে হাঁটলে আপনি, এই রোজার মাসেও ফিট থাকতে পারবেন। সম্ভব হলে প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করেন। ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।।

…………………………… ( চলবে )

Leave a comment